রাজশাহীতে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সিণ্ডিকেটের বাণিজ্য : জিম্মি করে চাঁদা দাবির সময় আটক ৭

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মরদেহ বহনকারী কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল রাজশাহী মেডিক্যালে নেই। এই সুযোগে লাশবাহী মাইক্রোবাস বা অ্যাম্বুলেন্স সিণ্ডিকেট রামেক হাসপাতালসহ পুরো লক্ষ্মীপুর এলাকার পুরো ক্লিনিক পাড়ায় সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। কোনো রোগী মারা গেলে লাশ বহন করতে এসব লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট সুযোগ বুঝে হাজার হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করছে।

এই চক্রের ৭ সদস্যকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে। তারা লক্ষ্মীপুরে একটি ক্লিনিকে একজনের মরদেহ আটকিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে বলে পুলিশ জায়িয়েছে।

আটক সাতজন হলেন- মো. আব্দুল্লাহ (৩২), মো. রাজন (৩৫), মো. বাদশা (৪০), এমদাদুল হক (৪০), মো. বিপ্লব (৫০), জাহিদ হাসান (২৬) ও জানারুল ইসলাম (২৮)। তাদের বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায়।

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, রবিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মহানগরীর লক্ষ্মীপুরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়নাল আবেদীন নামে মেহেরপুরের এক ব্যক্তি মারা যান। স্বজনরা নিজস্ব গাড়িতে করে মরদেটি নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তখন আব্দুল্লাহ ও রাজন তাদের বাধা দেন। তারা ওই মরদেহ আটকিয়ে চাঁদা দাবি করেন। বলেন, এখান থেকে কোনো মরদেহ নিজ এলাকায় নিয়ে যেতে হলে তাদের মাইক্রোবাসে করেই নিয়ে যেতে হবে।

তা না হলে মরদেহ বহনকারী মাইক্রো সমিতিকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। এভাবে তারা মরদেহ আটকে রাখেন। পরে বাধ্য হয়ে মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা আরএমপির গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) খবর দেয়। এরপর প্রথমে আব্দুল্লাহ ও রাজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য পাঁচজনকে আটক করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লাশবহনকারী সরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই। এই সুযোগে লাশবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সিণ্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে মৃতব্যক্তির স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এমনকি বাহির থেকে যদি কেউ লাশ বহনকারী গাড়ি নিয়ে আসে সেক্ষেত্রে তারা মৃতব্যক্তির স্বজনদের থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে।

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রামেক হাসপাতালের সামনে ও এর আশেপাশে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স। কোনটি লাশবাহী আবার কোনটি সাধারণ রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স। সিন্ডিকেট চক্র পুরো এলাকাকে অনেকটা অস্থায়ী অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলেছে। এই সিন্ডিকেট চক্রই মৃত ব্যক্তির স্বজন কিংবা রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকা থেকে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা  আশরাফ নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, মাসখানে আগে আমার ভাতিজা এই রামেক হাসপাতালে মারা যায়। লাশ বহণের জন্য এখানকার এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের সাথে কথা বলি। চাঁপাইয়ের শিবগঞ্জে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করে। শেষ পর্য ন্ত ১৩ হাজার টাকা ভাড়া মিটিয়ে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাই।

শুধু আশরাফ নয়, এমন শত শত রোগী কিংবা মৃত ব্যক্তি বহনকারী এসব অ্যাম্বুলেন্স নিজেদের ইচ্ছেমত গলাকাটা ভাড়ায় রোগী কিংবা লাশ বহন করছে।

এ ব্যাপারে রামে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনালের শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমার জানামতে- সরকারি কোনো হাসপাতালে লাশবাহী সরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স থাকে না। তবে লাশবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সিণ্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আমরা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যেই রামেক হাসপাতালের ৮টি গেইটের মধ্যে ৫টিই বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়া বাহিরপথ ও প্রবেশপথ আলাদা করেছি। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স কিংবা রোগী বহণকারী অ্যাম্বুলেন্স সিণ্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ২০-৩০ টি অ্যাম্বুলেন্সকে রামেক হাসপাতাল কর্তৃক বিশেষ স্টিকার দেয়া হবে। শুধু তারাই লাশ কিংবা রোগী বহন করতে পারবে। আর রামেক হাসপাতাল চত্ত্বরে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে। আমরা কিলোমিটার প্রতি ভাড়াও নির্ধারণ করে দেব। যাতে করে অতিরিক্ত ভাড়া কেউ আদায় করতে না পারে।’