মঙ্গলবার , ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১৪ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রাজশাহীতে লাইসেন্স নিয়ে ভোগান্তিতে অটোরিকশা চালকরা

Paris
ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯ ২:০৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
অটোরিকশা চালাই পাঁচ বছর ধইরা। তবে খারাপ চালাই না। কিন্তু কখনো লাইসেন্স করা হয় নাই। এখন সরকার নতুন আইন করছে। এই আইনে অবশ্য লাইসেন্স করতে হবে। তাই আর ঝুঁকি না নিয়া লাইসেন্স করতে আইলাম।
কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী নগর ভবনের সামনে বসে থাকা পিয়াবুল ইসলাম। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে আবেদন করতে আসা ভুক্তভোগীরা অভিযোগ তুলেছেন কাউন্টারে থাকা স্টাফদের ওপর।  অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের আবেদন করতে দেওয়া হচ্ছে না। অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে অসদাচারণ ও হয়রানি করারও অভিযোগ উঠেছে। এদিকে কিছু লোক কমিশন নিয়ে লাইসেন্স করে দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে এমনও অভিযোগ করছেন তারা।
শুধু তিনিই নন লাইসেন্স আবেদনের জন্য এখানে বসে থাকা অনেক ভুক্তভোগীরও অভিযোগ সেগুলো। তবে তারা অভিযোগ করে বলেন, এমন করলে কেমনে হবে, আমরা বউ বাচ্চারে কি খাওয়ামু। রাস্তায় রিকশা নিয়ে নামলেই তো মামলা দিয়ে দিবে ট্রাফিক পুলিশ। আমরা যদি গাড়ির লাইসেন্স না পাই তাহলে কি করে পেট চালাবো, আর কতদিন বসে থাকবো। কাদের নামে একজন বলছিলেন, আমরা ৪০০-৫০০ জন ভুক্তভোগী সকাল থেকে এসে বসে আছি সন্ধ্যা পর্যর্ন্ত আবেদন করার জন্য। কিন্তু, অফিসে গেলে বলছে আর নেয়া হবে না, টার্গেট শেষ হয়ে গেছে।
এখানে আবেদন জমা দিতে আসা চালক নজির হাসান তিনিও অনেক আক্ষেপ নিয়ে বলছিলেন, যদি আমাদের লাইসেন্স না থাকে আমরা কি তাহলে না খেয়ে মরে যাবো, এভবে আর কতদিন? আমাদের দিকে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ কোনো নজর দিচ্ছে না কেন। আমরা যে প্রতিদিন এখানে এসে বসে থাকছি, লাইনে দাঁড়িয়ে পা-হাতে পড়ছি এদিকে কেন কারো চোখ পড়ছে না।
এসময় তার কথার সুর ধরেই পবা থেকে আসা আরেক রিকশাচালক আলী বলে উঠলেন, ১০ বছর ধইরা ভুয়া লাইসেন্স দিয়া চলতাছি। নতুন আইন নিয়া এখন সরকার খুবই কঠিন। সেজন্য ভুয়া বাদ দিয়া আসলটাই করার জন্য আইলাম।
নগর ভবনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তারা বলেন, প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের জটলা লেগে থাকছে সেখানে।  সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, বিকালে অফিস সময় পেরিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্লান্তহীন সেবা দিতে হচ্ছে তাদের। এমন বাড়তি চাপে হিমশিম খেলেও বিষয়টিকে বেশ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে নগর ভবন কর্তৃপক্ষ। তবে আমরা সবাইকে সবোর্চ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
তবে অটোরিকশা চালকরা বলেন, এসব ভুয়া। আমাদের যদি না দিবে আবেদন করার সুযোগ, তাহলে কেন নিয়োগ করা হয়েছিলো যে, আমরা নতুনভাবে আবার লাইসেন্স পাবো।
একজন বলেন, লাইসেন্স কিংবা ফিটনেস সনদ না থাকলে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা পর্যন্ত জরিমানার মামলা দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ । আমরা সারাদিনে আয় করি ৫০০-৬০০ টাকা। তাহলে কেমনে আমরা জরিমানা দিমু এতো টাকা।
সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তারা জানান,  লাইসেন্সের আবেদন পড়েছে মোট দশ হাজার। এটার কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। তবে এখনো অনেক লোক ভিড় করছে নগর ভবনের সামনে। আমরা তাদের বললে বুঝার চেষ্টা করে না, এটা আর আমাদের হাতে নাই। তাই করার কিছু নাই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলিফ, নজরুল পিয়াবুল নাট্টুসহ আরো অনেকেই বসে আছেন আবেদন করার জন্য। তবে তাদেরকে লাইসেন্স করতে দেয়া হচ্ছ না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী অটোচালকদের। তারা মনে করছেন, এসব কারসাজি তাদেরকে লাইসেন্স না দেওয়া অনথা কারো কাছে বেশি টাকা দিয়ে করিয়ে নেওয়ার জন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে কিছু কিছু কর্মকর্তা আছেন; যারা বেশি টাকার জন্য অনেক আবেদন জমা নেননি। তাই এমন টা হচ্ছে। গরীব অসহায় মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। প্রতিদিন কাজে না গিয়ে তাদেরকে ঘুরাঘুরি করতে হচ্ছে। গোপনে নিচ্ছেন অতিরিক্ত টাকা, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন লাইসেন্স করে দেওয়ার।
ভুক্তভোগী জমির মিয়া বলেন, আমার বাসায় অসুস্থ বউ। দুই মেয়ে কলেজে পড়ে। আমি তাদের কিভাবে ভরণপোষণ করাবো। আমার সবটাই তো অটোরিকশা চালিয়ে করি। এভাবে আর কত দিন চলা যাবে। বউ টা কেমনে ওষুধ কিনবো।
স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর