রাজশাহীতে স্বর্ণালঙ্কারের জন্য ছাত্রের হাতে শিক্ষক মায়া রাণী খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্বর্ণালঙ্কারের লোভেই রাজশাহীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মায়া রাণী ঘোষকে (৭০) খুন করেছে তারই ছাত্র। গত মঙ্গলবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর রাতেই অভিযান চালিয়ে মিলন শেখ নামে ওই শিক্ষকের খুনি এই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। এসময় গ্রেুপ্তারকৃতের কাছ থেকে নিহত শিক্ষকের খোয়া যাওয়া স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় নগর পুলিশের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মঙ্গলবার দুপুরে নিহতের গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ছোট ভাই দেবাশিস ঘোষ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ ছিল- নিহতের গলায় থাকা একটি স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, দুইটি স্বর্ণের চুড়ি খোয়া যায়। যার আনুমানিক মূল্য ২ লক্ষ দশ হাজার টাকা। এছাড়া নিহতের নেভি ব্লু কালারের স্যামসাং মোবাইল ফোনসেট খোয়া যায় যার মূল্যমান ২৪৫০ টাকা খোয়া যায়।

বাদির এই এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে বোয়ালিয়া মডেল থানার মামলা নং ৬০, তাং-২১/০৯/২০২১, ধারা ৩০২/৩৮০/৫৩৪ পেনাল কোড রুজু করে থানার তদন্তভার এসআই মো. গোলাম মোস্তফাকে দেয়া হয়। বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিকের নির্দেশনায় অফিসার ইনচার্জ নিবারণ চন্দ্র বর্মন পিপিএম এর নেতৃত্বে বোয়ালিয়া মডেল থানার একটি বিশেষ টিম আসামি মো. মিলন শেখ গ্রেপ্তার করেন। আসামীর দেয়া তথ্যমতে- মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে নিহতের খোয়া যাওয়া স্বর্ণের চেইন তিন টুকরা, স্বর্ণের দুইটি কানের দুল, দুইটি স্বর্ণের উঠে যাওয়া ব্রোঞ্জের চুরি এবং খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়- গ্রেপ্তারকৃত আসামি হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বাসা ভাড়া নেয়ার মিডিয়া হিসেবে কাজ করার কৌশলে ভিকটিমের শরীরে থাকা স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে পরিচয় গোপন রাখার হীন অভিপ্রায়ে ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে গ্রেপ্তারকৃত আসামি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে। এ বিষয়ে আরও বিশদ তদন্ত অব্যাহত আছে।

সংবাদ সম্মেলনে নগর অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মো. মজিদ আলী, উপ-কমিশনার (বোয়ালিয়া) সাজিদ হোসেনসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

নগরীর বোয়ালিয় মডেল থানার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন, মায়া রাণীকে হত্যা করে তার গলার চেইন, হাতের বালা ও কানের দুল নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন মিলন। এ জন্য কয়েকদিন থেকেই তিনি বাড়ি ভাড়া নেওয়ার নাম করে মায়ার বাড়ি যান। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে তিনি মায়ার বাড়ি যান। এ সময় বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে মিলন তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন নিয়ে যান। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে মিলন শেখকে তার বাড়ি থেকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খোয়া যাওয়া স্বণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া একটি মার্কেটের ছাদে তার দেখানো জায়গা থেকে মায়া রাণীর মোবাইল ফোন ও সীমকার্ড উদ্ধার করা হয়। মিলনকে মায়া রাণী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে বুধবার বিকেলে মিলনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার নগরীর কুমারপাড়া ঘোষপাড়া মহল্লার নিজ বাড়িতে শ্বাসরোধ করে মায়া রাণী ঘোষকে হত্যা করা হয়। স্বামী-সন্তানহীন মায়া রাণী টিনশেডের নিজের বাড়িতে একাই থাকতেন। তিনি নগরীর মন্নুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। গ্রেপ্তারকৃত মিলন শেখ মন্নুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। সে সুবাদে আগে থেকে মায়া রাণীর সঙ্গে মিলনের পরিচয়ও ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

এএইচ/এস