রাজশাহীর ভদ্রা পরিজাত লেক পরিণত হয়েছে ডাস্টবিনে

আব্দুল্লাহ আল মারুফ :
ডাস্টবিনের অভাব এবং দর্শনার্থীদের উদাসীনতায় দিন দিন ঝুঁকির মুখে পড়ছে কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য পার বাঁধাই করা রাজশাহী মহানগরীর ‘ভদ্রা-পারিজাত লেক’ এর পরিবেশ ও সৌন্দর্য!

লেকের পার বাঁধাইয়ের কাজ শেষ হবার পরপরই প্রায় প্রতিদিনই এখানে বেড়াতে আসেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। লেকে বেড়াতে আসা প্রায় সকলের হাতেই থাকে চিপস, পানি ও কোমল পানীয়র বোতল, ওয়ান টাইম চায়ের কাপ সহ নানা খাবার সামগ্রীর প্যাকেট। ব্যবহার শেষে স্থান পরিত্যাগের সময় এসব খালি প্যাকেট এবং বোতল ডাস্টবিনের অভাবে যত্রতত্র ফেলে যান সকলেই।

সম্প্রতি সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লেকের পানি, পার এবং লেকের চারপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন ধরণের খাদ্যসামগ্রী ও তামাকজাতীয় দ্রব্যের মোড়ক, পানি ও কোমল পানীয়র বোতল, ওয়ান টাইম চায়ের কাপ সহ নানা আবর্জনা। এছাড়াও লেকের বাঁধাই করা পারে পানের পিক ও পানিতে সিগারেটের পরিত্যাক্ত অংশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

লেকের পানি, সদ্য নির্মিত পার এবং এর আশেপাশের রাস্তাগুলোতে সবসময়ই ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। ময়লা ফেলার জন্য কোনো নির্ধারিত স্থান বা ডাস্টবিন না থাকাকে এর জন্য দায়ী করেন তারা। তবে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দাবী, দর্শনার্থীদের সচেতনতার অভাবে লেক ও পারের এই হাল।

লেকে ঘুরতে আসা হিমেল জানান, “মুলত ডাস্টবিনের অভাবেই এমনটা ঘটছে, ডাস্টবিন না থাকার কারনে দর্শনার্থীরা তাঁদের উচ্ছিষ্ট গুলো কোথায় ফেলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। তখন যত্রতত্র ফেলার একটা মানসিকতা গড়ে ওঠে তাঁদের মাঝে।”

আরেক দর্শনার্থী রাশিদুল ইসলাম মাহিন জানান “এত টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি স্থান রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সাধারণদেরও আরেকটু সচেতন হওয়া উচিৎ। এটি বিনোদন কেন্দ্রে রুপ লাভ করবে তা সবাই জানতো, তারপরও এটির পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ না নেওয়াটা কর্তৃপক্ষের এক ধরনের উদাসীনতাই! আবার এমন সুন্দর একটা জায়গাতে পানের পিক ফেলা বা পানিতে কোন কিছু ফেলাও নাগরিকদের চরম দায়িত্বহীনতা।”

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর পরিচ্ছন্নতা কর্মী এ ক্ষেত্রে পুরো দায় দেখেন ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের। তিনি জানান “প্রতিদিন রাতে আমরা এটি পরিস্কার করি। সকালে আসলে এখানে কোন আবর্জনা দেখা যায়না। কিন্তু কেউ যদি পানিতে আবর্জনা ফেলে, তবে আমরা কিভাবে তা পরিস্কার করতে পারি? পনিতে কোন কিছু না ফেললে এটি সবসময় পরিস্কার থাকবে।”

তবে, ডাস্টবিনের প্রয়োজন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন “অবশ্যই আছে, তবে ডাস্টবিন দিলেও ওরা (দর্শনার্থীরা) দেখবেন একি কাজ করবে।”

তবে লেকে প্রাতঃভ্রমণে আসা পদ্মা আবাসিক এবং পারিজাত আবাসিকে বসবাসরত কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, সকালের দিকে এখানে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে সে চিত্র বদলে যায়। বিশেষ করে বিকেলের দিকে এখানে অনেক দর্শনার্থীরা আসেন, তারাই মুলত ডাস্টবিনের অভাবে যাবার সময় তাদের ব্যবহৃত খাবারের প্যাকেট ও বোতল এখানে ফেলে যান। রাতে কিছু পরিচ্ছন্নতা কর্মী তা পরিস্কার করলেও তা যথেষ্ট নয়।

তবে কোন কোন বাসিন্দা একটু ক্ষোভের সুরেই জানান, “কেবল পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা দর্শনার্থীদের দোষ দিলেই হবে না, এখানে কর্তৃপক্ষেরও গাফিলতি আছে। নির্মান কাজের সময় কয়েকটি স্থায়ী ডাস্টবিনের ব্যবস্থা গ্রহন করলে কি ক্ষতি হতো? বা এখন করলেই বা কি ক্ষতি হয়? তারা কি জানেনা, এখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভীড় করে!”

তবে নামোভদ্রার বাসিন্দা জাকির হোসেন জনি জানান, “শুনেছি নির্মান কাজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত লেকটির সৌন্দর্যবর্ধনের সব কাজ শেষ হয়নি। হয়তো সব কাজ শেষেই সে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে কিছু অস্থায়ী ডাস্টবিনের ব্যবস্থা এখন করা যেতেই পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এটি একটি উন্মুক্ত স্থান। সারাদিন এখানে মানুষের আসা যাওয়া থাকে। তাছাড়া আশেপাশের বহু মানুষ এখানে গোসল করে!”

পরিবেশবিদরা বলছেন, “এই ধরনের স্থানে ডাস্টবিনের কোন বিকল্প নেই। যত দ্রুত সম্ভব এখানে স্থায়ীভাবে তা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল বা কাপ, সিগারেট এর পরিত্যক্ত অংশ, এ সবই অপচনশীল দ্রব্য। এগুলো পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। তাই যেখানে সেখানে যাতে এসব ফেলা না হয়, সেজন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই এ মুহূর্তে।”

উল্লেখ্য, রাজশাহী মহানগরীর দুই অভিজাত এলাকা, পদ্মা আবাসিক এবং পরিজাত আবাসিকের সূচনা লগ্ন থেকেই অবস্থিত এই লেকটিতে মূলত ২০১৮ সাল থেকে পার বাঁধাইয়ের কাজ শুরু করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। নির্মান কাজ শেষের পর পরই এই স্থানটি পরিনত হয় নগরী ও এর আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন বয়সের নানা শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে আগ্রহ, আড্ডা এবং বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে!

স/রা