রাজশাহীর ৯ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এমএসআর কেনাকাটার বরাদ্দ লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য ওষুধপত্র, যন্ত্রপাতি, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ও আসবাব (এমএসআর সামগ্রী) কেনাকাটার বরাদ্দ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই এই মালামাল প্রয়োজনীয় সংখ্যক না কিনে সেই টাকা ঠিকাদার ও ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। টাকার ভাগাভাগি নিয়ে জেলার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের মাঝে মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে। এর বাইরে অন্য ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা।

অনুসন্ধানে জানা গেেেছ, সম্প্রতি রাজশাহীর ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য ওষুধপত্র, যন্ত্রপাতি, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ও আসবাবপত্র (এমএসআর সামগ্রী) কেনাকাটা করতে ৮০ লাখ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা টাকা করে বরাদ্দ আসে। কিন্তু এই টাকার কেনাকাটা না করেই অধিকাংশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে লুটপাটে মেতে ওঠেন।

জেলার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এমএসর সরবরাহ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বানেছা বেগমের ছেলে বাদল রহমান। বানেছার সঙ্গে আঁতাত করে এখানে একেবারে সামান্য পরিমাণ এমএসআর কিনে অধিকাংশ টাকায় লোপাট করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ। এই টাকার ভাগ-বাটোয়াারা নিয়ে গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসক আসফাক আলী ও অর্থোপেডিক সার্জন আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ। তবে আসাদুজ্জামান অভিযোগ করেন, হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখানোয় ওই দুই চিকিৎসক মিলে তাঁকে লাঞ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে আরএমও আসফাক আলী অভিযোগ করে জানান, এমএসআর কেনাকাটার জন্য সরকারি বরাদ্দ আসে ৯০ লাখ টাকা। এই টাকার মধ্যে ১০ লাখ টাকার মালামালও কেনা হয়নি। কিন্তু ক্রয় কমিটির সদস্য হওয়ায় আসফাকসহ অন্যদের নিকট থেকে মালামাল কেনা হয়েছে বলে স্বাক্ষর নিতে অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানানোয় আসাদুজ্জামান অভিযোগ তুলেন তাঁকে লাঞ্চিত করা হয়েছে।

তবে এমএসআর কেনাকাটায় কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি বলেন, ‘ওই দুই চিকিৎসক অনিয়মিতভাবে হাসপাতালে আসেন। এ নিয়ে তাদের হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখানোয় তাঁরা আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ রটাচ্ছেন।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্গাপুরের পাশাপাশি জেলার পবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাগমারা, পুঠিয়া, চারঘাট, বাঘা, তানোর, গোদাগাড়ী ও মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও প্রায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বরাদ্দের সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে এমএসআর সামগ্রী কেনাকাটা না করে সেই টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে। এই টাকার একটি  জেলা সিভিল সার্জনের দপ্তরেও গেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমএসআর কোনাকাটা সঠিকভাবে কেনা হয়েছে কিনা সেটি তদারকি করে দেখা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন জেলা সিভিল সার্জন এনামুল হক। তিনি বলেন, এমএসআর কেনাকাটায় একেকটি উপজেলায় একেকভাবে বরাদ্দ এসেছে। সেটি ঠিকমতো খরচ করা হয়েছে কিনা আমরা তদারকি করছি। কিন্তু কোনো ধরনের অনিয়মের খবর আপাতত আমার কাছে নাই। এই ধরনের অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিব।’

স/আর