রাজশাহী রুটের বিমান চলাচল বন্ধের কারণ জানে না কর্তৃপক্ষ!

নিজস্ব প্রতিবেদক :
গেল মার্চ মাসের ৮ তারিখে দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর পর রোগটির সংক্রমণ রোধে জনস্বার্থে দেশের আভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটগুলো এক এক করে বন্ধ করে দেয়া হয়। দেশের মধ্যে ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। এরই ধারাবাহিকতায় মার্চ মাসের শেষ দিকে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে প্রতিদিন চলাচল করা ৪টি ফ্লাইটও বন্ধ হয়ে যায়।

তবে মে মাস থেকে দেশের ৭টি আভ্যন্তরীণ রুটের মধ্যে ৫টি রুটের ফ্লাইট চালু হলেও রাজশাহীসহ তিনটি রুটের ফ্লইট এখন পর্যন্ত চালু করা সম্ভভ হয়নি। রাজশাহী রুটে এপর্যন্ত অন্তত ৫ বার তারিখ দিলেও ফ্লাইট চালু করতে পারেনি শাহ মখদুম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

এমন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন, তেমনি বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফ্লাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ফ্লাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তারা সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট পরিচালানা জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এমনকি শাহ মখদুম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে তাদের বিমানবন্দওর প্রস্তুত আছে ফ্লইট ল্যান্ডিং বা টেকঅফের জন্য। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কারণে আটকে আছে বন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা।

মে মাস থেকে নৌ, সড়ক ও আকাশ পথে স্বল্পপরিসরে যানবাহান চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ মে রাজশাহী রুটের ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে তা সম্ভভ হয়নি। এর পর যথাক্রমে ৪ জুন, ১১ জুন, ২১ জনু ও ১ জুলাই ফ্লাইট চালু করার সিদ্ধান নেয়া হলেও, অজানা কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে শাহ মখদুম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীসহ বিমানবন্দরে আসা সকলের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে রাজশাহীর স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে অন্তত একজন চিকিৎসক চাইলেও এখন পর্যন্ত সেই জনবল সরবরাহ করা হয়নি।

শাহ মখদুম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, করোনা পরিস্থিতির আগে রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভো এয়ারের ফ্লাইট চলাচল করতো। পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে সপ্তহে প্রতিদিন ৩টি থেকে ৪টি করে ফ্লাইট এই রুটে যাতায়াত করছিলো।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স রাজশাহীর স্টেশন ইনচার্জ মোসাররফ হোসেন বলেন, প্রায় তিন মাস হতে চললো রাজশাহী রুটের ফ্লাইট বন্ধ আছে। অন্যান্য রুটে ফ্লাইট চালু হলেও এখন পর্যন্ত এই রুটে ফ্লাইট চালু করা সম্ভভ হয়নি। এতে করে আমরা বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছি। একই সাথে যাত্রীরাও আমাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এপর্যন্ত আমরা ফ্লাইট চালুর জন্য ৫বার তারিখ দিয়েও অজানা কারণে ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়া হয়নি। পূর্ব নির্ধারিত এই তারিখ অনুসারে যাত্রীদের কাছে টিকেট বিক্রি করেও ফ্লাইট চালু করতে পারা যায়নি। ফলে টিকেট ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুসারে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আমরা যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত আছি। নির্দেশনা মতো মোট যাত্রীদের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য ফ্লইটের সক্ষমতার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ সিটের বেশি টিকেট আমরা বিক্রি করবো না।

এদিকে শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ম্যানেজার সেতাফুর রহমান বলেন, মার্চের শেষের দিকে রাজশাহী রুটের সকল ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই আমরা আমাদের বিমানবন্দরকে ফ্লাইট টেকঅফ বা ল্যান্ডিয়ের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে রেখেছি। কর্তৃপক্ষ যেদিন বলবেন সেদিন থেকেই আমরা ফ্লাইট চালু করাতে পারবো। এখন এই বিমানবন্দরে ফ্লইট চালু করা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়।

শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ম্যানেজার আরো বলেন, বিমানবন্দরে আসা যাত্রীসহ সকলের নিরাপত্তার জন্য আমরা রাজশাহীর সিভিল সার্জন বরাবর একজন চিকিৎসক দিতে আবেদন করেছিলাম। এখন পর্যন্ত তিনি কোন উত্তর দেননি। অন্যান্য বিমানবন্দরে একজন করে চিকিৎসক রয়েছে যারা যাত্রীদের ক্রিনিং নিশ্চিত করছেন বা অসুস্থ কেউ থাকলে তাকে প্রাথমিক প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে সহযোগীতা করছেন।

স/রা