রাজশাহীর পোস্টাল ট্রেনিং সেন্টারের বাগানে শত শত শামুকখোল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে পুরনো পোস্টাল ট্রেনিং সেন্টার বাগান ও তার পাশে রয়েছে শাহ মখদুম ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা মাঠে বিশালাকারের বেশ কয়েকটি কড়াই গাছ এবং তেতুল গাছ। এসব গাছে গত কয়েক বছরের মতো এবারো এসে আশ্রয় নিয়েছে শত শত শামুকখোল, পানকৌড়ি, নিশি বক ও সাদা বকের দল। এসব পাখিদের মধ্যে অন্তত নব্বই বাগই রয়েছে শামুকখোল জাতের পাখি। এই পাখিগুলোই মূলত ওই গাছগুলোতে আশ্রয় নিয়ে বাসা গেড়েছে। অন্য পাখিগুলো আশ্রয় নিয়েছে গাছে ডালে।

বাগানের পাশ দিয়ে সকাল-বিকেল যাওয়ার সময় এসব পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ কানে ভেসে আসে বেশ জোরে-সরেই। সেই পাখির ডাকে ওপরের দিকে গাছের ডালের দিকে নজর দিতেই মেলবে শত শত পাখির বাসা। এসব বাসাগুলো সবই তৈরী করেছে শামুকখোল জাতের পাখি। এই পাখিগুলো একসময় বাংলাদেশ থেকে হারিয়েই জেতে বসেছিলো শিকারীদের অত্যাচারে। ফলে এশিয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে জুন মাসের শুরুর দিক থেকে এরা উড়ে এসে বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয় গড়ে। প্রায় ৫-৬ মাস আশ্রয় নিয়ে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে তারা আবার চলে যেত। তবে এখন প্রায় সারাবছরই দেখা যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লম্বা ঠোটওয়ালা শামুকখোল জাতের পাখিগুলো।


রাজশাহীর পোস্টাল ট্রেনিং সেন্টার ও মাদ্রাসা মাঠের গাছে এবারো এসে এ জাতের শত শত পাখিগুলো এরই মধ্যে বাসাগেড়ে ডিম পেড়েছে। আর সেই ডিমগুলোর ওপর রাত-দিন বসে থেকে বাচ্চা ফুটানোর অপেক্ষা করছে পাখিগুলো। এরই মধ্যে পাখিগুলোর বাসায় পাড়া ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে শুরু করেছে। সেই বাচ্চাগুলোও কিচির-মিচির শব্দ করতে শুরু করেছে।

লম্বা ঠোট আর লম্বা পাওয়ালা শামুকখোল পাখিগুলো দেখতে সাদা দেখায়। তবে এদের ডানাগুলোর একটি অংশ কালো বর্ণের। পাখিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি বেশ বড়সড় আকারের হওয়ায় মনকাড়ে সকলেরই। তাই রাজশাহীর বাগানে আশ্রয় নেওয়া পাখিগুলো দেখতেও সকাল-বিকেল ভীড় করেন পাখিপ্রেমীরা।

স্থানীয় পান ব্যবসায়ী সিরাজ জানান, এক সময় এই পাকিগুলো রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের বাগানে এবং পুরনো পোস্টাং ট্রেনিং সেন্টারের বাগানে আশ্রয় নিত। তবে জেল খানার কর্মকর্তাদের নির্দেশে অবাধে পাখি নিধন করে চলত ভুড়িভোজ। ফলে বছর তিনেক ধরে এই পাখিগুলো আর জেল খানার বাগানে আশ্রয় নেয় না। এখন তারা শুধুমাত্র পোস্টাল ট্রেনিং সেন্টার বাগান এবং মাদ্রাসা মাঠের কড়াই গাছেই আশ্রয় নেয়। আর এসব গাছেই বাসা গড়ে তুলে সেখানে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চা ফোটার পরে সেগুলো উড়তে শেখার পরেই সেগুলো নিয়ে চলে যায় মা-বাবারা।

