রাজশাহীতে ২৫ দিনে ছয় হত্যাকাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহী জেলা ও নগরে এপ্রিল-মে মাসের ২৫ দিনে ছয়টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ড ছাড়াও তিন জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এইসব ঘটনায় নগর ও জেলা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েজন হত্যাকারীকে গ্রেফতারও করেছে। এছাড়া নগরীর সিটি হাট এলাকায় ননিকা, হেতেমখাঁ এলাকায় মিজান ও বাগমারায় কনক কুমার হত্যার দায় স্বীকার করে আসামিরা আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। 

পুলিশ জানায়- এই মামলাগুলো চলমান রয়েছে। এই মামলাগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। (গত ১০ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত সিল্কসিটিনিউজে  প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে করা। সংবাদগুলো আমাদের- নিজস্ব প্রতিনিধি, বাগমারা ও তানোর প্রতিনিধি করেছে।)

জানা গেছে- গত ১৬ এপ্রিল নগরীর অদূরে বাইপাস সড়কের সিটি হাট এলাকায় ডোবায় ড্রামের মধ্যে থেকে ননিকা রাণী রায় (২৪) নামের এক নারীর মৃত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এনিয়ে মামলারটির তদন্ত করে পিবিআই। তারা এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন- পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকার (৪৩) ও তার সহযোগিরা হলেন, নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার আদারীপাড়ার কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার সুমন আলী (৩৪) এবং মাইক্রোবাস চালক নগরীর বিলশিমলা এলাকার আব্দুর রহমান (২৫)।


ইনসেটে নিহত ননিকা রাণীসহ আসামিরা

তার দুদিন পরে রোববার (১৮ এপ্রিল) নগরীতে ইটের আঘাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত বড় ভাই এর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ঘটনায় নিহত উজ্জ্বল শেখের (৫০) স্ত্রী বাদি হয়ে দেবর শাফির (৩৭) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরে গোদাগাড়ী থেকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ শাফিকে গ্রেফতার করে।

শনিবার (১০ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে নগরীর হেতেমখাঁ এলাকায় বন্ধুর ছুরিকাঘাতে মিজানুর রহমান মিজান (৩৫) নামের আনসার সদস্য খুন হন। একইদিন রাত সোয়া ১১টার দিকে অভিযুক্ত মাধব কুমার ঘোষকে জেলার পুঠিয়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পূর্বের কোনো ঘটনার জের ধরে আনসার সদস্য মিজানের সঙ্গে মাধবের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে মাথব তাকে উপর্যুপরি বুকে ছুরিকাঘাত করে। পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে আদালতে স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দী দেন মাধব।


বামে নিহত মিজান- ডানে হত্যাকারী মাধব

গত ৪ মে বাগমারায় পাঁচ হাজার টাকা বাকিতে ল্যাপটপ বিক্রি না করার জন্য বন্ধু কনক কুমারকে (২৬) পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে অভিযুক্ত মিলন রহমান। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল মিলন রহমান বন্ধু কনকের মাথায় আমের ডাল দিয়ে আঘাত করে বাগমারার ভবানীগঞ্জ এলাকায়। পরে স্থানীয়রা কনকে উদ্ধার করে রামেক হপাসাতালে ভর্তি করলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১ মে মৃত্যু বরণ করেন কনক। 

৩০ এপ্রিল বাগমারা ভবানীগঞ্জ পৌরসভার চাঁনপাড়ায় গৃহবধূকে গলাটিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে নিহত গৃহবধূ সাবিনা খাতুনের (২৩) লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গৃহবধূর স্বামী সোহাগ হোসেন (১৭) ও শাশুড়ি রুপালি বেগমকে (৩৪) গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় সোহাগের নানা ইয়াছিন আলী মন্ডল ও মামা ইমরান আলী মন্ডল পলাতক রয়েছে। নিহতের মা ছামেনা বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে তানোরের কলমা ইউনিয়নের একটি বিল থেকে প্রতাপ সিং (২০) নামের এক যুবককে জবাই করা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত প্রতাপ তানোরের চোরখোল গ্রামের বাসিন্দা। প্রতাপ রাজশাহী ‘নবরূপ’ মিষ্টির দোকানের কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন- বলে জানা গেছে। ধারনা করা হচ্ছে, বুধবার (২৮ এপ্রিল) দিবাগত রাতের কোন এক সময় নিহত প্রতাপকে কে বা কারা জবাই করে হত্যা করে। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের জখম রয়েছে।

রহস্যজনক মৃত্যু:

বামে নিহত মারুফ- ডানে কাজলী

শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) জানাযার প্রস্তুতির সময় কাফনের কাপড়ে মোড়ানো শিশু মারুফ হাসানের (৭) লাশ নিয়ে আশে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য রামেক হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর বাবা শাহাজাহান আলী, সৎমা মুক্তা খাতুন, দুই চাচা আজিম ও কাজিম আলীকে থানায় নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামে। মারুফ হাসান উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের শাহাজাহান আলীর দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে। শিশুর মায়ের অভিযোগ, বাবা ও সৎমা তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলেছে। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাবি, শিশুটিকে জিনে মেরে ফেলেছে।

গত ৩ মে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রাত দেড়টার দিকে নগরীর তেরোখাদিয়া সবজিপাড়া শান্তিবাগ (৫ নং গলি) এলাকার ভাড়াবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূর নাম কাজলী (২৮)। তার স্বামীর নাম মো: লিটন। কাজলী জেলার তানোর উপজেলার তালন্দ বাজার এলাকার মো. কালাম হোসেনের মেয়ে। এই ঘটনায় শান্ত কুমার সাহা নামের এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনে পুলিশ।

একই দিন সোমবার (৩ মে) দুপুরে নগরীর জিন্নানগর এলাকায় একটি বন্ধ দোকানঘরে পলাশ (২৫) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত পলাশ (২৫) নগরীর বোয়ালিয়া থানার জিন্নানগর এলাকার মৃত ওয়াসিম আলীর ছেলে।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম জানান- এই মামলাগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এছাড়া বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে।

স/আ