রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে অস্থিরতা, বেকায়দায় চেয়ারম্যান

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে চলছে চরম অস্থিরতা। দীর্ঘদিন ধরেই বিরাজমান সঙ্কট না কাটায় শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রমে কোনো গতি আসছে না। এমনকি বোর্ডের বোর্ড সভাতেও সদস্যরা উপস্থিত হচ্ছেন না। ফলে সঙ্কট নিরসনে কোন কার্যকরী পদক্ষেপও নিতে পারছে না। শিক্ষা বোর্ডের ভিতরে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকেন্দ্রীক একটি এবং তাঁর বিরোধী আরেকটি গ্রুপ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত। আর বোর্ডের বাইরে রাজশাহী সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইএম খায়রুজ্জামা লিটনের সঙ্গেও রয়েছে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের দূরুত্ব। এসবের কারণে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ঘিরে একের পর এক সঙ্কট তৈরী হচ্ছে। নিয়ম অনিয়মের নানা ডালপালাও ছড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি নিজের কব্জায় রাখতে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান নিজ ক্ষমতাবলে এখন কলেজ পরিদর্শকের পদটিতেও দায়িত্ব পালন করছেন। যেটি নিয়ে চরম হাস্যকর পরিবেশ তৈরী হয়েছে। কালন শিক্ষা বোর্ডের এ পদটি চেয়ারম্যানের পরে আরও দুই ধাপ নিচে।

সূত্র মতে, সম্প্রতি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বাইরে পাচারের অভিযোগ তুলে তৎকালীন সচিব মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে কয়েকজন কর্মকর্তার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দায়েরকৃত মামলাটি এখনো চলমান। এরই মধ্যে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে দেয়া একটি ওদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য সংবলিত একটি চিঠি ভাইরাল হয়। যদিও ওই ধরনের চিঠি চেয়ারম্যান দেননি বলে অস্বীকার করেন।
এদিকে, শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের পদটি শূন্য হলে রাজশাহী মহিলা কলেজের শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে সে পদে পদায়ন করা হয়। কিন্তু কয়েকদিন পরে সেই চিঠিটি আবারও প্রত্যাহার করে নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দায়িত্ব পাওয়ার পরে শামসুজ্জোহা চেয়ারে বসতে গেলেও চেয়ারম্যানের বাধায় সেটি সম্ভব হয়নি। এর কয়েকদিন পরেই শামসুজ্জোহাকে সে পদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, শিক্ষা বোর্ডে বর্তমানে দুটি গ্রুপ বিরাজমান। বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে যোগদানের পর থেকেই তাকে একটি পক্ষ তেমনভাবে সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ উঠতে থাকে। কলেজ পরিদর্শক থাকাকালীন হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব বিরাজমান। সেটি আরও প্রকাশ্যে আসে গত বছরের ২৪ নভেম্বর হাবিবুর রহমান চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর। দায়িত্ব নেয়ার পর শুরুতেই তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।

সূত্র মতে, বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক পদটি শূন্য হলে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সচিব হুমায়ন কবিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সে পদে। এর পরে গত সেপ্টম্বর মাসে ওই পদে রাজশাহী মহিলা কলেজের শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু .হাবিবুর রহমান তাঁকে সেই পদে বসতে দেননি। এর কয়েকদিন পরেই শামসুজ্জোহাকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পর গত ১৩ অক্টোবর চেয়ারম্যান হাবিবুর নিজের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে নিজেই একটি চিঠি ইস্যু করে ওই পদটিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিব, এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পরেই কলেজ পরদির্শকের পদটি ধরা হয়। কিন্তু নিয়ম লঙ্ঘন করে চেয়ারম্যান দুই ধাপ নিচে নেমে গিয়ে কলেজ পরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন এখন।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র মতে, এরই মধ্যে গত ১০ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান শিক্ষা বোর্ডের বেশকিচু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পাশ করতে বোর্ড সভা ডাকেন। কিন্তু ১১ সদস্যের এ কমিটির মাত্র দুইজন সদস্য সেদিন স্বশরীরে বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন। আর চিঠিতে অনলাইনে বোর্ড সভায় উপস্থিত হওয়ার কোনো কথা না থাকলেও আরও দুজনকে অনলাইনে যুক্ত করে সভা করেন চেয়ারম্যান। তার পরেও ১১ সদস্যের মধ্যে চেয়ারম্যানকে দিয়ে দুজন অনলাইনে ধরে মাত্র ৫ জন উপস্থিত হন। এই সভাপটিও চেয়ারম্যান করতে পারেননি অভ্যান্তরিন কন্দ্বলের কারণে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীমহ সচিব হুমায়ন কবিরের সঙ্গেও চেয়ারম্যানের দূরুত্ব অনেক। যার ফলে শিক্ষা বোর্ডে এখন চরম অস্থিতরতা বিরাজ করছে। কোনো কাজই ঠিকমতো করতে পারছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।’

তবে বিষয়টি নিয়ে ফোন করা হলে সচিব হুমায়ন কবির এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শুরু থেকেই একটি পক্ষ আমাকে নানাভাবে অসহযোগিতা করে আসছে। সে কারণেই বোর্ডের কাজে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার।’
কলেজ পরিদর্শকের দায়িত্বগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কলেজ পরিদর্শকের পদে দায়িত্ব নেওয়া বোর্ডের প্রবিধান মতেই হয়েছে। কোনো নিয়মের ব্যতয় হয়নি