সিরাজ জানান, এখন আর কেউ পাখি শিকার করতে পারে না। শিকার করতে এলেই আমরা বাধা দেয়। পাশেই অবস্থিত পুলিশ অফিসার্স মেসের পুলিশ সদস্যরাও এসে সহযোগিতা করে। ফলে এখন পাখিগুলো এখন এখানে নিরাপদেই আশ্রয় গড়ে। এরা সকাল হওয়ার পরপরই দল বেধে খাবার সংগ্রহের জন্য চলে যায়। পাশেই পদ্মা নদীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের খাল-বিল থেকে এরা খাদ্য সংগ্রহ করে আবার সন্ধ্যা নাগাদ চলে আসে। বাচ্চাদের জন্য এবং ডিমে তা দেওয়া পাখিদের জন্য খাদ্য নিয়ে আসে তারা।

পাখি দেখতে যাওয়া স্থানীয় পাঠানপাড়া এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, ‘এদিক দিয়ে হেঁটে যেতেই মনটা অনেকটা আনন্দে ভরে উঠে। পাখিদের ডাক যেন কানে ভেসে উঠে। আর পাখিদের ডাক শুনতে পেলেই যেন মনে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। অনেকটা শান্তিও লাগে তখন। তাই সময় পেলেই ছুটে আসি পাখিদের এই আশ্রয়স্থলের নিচে।’


পুলিশ অফিসার্স মেসের কনস্টেবল মুনসুর রহমান বলেন, ‘পাখিগুলোর কিচির-মিচির শব্দ শুনতে খুব ভালো লাগে। দাই এদেরর রক্ষার জন্য আমরা সর্বদা সজাগ থাকি। ফলে এখন আর কেউ এসব পাখিকে শিকারের সাহস পায় না। এতে করে পাখিরাও নিরাপদ আবাস পেয়ে এখন প্রতি বছর বেশি বেশি করে আসে বিভিন্ন পাখিগুলো। ’

রাজশাহীর পদ্মা নদীর তীরঘেঁষে অবস্থিত পোস্টাল ট্রেনিং সেন্টারে গতকাল সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ছাঁয়াঘেরা পরিবেশে শতশত সাদা বক, পানকৌড়ি, রাজচোরা ও বালি হাঁস জাতের শতশত অতিথি পাখিগুলোর কিচির-মিচির শব্দে ভরে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।

এদিকে উইকিপিডিয়া সূত্র মতে, বর্ষাকালের শেষদিকে শামুকখোলের প্রজনন ঋতু শুরু হয় বলে জানা যায়। মূলত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস এদের প্রজনন মৌসুম। স্থানভেদে প্রজনন ঋতুতে বিভিন্নতা দেখা দেয। যে বছর খরা হয়, সে বছর এরা সাধারণত প্রজনন করে না। এ সময় এরা গোঙানির মত শব্দ করে ডাকে ও ঠোঁটে ঠক্ ঠক্ করে শব্দ তোলে। বক, পানকৌড়িসহ বিভিন্ন জাতের সাথে মিশে কলোনি করে বাসা বানায় তারা। এ কারণেই রাজশাহীর বাগানে আশ্রয় নেওয়া শামুকখোলের সঙ্গে রয়েছে পানকৌড়ি, সাদা বক, নিশিবকসহ আরো কয়েকটি বড় আকারের পাখিরা।

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, এরা গাছে ডালপালা দিয়ে বড় মাচার মত আগোছালো বাসা বানায়। স্ত্রী ও পুরুষ দু’জনে মিলেই বাসা করে। বাসা বানাতে ৫-১৫ দিন সময় লাগে। বাসা বানানো শেষে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সংখ্যায় হয় ২-৫টি। স্ত্রী ও পুরুষ দু’জনেই ডিমে তা দেয়। প্রায় ২৫ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়।

স/আর