রাজশাহীতে সর্বোচ্চ গ্রহনযোগ্যরা মনোনয়ন পাবেন-একান্ত সাক্ষাতকারে বিএনপি নেতা আলাল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী এলাকায় বিএনপির কিছু ব্যাকড্রপ আছে উল্লেখ করে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, তখন রাজশাহীতে কিছু ব্যাকড্রপ ছিল। আমরা এখানে চেষ্টা করছি, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বিরোধী মনমানসিকতার নেতৃত্বে যারা আছেন, দলের মধ্যে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য, এবং নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের কাছে একটা প্রত্যাশার জায়গা যার উপরে আছে, সে ধরনের প্রার্থীরা নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। পদ, পদবী, দলের জন্য ত্যাগ বা আগের ইতিহাস যাই থাকুক না কেন এই জিনিষগুলোকে এবার অবশ্যই বিচার করা হবে। বিশেষভাবে জঙ্গি সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার, যারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, দলের কাছে পরিক্ষিত এবং একই সঙ্গে তার পদ পদবী এবং অবস্থান কি সাধারণ মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা-সেটা হবে মুল বিবেচ্য। এখানে কোনো নাম বা পদ মুখ্য বিষয় হবে না।’ আজ মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীতে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে সিল্কসিটি নিউজকে একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন বিএনপির এ প্রভাবশালী নেতা। এছাড়াও আগামী নির্বাচন এবং বিএনপির অবস্থান নিয়ে সিল্কসিটি নিউজের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। সেগুলো পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো-

বর্তমানে রাজশাহীর বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে কি ভাবছেন?
বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। ব্যাপক বিস্তৃত নেতাকর্মী সমৃদ্ধ একটি দল। দলের নিন্ম পর্যায়ে নেতাকর্মী তাদের একটা প্রত্যাশা আছে। আবার রাজশাহী বিভাগে বড় বড় পদে যারা আছেন, জনপ্রতিনিধি থেকে দলীয় পদধারী সকলের একটি প্রত্যাশা আছে। এই প্রত্যাশা অনেক সময় একটা বড় দলের কারণে কোথাও কোথাও মতে অমিল থাকে। কোথাও পরিস্থিতিটা একটু বেশি মাত্রার। এ মতের অমিলটা একে অপরকে সহ্য না করার একটা মাত্রা পর্যন্ত চলে যায়। সে জায়গাগুলোতে আমরা একটা সমন্বয়ের চেষ্টা করছি এবং আমরা চাচ্ছি যে, এই নয়টি বছর ধরে বিএনপি এবং গোটা বিএনপি পরিবারের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যেভাবে অত্যাচারিত নির্যাতিত হয়েছে-তাতে সংগঠনকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে অভ্যান্তরীন বিরোধগুলোকে মিটিয়ে ফেলার আর দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে এইভাবে মার খেতে হবে বহুদিন ধরে। গতকালকেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের বলেছেন যে, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দূর্বল হলেও জনপ্রিয়তার দিক থেকে একে দূর্বল ভাবা ঠিক হবে না। এটা যদি আমার মূল প্রতিপক্ষের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি বলেন, এই জিনিসটিকে অনুধাবন করার জন্য যেটি তাদের কে ইনজেক্ট করার দরকার সেকাজগুলোই মূলত আমরা করছি। রাজশাহীতে আমার কর্মসূচিতে আসার একটি উদ্দেশ্য সেটি। এখানে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় ঐক্য আরও দৃঢ় করা, জোরদার করা এবং সাংগঠনিক নিয়ম কানুনের মধ্যে থেকে আগামি দিনে আন্দোলন, নির্বাচন যেটাই হোক, সেখানে যেন সম্মিলিতভাবে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করতে পারি। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

নির্বাচনকে নিয়ে আপনারা কি ভাবছেন?
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একটা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তারপরেও তারা চলছে। যেহেতু রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল অপক্ষমতা তাদের নিয়ন্ত্রণে, যা খুশি তাই করে তারা তাদের শাসনকালকে দীর্ঘায়িত করছেন। সেখানে আমাদের পরিস্কার বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান অবস্থায় যে আঙ্গিকে প্রধানমন্ত্রী আছেন, সে আঙ্গিকেই যদি নির্বাচনে আসেন, সে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আমরা চাচ্ছি অংশগ্রহণমূলক এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাস্তবায়ন করতে হলে ওইসময়কার সরকারের মধ্যে নিরপেক্ষ আচরণ থাকতে হবে। কারণ আমরা অতীতে দেখেছি যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে পালাক্রমে যে দলই যখন ক্ষমতায় ছিল, তাদের সময়ে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন অথবা নির্বাচনকালীন সরকার যে নামেই হোক এই সরকারগুলো যখন নির্বাচন পরিচালনা করেছে, তখন নির্বাচন কম বিতর্কিত ছিল। আমরা সে জায়গাটাই দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি নির্বাচন কমিশনের এবং এই প্রশ্নবিদ্ধ সরকারেরও কাছেও। আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে প্রশাসন কিংবা যারা তখন সরকারে থাকবেন, তাদের শুধুমাত্র নির্বাচনকে সুন্দর করা ছাড়া আর কোনো নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ থাকবে না ।

