রাজশাহীর আমের চালান নিয়ে বাড়ছে অনিশ্চয়তা

করোনা প্রকোপে রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষীদের স্বপ্ন এবার ফিকে হয়ে গেছে। বিপুল আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছেন আম চাষী, মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী, চালানি কারবারি, শ্রমিক থেকে আড়তদার সবাই।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে ৫ হাজার কোটি টাকার আমের ব্যবসা হয় বছরে। করোনা প্রকোপে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বে আম সংশ্লিষ্ট ১০ লাখ মানুষ। প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় এখনও আম চালানের প্রস্তুতি নেই।

বাগান মালিক, আম চাষী, চালানি ব্যবসায়ী, মোকামের আড়তদার ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ১৫ মে থেকে রাজশাহীসহ অঞ্চলের চার জেলায় গুটি জাতীয় দেশি আম নামানোর সময়সূচি ঘোষণা করেছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জাতের পাকা আম গাছ থেকে নামানোর কথাও বলা হয়েছে প্রশাসনের ঘোষণায়।

কিন্তু এখন পর্যন্ত রাজশাহী অঞ্চলের বড় বড় আমের মোকামে আম কেনাবেচা ও চালানের কোনো প্রস্তুতি নেই। কারণ শুক্রবার পর্যন্ত চালানি ব্যাপারিদের কোনো দেখা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমের মোকামগুলোতে নেই আম বাণিজ্যের কোনো প্রস্তুতি। ফলে আম পেকে গেলেও তারা ক্রেতার অভাবে বাজারে নিতে পারবেন কিনা তা নিয়েই শঙ্কায় ভুগছেন। রাজশাহীর অতিরিক্ত কৃষি অঞ্চল দফতর সূত্রে জানা গেছে, ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে রাজশাহী অঞ্চলে এবার আমের আকার বড় হয়েছে। রোগবালাইমুক্ত আম হয়েছে পুষ্ট।

ফলে আমের মোট ফলন প্রাক্কলনের চেয়ে কিছু বেশি হবে। সূত্রমতে, এবার শুধুমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেই আমের উৎপাদন হবে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন। এ আমের বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। রাজশাহী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আমবাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। এখানে ৩৩ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে হেক্টরপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন হিসাবে উৎপাদন হবে। এরপরই রাজশাহী জেলার অবস্থান। এখানে ১৯ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে।

এ মৌসুমে রাজশাহীতে আমের সম্ভাব্য ফলন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন। এর আর্থিক মূল্য ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে নওগাঁ জেলা। এ জেলায় ১৮ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন আম ফলনের আশা রয়েছে। এ পরিমাণ আমের বাজার মূল্য ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। নাটোরে ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে ৭৭ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন আমের ফলন হবে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে।

রাজশাহী অঞ্চলের জেলা প্রশাসন ৭ মে আম নামানোসহ বিভিন্ন জাতের আম গাছ থেকে পাড়ার সময়সূচি ঘোষণা করে। সূচি অনুযায়ী, সব ধরনের গুটি জাতের আম ১৫ মে, গোপালভোগ ২০ মে, লক্ষণভোগ ও রানীপসন্দ ২৫ মে, ক্ষিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন, আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম ১০ জুলাই গাছ থেকে পেড়ে বিক্রি ও চালান করা যাবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক শামসুল হক জানিয়েছেন, রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ আম চালান হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন মোকামে। আম চালানে সমস্যা হলে চাষী ছাড়াও মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বেকার হয়ে পড়বেন শ্রমিকরাও।

রাজশাহী অঞ্চলের আমের তিনটি বড় মোকাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, নওগাঁর সাপাহার ও রাজশাহীর বানেশ্বরহাট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মোকামের আমের আড়তগুলো খোলার অনুমতি দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। সেক্ষেত্রে চাষীরা আম পেড়ে কোথায় বিক্রি করবেন সে শঙ্কা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বণিক সমিতির সভাপতি এরফান আলী বলেন, এত আম কী হবে যদি দূরের মোকামে চালান না হয়। সম্ভাব্য বিপুল আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কার কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার হুমায়ুন কবীর খন্দকার বলেন, আম চালানের বিষয়ে দ্রুত কী পদক্ষেপ নেয়া যায় তা নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে। আশা করি, মৌসুম শুরুর আগেই একটা সমাধান আসবে।