শ্রমিক-কর্মচারীর ৫ মাসের বেতন বাকি, চাষিরা পাবেন দেড় কোটি টাকা

শাহিনুল আশিক:


টন-টন চিনি ও চিটাগুড় মজুদ রয়েছে। টাকার অভাবে বেতন পাচ্ছেন না রাজশাহী চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারীরা। ফলে করোনাকালীন জীবন-জীবিকা নিয়ে সংকটে রয়েছেন ৭২৮ জন শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমন অবস্থায় ইদের আগে বকেয়া পাঁচ মাসের বেতন পাওয়া নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

শুধু তাই নয়- কৃষকরা পাবেন আখের দাম বাবদ প্রায় দেড় কোটি টাকা। সেই টাকার জন্য ঘুরতে হচ্ছে চাষিদের। শ্রমিক-কর্মচারীরা বলছেন- দীর্ঘদিন ধরে ঠিকমতো বেতন পান-না তারা। প্রতিবছর ইদের আগে এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়। নিজেদের পাওনা বেতনের দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে চিনিকলের শ্রমিকরা। তারা বলছেন- আমরা নামেই চাকরি করে। ঠিকমতো বেতন-ভাতা পাই না। সংসারের টানাপোড়নে অন্যত্র শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- চিনিকলটিতে মজুদ রয়েছে ২ হাজার ৮৮২ টন চিনি। এছাড়া চিটা গুড় ৩ হাজার ১২৪ টন রয়েছে। এবছর ডিলার ছাড়া চিনি ও চিটাগুড় বিক্রি করছেন না কর্তৃপক্ষ। তার পরেও ডিলাররা ঠিকঠাক কিনছে। কয়কদিন পর পর ১০ থেকে ১৫ টন করে বিক্রি হচ্ছে চিনি ও চিটাগুড়। যদিও বিগত বছরগুলোতে চিনি ও চিটাগুড় ডিলার ছাড়াই বিক্রি করা হয়েছিল। কিন্তু এই বছর ডিলার ছাড়া বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শুধু রমজান মাসে চিনির বাজার ঠিক রাখার জন্য সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু চিনি বিক্রি করা হচ্ছে। তাও তুলনায় কম।

জানা গেছে- ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে চিনিকলের ৬২৮ জন শ্রমিক। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আরও ১০০ জনের বেতন বাকি পড়েছে। প্রতিমাসে সবমিলে বেতন বাবদ ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু পাঁচ মাসের বেতন বাবদ ছয় কোটি টাকার বেশি বকেয়া পড়েছে। আর দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন শ্রমিক কর্মচারীরা।
শুধু শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারাই নয়- চিনিকলে আখ বিক্রি করে বিপাকে পড়েছেন শত শত চাষী। যদিও চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হয়েছে। তারপরে চার মাসেও চাষিদের আখের দাম পরিশোধ করতে পরেনি চিনিকল কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থায় টাকার জন্য প্রতিদিনই ধন্না দিতে হচ্ছে চাষিদের।

বুধপাড়া এলাকার আখচাষী হিরা জানান, আখ বিক্রি করেছি চার মাস আগে। এরপরে কয়েক দফা টাকা পেয়েছি। তবে সব টাকা পাইনি। আমরা কৃষক, আমাদের হাতে তো বেশি টাকা থাকে না। যে শ্রমিক খাটাবো। শ্রমিক দিয়ে আখ কেটে গাড়ি ভাড়া করে চিনিকলে পাঠাই। শ্রমিক ও গাড়ির ভাড়া এখনও পরিশোধ করতে পারিনি। কয়েকজনকে ধান বিক্রি করে টাকা দিয়েছি, যাদের বাকি আছে প্রায় বাড়িতে আসছে টাকার জন্য।

চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মনতাজ আলী বলেন, ‘৬২৮ জন শ্রমিকের পাঁচ মাসের বেতন বাকি পড়েছে। এমন অবস্থায় বেকায়দায় রয়েছি আমরা। জানি না কবে বেতন পাবো। শ্রমিকরা অফিসে আসে, ফোন দিয়ে বলে বেতনের কথা জিজ্ঞাসা করে। তাদের কিছুই বলতে পারি না।’

আখচাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইয়াসিন আলী জানান, এবছর ৪৮ দিন চিনিকল চলেছে। এখনও ছয় দিনের চাষিদের পাওনা মিলে প্রায় দেড় কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। গত বছর (২০২০) চিনিকল বন্ধের এক সপ্তার মধ্যে চাষিদের পাওনা টাকা দেওয়া পেয়েছিল। ২০১৯ সালে চাষিদের টাকা পেতে দেরি হয়েছিল। এবছর চিনিকল বন্ধের চার মাসেও টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আমরা চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই, রমজান মাস ও সামনে ইদ বিবেচনায় রেখে অতিদ্রুত চাষিদের টাকা পরিশোধ করে দিন।

রাজশাহী চিনিকল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান কবির বলেন, চলতি মিলে পাঁচ মাসের বেতন বাকি রয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে পরিশোধের। এখন অল্প পরিসরে ডিলারের মাধ্যমে চিনি বিক্রি হচ্ছে। ডিলার ছাড়া বিক্রির সুযোগ থাকলে আরও বেশি চিনি বিক্রি করা সম্ভব হতো বলে এই কর্মকর্তা জানান।

স/আ