উনারা বলেন যে, সারা প্রথিবীতে প্রায় সব জায়গায় নির্বাচনকালীন একটা অন্তবর্তী সরকার আছে। কথাটা পুরোপুরি না হলেও অনেকাংশে সত্য। আবার পাশাপাশি এ কথাও সত্য পৃথিবীর কোথাও এমনটা নেই যে, একটা সংসদ বহাল রেখে ওই সংসদের এমপি সেও নির্বাচন করবে আরেকজন প্রার্থী যার কোনো প্রটোকল নেই, নামের আগে কোনো পদবী নাই, হাতে কোন ক্ষমতা নাই, সে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করবে এটাতো হতে পারে না।

আওয়ামীলীগ দুটো বিষয়ে নির্বাচনটাকে বড় আকারে প্রশ্ন আকারে নিয়ে এসেছে। একটি হলো সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন। অপরটি হলো প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান থাকা অবস্থায় নির্বাচন। দুটোর একটাতেও বিএনপি রাজি না। ১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার দেশে সাধারণ মানুষের কাছে, আন্তর্জাতিকভাবে, এবং দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় সাধারণ মানুষগুলোর কাছে যে অপবাদ নিয়েছেন সে অপবাদের ঝুঁকি নিবে কিনা বা এই ঝুঁকি নিবে কিনা এটা আওয়ামী লীগের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।
আমাদের কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ নেই। আমরা চাই নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন। সে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের জন্য আমাদের সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে। বিএনপির মতো একটা দলে প্রস্তুতিটা নতুন করে শুরু করতে হয় না। এটা চলমান একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে সয়ংক্রিয় ভাবে হয়ে যায়। সে কাজগুলো মূলত এখন সারাদেশে হচ্ছে।

আগামিতে বিএনপির কার্যক্রম কিভাবে শুরু করতে পারে?
বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে আমি বলতে পারি, সারা পৃথিবীতে শতভাগ সফল সরকার আজ পর্যন্ত কোনো ইতিহাসে নেই। বিএনপির অতীতের সরকার পরিচালনায় বা দল পরিচালনায় যদি কোনো ভুল ত্রুটি থেকে থাকে, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য উদ্ভাবনী যা করা প্রয়োজন সেদিকেই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে। ভূল সংশোধন ভবিষ্যতের পথরেখা নির্দেশনা। একবিংশ শতাব্দিতে সারা পৃথিবীতে যে পরিবর্তনশীল অবস্থা তার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে একটা ভবিষ্যত পথ রচনা করা।

আগামি দিনে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের জন্য কি নির্দেশনা থাকবে?
তাদের জন্য দুটি কথা আছে। নির্বাচন কমিশন এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা যদি এক হয়ে দাবি তুলতে পারে, সেটার পদ্ধতি যাই হোক, আমার ধারণা নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো আভাস বা জোরালো কোনো পদক্ষেপ যদি দেখে, তাহলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বয়কট করতে পারে-এমন একটি আশঙ্কা আমরা করছি। সেক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। আরেকটা হলো, বুঝতে হবে যখন মার খেতে খেতে যখন শেষ নি:শ্বাসটা চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়, তখন মানুষ যেকোনো কিছু অবলম্বন করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। নেতাকর্মীদের এটা বুঝতে হবে যে, আমার শত্রু আমার সহযোদ্ধা না। আমার সহযোদ্ধার সাথে আমার মতের অমিল থাকতে পারে, কিন্তু সে আমার শত্রু না। আমার মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তারা, যাদের কর্তৃক আমরা, সাধারণ মানুষ চরমভাবে নিপীড়িত নির্যাতিত। আমরা নিজেরা মুক্ত হবো, গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে মুক্ত করবো। এই উদ্যোম নিয়ে যেন তারা সামনে এগিয়ে যায় এটা আমার আহবান থাকবে।

স/আর