রাকাবের সেই ১০৯ কর্মকর্তা ছুটির দিনে ভাইভা দিয়ে পদোন্নতি পেলেন ৪৫


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) সেই ১০৯ কর্মকর্তার মধ্যে আবারো নিয়ম লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হলো ৪৫ জনকে। এটি করতে গিয়ে ছুটির দিনে
১০৯ কর্মকর্তার ভাইভা নেওয়া হয়েছে। এতে করে রাকাব কর্মকর্তাদের মাঝে চরম অসন্তোষ তৈরী হয়েছে। এই কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে আদালতে পৃথক ১৮টি
মামলা রয়েছে। ওই মামলা নিস্পত্তি হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে নতুন করে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পুনরায় পদোন্নতি দেওয়া হলো। আর এ নিয়েই চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে রাকাবে ২০১০ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ ৫৬ কর্মকর্তার মাঝে।

এনিয়ে গত ১৬ অক্টোবর ‘অভিযুক্তরাই পেলেন পদোন্নিতি, পাচ্ছেন আরো অনেকে’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ হয়। এর পর বন্ধ হয়ে যায় পদোন্নতি পক্রিয়া। কিন্তু গত ২৩ ডিসেম্বর ছুটির মধ্যে ভাইভা নিয়ে ওই ১০৯ জনের মধ্যে ৪৫ জনকে উর্ধতন মূখ্য কর্মকর্তা (এসপিও) থেকে সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। গত ২৬ ডিসেম্বর ওই পদোন্নতির আদেশে স্বাক্ষর করেন রাকাবের চলতি দায়িত্বে থাকা জিএম (প্রশাসন) সওকত শহিদুল হক। চলতি দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা পদোন্নতির মতো গুরুত্বপূর্ণ চিঠিতে স্বাক্ষর করতে পারেন না বলেও রাকাবের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী চলতি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা শুধুমাত্র রুটিন মাফিক কাজগুলো করবেন। কিন্তু সেই নিয়ম লঙ্ঘন করে রাকাবের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক
(ডিজিএম) পদের কর্মকর্তা চলতি দায়িত্বে জিএম পদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁর এক ধাপ নিচের এজিএম পদের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। এটি রাকাবের ইতিহাসে চরম অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বলেও দাবি করেছেন একাধিক কর্মকর্তা।

অভিযোগ রয়েছে, এই সওকত শহিদুল ইসলামের পদোন্নতিতেও ব্যাপক অনিয়ম করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য জিএম (চলতি দায়িত্বে) শওকত শহিদুল ইসলাম দাবি করেন, ‘এসব নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নাই। যা কিছু হয়েছে প্রশাসনিক নিয়ম
মতেই হয়েছে। আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটি পালন করছি।’

সূত্র মতে, রাকাবে ১৯৯৮ সালে জুনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ১০৯ কর্মকর্তার মধ্যে ১০৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য গত ২১ ডিসেম্বর চিঠি ইস্যু করেন জিএম (চলতি দায়িত্বে) শওকত শহিদুল ইসলাম। সে অনুযায়ী গত ২৩ ডিসেম্বরের শুক্রবার ছুটির দিনে তড়িঘড়ি করে ১০৪ জনের ভাইভা সম্পন্ন করা হয়। এর মাত্র দুদিনের ব্যবধানে গত ২৬ ডিসেম্বর ৪৫ জনকে পদোন্নতি দিয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়। সেটিও রাকাবের ইতিহাসে নজিরবিহীন অনিয়ম বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অফিস বন্ধের সময় মাত্র এক দিনে এতো বড় পদোন্নতি এর আগে কখনোই হয়নি বলেও দাবি করেন তাঁরা। তবে সরকারি শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায় এড়াতে কেউ নাম প্রকাশ করেননি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই পদোন্নতি ভাইভাটি গত ১৬ অক্টোবর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী খবর প্রকাশের পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
এর পর সরকারি অফিসে বন্ধের তড়িঘড়ি করে সেই ভাইভাটি সম্পন্ন করা হলো। ৫ সদস্যের এই ভাইভা বোর্ডে ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কামরুল হাসান
মারুফ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম মজিবর রহমান। অন্য তিনজন হলেন, রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল হক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও উপ-মহাব্যবস্থাপক শওকত শহিদুল ইসলাম।

এস বিষয়ে জানতে রাকাবের চেয়ারম্যান রইছ উল আলম মণ্ডলকে গতকাল বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি। তবে এর আগে তিনি বলেছিন, ‘জ্যেষ্ঠ
লঙ্ঘনের বিষয়টি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। আমি আসার আগে থেকেই হয়ে আসছে। এখন কিভাবে এটিকে স্বাভাবিক করা যায়, সেদিকটা দেখছি আমরা। অভিযোগ আছে অনেক। সেসব মাথায় নিয়ে পদোন্নতির বিষয়ে খেয়াল রাখা হবে।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘যারা রাকাকে যোগ্য ব্যক্তি, রাত-দিন পরিশ্রম করছেন, তাঁদের পদোন্নতি দিতে হবে। যারা কাজ করেন না। রাকাবের ক্ষতি করছেন, তাদের তো
পদোন্নতি হবে না।’

স/আর