রাজশাহীতে ৫ মাস পর স্বস্তির বৃষ্টি : আম-লিচুর জন্য আশির্বাদ

আমজাদ হোসেন শিমুল:

অগ্নিঝড়া বৈশাখে প্রচণ্ড খরতাপে পুড়ে যাচ্ছিলো রাজশাহী। তীব্র তাপদাহে রাজশাহীবাসীর জনজীবন যখন ওষ্ঠাগত ঠিক সেই মূহুর্তে রাজশাহীতে এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টি রাজশাহীকে কিছুটা হলেও শীতল করেছে। দীর্ঘ ৫ মাস পর হওয়া এই বৃষ্টি রাজশাহীর জনজীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে। বিশেষ করে আমের রাজধানীখ্যাত রাজশাহীতে এই বৃষ্টি আমচাষিদের জন্য বড় ধরনের আশির্বাদ হিসেবেই এসেছে। এমনটাই জানিয়েছে রাজশাহীর আমবাগান মালিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটও।

গত বুধবার সকালে রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি আম বাগানে ব্যাপক আমের গুটি ঝুলছে। কিন্তু প্রচণ্ড খরার আমের অধিকাংশ গুটিই শুকিয়ে গিয়েছিল। বাঘা এলাকার বাউসা এলাকার আমবাগান মালিক আবদুল মালেক বলেন, ‘আমার ৩ বিঘা জমিতে প্রায় দেড় শতাধিক আমগাছ রয়েছে। এবার আমের মুকুলও এসেছিল অনেক বেশি। গুটিও ধরেছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু পাঁচ মাস থেকে প্রচণ্ড খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে মুকুলেই শুকিয়ে গেছে অনেক গুটি। খরার কারণে বস্তায় বস্তায় আমের কড়ালি বাগানে গাছের নিচ থেকে সংগ্রহ করে পাইকারি ২ টাকা কেজি দরে বিক্রিও করেছি।

বৃষ্টির পর বৃস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সকালে মোবাইল ফোনে এই বাগান মালিক জানান, বুধবার সন্ধ্যায় আমের জন্য আশির্বাদস্বরূপ বৃষ্টি নেমেছিল। অনেক খরায় ঝড়ে গেলেও যা অবশিষ্ট আছে এই বৃষ্টিই আমের বাম্পার ফলনের জন্য যথেষ্ট। তাই আমি বলবো, বুধবার সন্ধ্যায় যে বৃষ্টি হয়েছে তা আমের জন্য অত্যন্ত উপকার হয়েছে। একইভাবে রাজশাহীর রাজশাহীর দুর্গাপুর, চারঘাট, পুঠিয়াসহ জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার আমচাষি ও বাগান মালিকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে গত বুধবারের বৃষ্টি আমের জন্য বড় আশির্বাদ বলে জানান তারা।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীতে মাঝারি থেকে তীব্র তাপতাহ বয়ে যাচ্ছিলো। গত মঙ্গলবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তামপাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগে দিন সোমবারও ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। কিন্তু গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজশাহীতে ৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ায় তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। গতকাল বৃস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তামপাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র বলেন, ৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ায় রাজশাহীতে তামপাত্রা কিছুটা কমেছে। রাজশাহী কিছু উপজেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বেশি হয়েছে। রাজশাহীর আকাশে মেঘ গড়াগড়ি খেলছে। আরও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এতে সোয়া দুই লাখ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে.জে.এম আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘একটি আমের মুকুলের ছড়ায় শত শত আমের ফুল থাকে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ থাকে স্ত্রী ফুল। খরা, অনাবৃষ্টি কিংবা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমের মুকুল বা ফুল ঝড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তারপরও এবার আমের যে পরিমাণ গুটি রয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। তারপর গত বুধবার (২১ এপ্রিল) রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট কিংবা তানোর কিংবা জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে ২০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যে আমের গুটিগুলো সত্যিকার অর্থে ঝড়ে যাবে সেগুলো এই বৃষ্টির কারণে দ্রুত ঝড়ে যাবে। আবার যেগুলো থাকবে বৃষ্টির কারণে সেগুলো দ্রুত বড় হয়ে পরিপক্ক হবে।’

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলিম বলেন, খরা, ঝড়-বৃর্ষ্টি, শিলাবৃষ্টি নিয়ে কিন্তু চৈত্র, বৈশাখ আর জৈষ্ঠ্য মাস। প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেই কিন্তু আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহীতে আম উৎপাদন হচ্ছে। ৫ মাসে কিন্তু রাজশাহী মাঠ-ঘাট, পথে-প্রান্তর সবকিছুই শুকিয়ে গেছে। বৃষ্টির জন্য বরেন্দ্র অঞ্চল অনেকটা হা-হা-কার করছিল। কিন্তু হঠাৎ স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। এতে আম-লিচুর ব্যাপক উপকার হয়েছে। এতে করে আম-লিচুর বোটা শক্ত হবে। পরে একরকম কালবৈশালী ঝড়েও এর কারণে অনেক আম ঝড়ে পড়বে না। সবকিছু মিলিয়ে এবার আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।’

এএইচ/এস