রাজশাহীসহ তিন চিনিকলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা

শাহিনুল আশিক:


আধুনিকায়ন হচ্ছে চিনিকল। রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা চিনিকলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। চিনিকলগুলোতে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে নতুন যন্ত্রপতি স্থাপন ছাড়াও চাষ করা হবে অধিক ফলনশীল জাতের আখ। একই সঙ্গে বাই প্রোক্টাডকের (পণ্য) কথাও ভাবা হচ্ছে। চিনিকলগুলো ঢেলে সাজাতে ও আখচাষ বাড়তে শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষীদের সঙ্গে কথা বলেছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের নেতৃবৃন্দ।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজশাহী চিনিকল পরিদর্শনে এসেছিলেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা। তিনি চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আখচাষিদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন- চিনকলগুলো আধুনিকায়ন হলে বাড়বে চিনির উৎপাদন। সেই সঙ্গে উন্নত জাতের আখ চাষের ব্যবস্থা হবে। ফলে আবারও কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেবে চিনকল ও আশেপাশের এলাকা। শুধু তাই নয়, অনেক মানুষের হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। একই সঙ্গে দূর হবে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন সমস্যা। চিনিকলকে আধুনিকায়ন করতে বিদেশি সহায়তা আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। চিনিকলগুলোতে বছরের পর বছর লোকসান হচ্ছে। লোকসান থেকে বের হতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলা জানা গেছে।

জানা গেছে, চিনিকলে লোকসান হওয়ায় গত বছর কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর (রংপুর), রংপুর ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ করা হয়। একই সঙ্গে গুঞ্জন উঠেছিল রাজশাহী চিনিকল বন্ধের। তাই ২০২০-২১ মৌসুমে কিছু বিলম্বে খুলেছিল চিনিকল। এর আগে রাজশাহী চিনিকলের কী পরিমাণের সম্পদ আছে তার একটি তালিকা যায় মন্ত্রণালয়ে। এতে অনেকেই নিশ্চিত হয় চিনিকলটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত হয়নি বন্ধ।

সম্প্রতি আশার আলো জাগিয়েছে আধুনিকায়নের খবরে। তাই আখ চাষ বাড়াতে জোর তৎপর হয়ে উঠেছে কর্তৃপক্ষ। একটি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর বন্ধ থাকার পরে আবারও চাষিদের মাঝে সার, বীজ ও কিটনাশক ঋণ দেওয়া হয়েছে। যাতে করে বাড়ানো যায় আখ চাষ। শুধু তাই নয়, চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখচাষীদের সাথে চালাচ্ছে বৈঠকও। আদান-প্রদান হচ্ছে আখ চাষ বাড়াতে পরামর্শ।

রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মজিবর রহমান জানান, ‘শুনেছি আধুনিকায়ন হবে চিনিকল। শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা রাজশাহী চিনিকল পরিদর্শনে বলেছেন- রাজশাহীতে ভালো কিছু হবে। তার দেওয়া আভাসে আমরা শ্রমিক-কর্মচারীরা উজ্জীবিত। তিনি বলেন, ছয়টি চিনিকল বন্ধ হয়েছে। এই চিনিকলগুলো থেকে রাজশাহীতে স্থায়ী ৮৪ জন কর্মচারী পাঠানো হয়েছে। আগামি মৌসুমে (২০২১-২২) ৭৫ জন মৌসুমি শ্রমিক কাজে আসবে। এক সাথে ১৬৯ শ্রমিক-কর্মচারী আসা ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিদর্শন ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা।’

রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান কবির জানান, শুনেছি, তবে অফিসিয়ালি কোনো তথ্য নেই। এটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। শুনেছি এটি মন্ত্রণালয়ের উপর পর্যায়ে আলোচনা চলছে। তবে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা রাজশাহী চিনিকল পরিদর্শন করছেন।

তিনি বলেন, এটি ব্যাপক প্লানিংভাবে (পরিকল্পনা) কাজ করা হবে। উন্নত জাতের আখ চাষ করা হবে। বাড়বে চিনি উৎপাদন। একই সাথে হবে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান। ফলে এই অঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র পালটে যাবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এবং বিএসএফআইসি এর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক (অ.দা) মু. আনোয়ারুল আলম জানান, যেগুলো আছে এগুলোর প্রোডাকশান (উৎপাদন) বাড়ানো হবে। আখের সাথে বাই প্রোডাক্ট (সহযোগী পণ্য) কী করা যায়- সে বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। ফরেন ইনভেসমেন্ট (বিদেশী অর্থ) আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগে ওই ধরনের উদ্ভাবনী ছিলো না যে কী পরিমাণ আখ উৎপাদন হবে। তবে এখন নতুন ধারণা ব্যবহার করে চিনিকল কর্তৃপক্ষকে টার্গেট দেওয়া হচ্ছে। বছরে কমপক্ষে একটি নির্দিষ্ট পরিমান আখ উৎপাদন করতে হবে।

তিনি বলেন, মিলগুলো এখন হয়তো চলছে ৪০ থেকে ৫০ দিন। সাধারণত মিলগুলো অন্তত চার মাস চালানো যায়। আমরা চাষিদের সাথে বসেছি-তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা শুনেছি।

স/আ