রাজশাহী অঞ্চলে নতুন কৌশলে সংগঠিত হচ্ছে জামায়াত-শিবির


শফিকুল ইসলাম:

রাজশাহী অঞ্চলে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াত-শিবির। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলন সংগ্রাম এবং নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই বিভিন্ন এনজিও, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে নতুন নতুন কৌশল নিয়ে ভিতরে ভিতরে সুসংগঠিত করছে নিজেদের।

সূত্র মতে, এক সময়ের জামায়াত-শিবিরের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল এই রাজশাহী অঞ্চল। ৭৫ পরবর্তী রাজনৈতিক পট পরিবর্তণের পর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে দলটি তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি করে। স্বাধীনতা বিরোধী হয়েও তাদের বিচার না হওয়ায় তারা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। কিš‘ ওয়ান-ইলেভেন বা এক এগারোর রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির শেষে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসর পর স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করে।

দেশ স্বাধীনের দীর্ঘ ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের প্রথম সারির প্রভাবশালী নেতাদের বিচারের সম্মখিন হতে হয়। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতারা একের পর এক গ্রেফতার হতে থাকে। ২০১৪ সালের পর থেকে এ এই অঞ্চলে একেবারেই কোণঠাসা হয়েছে পড়ে দলটি। নাশকতায় জড়িতের অভিযোগে নেতাকর্মীদের নামে ডজন ডজন মামলা থাকায় প্রকাশ্যে থেকে আড়ালে চলে যায় নেতাকর্মীরা। বন্ধ হয়ে যায় প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ ও চলাফেরা। বিভিন্ন সময়ে নাশকতা অভিযোগে তারা গ্রেপ্তার হয়েছে অনেকেই। এর মাঝেই নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে রাজনীতির মাঠে তৎপর ছিল তারা। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীতে তারা আর সক্রিয় তা পারেনি।

একাধিক সূত্র মতে জানা যায়, প্রতিকূল এই পরিস্থিতির মাঝেই আইন শৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলন সংগ্রাম এবং নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই বিভিন্ন এনজিও, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে চতুর কৌশল নিয়ে ভিতরে ভিতরে সুসংগঠিত করছে নিজেদের। এরই ধারা বাহিকতায় রাজশাহীতে বহিরাগত ও নাশকতা মামলার আসামিদের নেতৃত্বে এনে আবারও সংগঠনকে শক্তিশালী ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি পুলিশের হাতে এরকম বেশ কিছু নেতা-কর্মী আটক হয়েছেন।তাদের অধিকাংশই বহিরাগত নেতা। তাঁরা নিজ এলাকাসহ রাজশাহীতেও একাধিক নাশকতা মামলার আসামি বলে নিশ্চিত করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী একটি সূত্র।

সূত্রে জানা যায়, দলকে শক্তিশালী করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা এক সময়ের ছাত্রশিবিরের চৌকস ও দূর্ধষ নেতা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ডা. জামিল আক্তার রতন হত্যা মামলার অন্যতম আসামী কেরামত আলীকে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির করা হয়েছে। তিনি পরিচয় গোপন করে এই মহানগরীতেই অবস্থান করে এখন জামায়াতকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুণ্ডু উপজেলার বাসিন্দা এমাজউদ্দিন মণ্ডল মহানগর জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি। তার নামে নিজ এলাকা হরিনাকুণ্ডু থানায় পাঁচটি নাশকতার মামলা আছে। গত ২২ এপ্রিল তিনি গোপন বৈঠক করার সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে জামিন বেরিয়ে এসে  প্রকাশ্যে রাজনীতি করছেন।

সম্প্রতি নাশকতার জন্য গোপন বৈঠক করার অভিযোগে ৬ সহযাগীসহ গ্রেপ্তার হওয়া মহানগর শিবিরের সেক্রেটারি উসামা রায়হান খুলনা নগরীর নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা। এবং চট্টগ্রামের এক সময়ের দূধর্ষ শিবির নেতা কক্সবাজারের ফরিদ উদ্দীন আক্তার বর্তমানে নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানা জামায়াতের আমির।এমন অনেক চৌকস ও দূধর্ষ বহিরাগত নেতা-কর্মীদের এনে এই অঞ্চলের জামায়াতকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের পর থেকে এ এই অঞ্চলে একেবারেই কোণঠাসা হয়েছে পড়া দলটি নেতা-কর্মীরা নতুন নতুন ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওর আড়ালে রাজশাহী অঞ্চলে জামায়াত-শিবির নানান কৌশলে নিজেদের সংগঠিত করছে। তারা নতুন কৌসলে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ও স্থানীয় পর্যায়ের কতিপয় নেতাদের অংশীদারিত্ব দিয়ে নিজেদের করেছে আরো শক্তিশালী।

রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কাস পাটির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রমানিক দেবু এই বিষয়ে বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে নতুন রূপে জামায়াত-শিবির যে সংগঠিত হচ্ছে তা আমাতের কাছে তথ্য আছে। এতে শুধু আমরা না এই অঞ্চলের মানুষ আতঙ্কিত। এই বিষয়ে আমরা রাজশাহী মেট্রেপলিটন পুলিশের কমিশনার মহাদয়কে বলেছি; নগর জুড়ে সিসি বসানো আছে, আপনাদের সাইবার ক্রাইম ইউনিট আছে। তাহলে কিভাবে জামায়াত- শিবিররা ঝটিকা মিছিল করছে? কেনইবা তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছেনা?

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের সরকার যখন ক্ষমতায় তখন জামায়াত-শিবির নতুন কৌসলে ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওর আড়ালে রাজশাহী অঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করে সুসংগঠিত হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের বলে দাবী করে যারা জামায়াত-শিবিরের সাথে কৌসলে জড়িত হয়ে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব নিয়ে এইসব স্বাধীনতা বিরোধীদের সহযোগীতা করছে তা ঠিক করছেনা। কারণ স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত কখনোই মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের হয়ে কাজ করবেনা। সুযোগ পেলেই তারা আঘাত করবে।

এই বিষয়ে জানতে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির কেরামত আলীকে কয়েক বার মোবাইল ফোন দিলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও বেশ কয়েক জন জামায়াত নেতাকে ফোন দিলেও তারা এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চাননি।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৫) এর অধিনায়ক লে: কর্ণেল রিয়াজ শাহরিয়ার (পিএসসি) বলেন, দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে এবং মৌলবাদী গোষ্ঠীর এই নতুন কৌসুল ভাঙতে এরই মধ্যে মাঠে সক্রিয় আছে র‌্যাব। আমাদের কাছে তথ্য আছে সব ইসলামী দলগুলো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে তারা তা পারছেনা।

রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, মৌলবাদী জামায়াত- শিবির গোষ্ঠীর এই নতুন পরিকল্পনা ভাঙতে এরই মধ্যে মাঠে সক্রিয় ভাবে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’সম্প্রতি সময়ে জামায়াত-শিবিরের কয়েকটি গোপন বৈঠকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদেরকে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর পরিকল্পনার বৈঠক থেকে আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও দেশি অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তারা আর আগের মতো নাশকতা ঘটাতে পারবে না। পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’

এস/আই