রাজশাহী পুঠিয়া পৌরসভার ঋণ প্রায় দেড় কোটি, ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

পুঠিয়া প্রতিনিধি:

প্রতিষ্ঠার ২২ বছরেও কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি রাজশাহীর পুঠিয়া পৌরসভা এলাকায়। কাউন্সিলরদের অভিযোগ, বছরে কোটি টাকার বেশী রাজস্ব আদায় হলেও ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে লুটপাটের কারণে উল্টো পৌরসভা এক কোটি ৩০ লাখ টাকা দেনার দায়ে ডুবছে। ব্যাপক দুর্নীতির কারণে এই ঝণের বোঝা। সেই সাথে পৌর ভবন নির্মাণের গচ্ছিত অর্ধকোটি টাকা ব্যাংক থেকে গায়েব করা হয়েছে। নাগরিকদের অভিযোগ, পৌরসভা ইচ্ছেমত কর আদায় করছেন। অথচ টাকা ছাড়া এখানে কোনো সেবাই মেলে না।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০১ সালে পুঠিয়া পৌরসভা গঠন করা হয়। এরপর সীমানা নির্ধারণ মামলার জটিলতার কারণে সেখানে প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৬ সালে প্রথম পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়বার নির্বাচন হয় ২০২০ সালে। আর প্রায় ৯৪ লাখ টাকা দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে আল মামুন খান মেয়রের দায়িত্ব নেন। এরপর গত প্রায় দুই বছরে সেই দেনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। অথচ এই দুই বছরে পৌরসভার রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। এদিকে অর্থ-সংকটের কারণে গত ৭ মাস থেকে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ও জনপ্রতিনিধিদের ভাতা বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে ২০০২ সালে পৌরসভা ভবন নির্মাণ কাজে ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে মন্ত্রণালয় থেকে। সেই ভবন নির্মাণ না করায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাদ্দকৃত সে অর্থ ফেরত চেয়ে একাধিকবার পত্র দিলেও এখনো পর্যন্ত তা ফেরত দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম রুহুল বলেন, পরপর দুটি নারী কেলেঙ্কারি ঘটনায় সদ্য বরখাস্তকৃত মেয়র আল মামুন ও সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম মিলে পৌরসভাকে লুটে নিয়েছে। তারা দু’জন মিলে ভুয়া বিল ভাউচার করে বিভিন্ন উন্নয়নমুলক প্রকল্পের প্রায় কোটি টাকা গায়েব করেছেন। আর তাদের এ সকল অনিয়মের বিষয়গুলো উল্লেখ করে গত বছর নভেম্বরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, দূর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

সোহেল রানা নামের একজন পৌরবাসী অভিযোগ তুলে বলেন, জন্ম, মৃত্যু ও নাগরিক সনদসহ যে কোনো কাগজপত্র তুলতে গেলে টাকা ছাড়া দেয় না। অথচ পৌরসভা গঠনের ২২ বছরে পৌরবাসীর অর্থ লুটপাট ছাড়া এলাকায় কোনো উন্নয়ন নেই। এখনো পর্যন্ত পৌরসভার নিজস্ব ভবন করতে পারেনি। যাযাবরের মত বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া ঘরে দপ্তারিক কাজ করছেন কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কাউন্সিলার বলেন, প্রতিবছর হাট বাজার ও বিভিন্ন কর-আদায়ের মাধ্যমে এই পৌরসভার কোটি টাকার উপরে রাজস্ব আদায় হয়। আর ব্যয় হয় তার প্রায় অর্ধেক। কিন্তু প্রতি বছর পৌরসভার ঋণ কেনো এতো বাড়ে তা রহস্যজনক। তারা জানান, প্রকৌশলী গত ২০ বছর থেকে একই স্থানে কর্মরত। মেয়র ও
তিনি মিলে নানা কৌশলে বিভিন্ন বিল ভাউচারে মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের অর্থ আত্মসাৎ করছেন। যেটুকু উন্নয়ন হচ্ছে তা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত অর্থে। আর রাজস্ব আয় থেকে এলাকার উন্নয়নে কোনো অর্থ খরচ করেন না বললেই চলে। সেই সাথে ব্যাংক একাউন্ট থেকে পৌর ভবন নির্মাণের বরাদ্দকৃত অর্থ প্রায় অর্ধ কোটি টাকা গায়েব করেছেন তারা। যা সঠিকভাবে তদন্ত করলে অর্থ গায়েবের মূল রহস্য বের হবে।

তবে এ সকল বিষয়ে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ও (ভারপ্রাপ্ত) সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সব মিথ্যা। পৌরসভার সকল অর্থ-ব্যয়ের কাগজপত্র রয়েছে। আর ব্যাংক একাউন্ট থেকে ভবন নির্মাণের অর্থ গায়েবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

আর সদ্য বরখাস্তকৃত মেয়র আল মামুন নারী কেলেঙ্কারি ঘটনায় কারাগারে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে পৌরসভার (ভারপ্রাপ্ত) মেয়র কামাল হোসেন বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার সময় প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দেনার বিষয়টি সচিব লিখিতভাবে আমাকে জানিয়েছেন। আর গত দুই বছরে পৌরসভার রাজস্ব আয়-ব্যায়ের বিষয়ে সাবেক মেয়র ও ইন্জিনিয়ার ভালো বলতে পারবেন।