রাজশাহীর পদ্মায় জেলের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ, আকারও বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর পদ্মায় মাঝে কয়েকটি বছরে ইলিশের দেখা খুব একটা পেতেন না জেলেরা। কদাচিৎ মাঝ নদীতে শীতের শেষের দিকে গিয়ে দুই-একটি করে জাটকা ধরা পড়ত। কিন্তু সেই পদ্মায় এখন প্রায় প্রতিদিনই জেলের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ। কখনো কখনো একজন জেলে দিনভর মাছ শিকার করে অন্যান্য মাছের পাশাপাশি ২-৩ কেজির বেশিও ধরতে পারছেন ইলিশ। এসব ইলিশ রাজশাহীর বাজারেও বিক্রি হচ্ছে দেদার। রাজশাহী নগরীসহ জেলার পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট এবং বাঘা উপজেলা সদরের পাড়া-মহল্লাতেও ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে পদ্মায় ধরা পড়া ইলিশ।

জেলেরা জানাচ্ছেন, মাঝে (৫-৭ বছর আগে) কয়েক বছরের তুলনায় এখন ধরা পড়া ইলিশগুলোর আকারও একটু বড়। প্রায় প্রতিটি ইশিলেরই আকার ৪০০-৫০০ গ্রাম। বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও বড় আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে। অর্থাৎ সর্বনিম্ন তিন থেকে চারটি ইলিশেই এক কেজি হচ্ছে। আবার দুটিতেও হচ্ছে এক কেজি। কিন্তু ৫-৭ বছর আগে ৮-১০ ইলিশে হত এককেজি। ফলে এখন জেলেরা সারাদিন ৮-১০টি ইলিশ জাল দিয়ে ধরতে পারলেও তার সংসার চালানোর টাকা হয়ে যাচ্ছে। এতে করে রাজশাহীর জেলারা অন্যান্য মাছের চেয়ে এখন ইলিশ শিকারেই বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। তাঁদের জালে ধরাও পড়ছে কিছুটা ইলিশ।

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর তীরবর্তী চারটি উপজেলা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘা। প্রতিটি উপজেলার সীমানায় পড়েছে পদ্মা নদীর ২৬ থেকে ২৯ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গত ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত পদ্মা নদীতে মা ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এই সময়েও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহীর জেলেদের ইলিশ শিকার করতে নদীতে জাল ফেলতে দেখা যায়। জেলার বাঘা, চারঘাট এবং গোদাগাড়ীতে স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তর থেকে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকদিন ইলিশ ধরা জাল আটক করে পুড়িয়েও দেওয়া হয়। ফলে কিছুটা হলেও কমে আসে ইলিশ শিকারের পরিমাণ। তবে গতকাল থেকে ইলিশ শিকার আবার শুরু হওয়ায় জেলেরা পুরোদমে নেমে পড়েন ইলিশ শিকারে।

 

জেলার পবা উপজেলার নবগঙ্গা গ্রামের জেলে হযরত আলী বলেন, এখন পদ্মায় গেলে ইলিশ ধরা পড়বেই। কিন্তু ৫-৭ বছর আগে নদীতে গেলে দেশি প্রজাতির মাঝ ছাড়া জালে ইলিশের দেখা পাওয়া দুস্কর হয়ে যেত। তবে এখন সেই চিত্র আর নাই। প্রায় প্রতিদিনই জালে ধরা পড়ছে দুই-চারটি করে ইলিশ। বলা যায়, এখন কিছু জেলে শুধু ইলিশ শিকারের উদ্দেশ্যেই পদ্মায় জাল ফেলছেন।

রাজশাহীর শ্রীরামপুর এলাকার জেলে আকবর আলীও বললেন প্রায় একই কথা। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় এই পত্মায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসতে দেখেছি। তখন পদ্মার ইলিশই বেশি বিক্রি হত এই অঞ্চলে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ইলিশও যেন হারিয়ে যেতে থাকে। মাঝে ইলিশ জালে ধরা পড়তই না। তখন ইলিশ জেলেদের কাছে প্রায় সোনার হরিণে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার জেলের জালে কিছুটা করে হলেও ইলিশ আসছে। এটি ভালো লক্ষণ। এভাবে ইলিশ এলেও জেলেরা পদ্মায় জাল ফেলে সংসার চালাকেত পারবে।’

এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুভাস চন্দ্র সাহা বলেন, তাঁরা ১ অক্টোবর থেকে পদ্মা নদীতে প্রায় ১৭০টি অভিযান চালিয়েছেন। নিশেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরার সময় ২৬টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় ২৪ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। অন্তত ১০ মামলা করা হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ১০ মিটার মিটার ইলিশ ধরার জাল পোড়ানো হয়েছে। কাজেই বলা যায়, এখন পদ্মায় ইলিশ আসছে। জেলেরা ইলিশ শিকার করতে পারছে।


তিনি আরও জানান, রাজশাহীতে প্রায় ৭ হাজার ৫৩৪ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৮০০ জেলেকে দুঃস্থ এবং ইলিশ শিকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইলিশ ধরা বন্ধের সময় এসব জেলেদের মাঝে ১৮ মেট্রিক টন চাল সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার মাছ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম জানান, এখন প্রতিদিনই ইলিশ আসতে শুরু করেছে। ইলিশ ধরা শুরু হওয়ার পর গতকাল বিকেলে নগরীর কলাবাগান এলাকার মাছ বাজারেও পদ্মার ইলিশ দেখা মেলে। এমনকি আজ সকালেও রাজশাহী নগরীতে ফেরি করে পদ্মার ইলিশ বিক্রি করতে দেখা যায়।


রিকশা ভ্যানে করে ফেরি করে ইলিশ বিক্রি করতে থাকা বাঘার মনিরুল ইসলাম নামের এক মাছ ব্যাবসায়ী জানান, ইলিশ ধরা শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজশাহীর বাজারে পদ্মার ইলিশ বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। তার মানে এগুলো একদিন-দুইদিন আগেই হয়তো ধরা হয়েছিল। প্রতিটি ইলিশ ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের। রাজশাহীর বাজারে এগুলো বিক্রি হচ্ছে দুই শ থেকে আড়াই শ টাকা কেজি দরে।

ওই মাছ ব্যবসায়ী আরও জানান, গত ১ অক্টোবরের আগেও রাজশাহীর বাজারে তারা পদ্মার ইলিশ বিক্রি করেছেন প্রতিদিন। এভাবে গত কয়েক বছর ধরেই রাজশাহীর পদ্মায় ধরা পড়া ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বাজারে। কিন্তু ৫-৭ বছর আগে গোটা বাজার মিলে রাজশাহীর পদ্মার হয়তো ৫ কেজি ইলিশও দেখা মেলেনি।

স/আর