রাজশাহীতে মাদক অপরাধ দমনে করণীয় নির্ধারণ সভা


নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে ‘মাদক অপরাধ দমনে করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার(১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুস সবুর মন্ডল। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।

জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এ সভার আয়োজন করে। সভায় জেলা প্রশাসন, কারাগার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র‌্যাব এবং জেলা ও নগর পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজশাহীর সকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সব পৌরসভার মেয়র, আইনজীবী, সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

সভায় চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত মাদকের বিরুদ্ধে চলা অভিযানের হিসাব তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ১ হাজার ৮১টি অভিযান চালিয়ে ৩৯৯টি মামলা করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪১৩ জনকে। মাদকবিরোধী টাস্কফোর্স অভিযান চলেছে ৬০টি। ৩৮টি মামলায় ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাজশাহী জেলা পুলিশ ২ হাজার ৮৪টি অভিযান চালিয়ে ৮৬৫টি মামলা করেছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১ হাজার ২৭৩ জন। রাজশাহী মহানগর পুলিশ ৭ হাজার ৮৪৫টি অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। র‌্যাব-৫ ১৮৭টি অভিযান চালিয়ে আসামি করেছে ২৭৬ জনকে। আর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ১৩ হাজার ২২০টি অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে মাত্র ১৩ জনকে। বিজিবি ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মোট ২৩৭টি। মাদকবিরোধী টাস্কফোর্স ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য সব বাহিনীর চেয়ে মাদক উদ্ধারেও পিছিয়ে বিজিবি। অথচ অন্যান্য সবার চেয়ে বিজিবি অভিযান বেশি চালিয়েছে বলে জানিয়েছে।

এ বিষয়টি উল্লেখ করে সীমান্তবর্তী বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, ‘সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিজিবির। বিজিবি মাঝে মাঝে কিছু মাদক উদ্ধার করে, আসামি ধরতে পারে না। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভাতেও এ বিষয়টি বলেছি। তাই বিজিবির যদি আরও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটা যেন করা হয়।’

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সীমান্ত দিয়েই সবচেয়ে বেশি ভারতীয় হেরোইন ঢোকে দেশে। এটি অত্যন্ত মাদকপ্রবণ এলাকা হিসেবেই পরিচিত। এ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমেরও একই বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মার ওপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা। সেখান দিয়ে হেরোইন ঢুকে গোদাগাড়ী দিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া আছে। কিন্তু হেরোইন আসছে। বিজিবি যদি ইচ্ছা করে, একটা পাখিও আসতে পারবে না। মাদক তো দূরের কথা। তাই আমার একটাই পরামর্শ- এই প্রবেশদ্বারই আগে বন্ধ করতে হবে।’

বিজিবির মাদক উদ্ধার কম এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আসামি না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে স্থানীয় সাংবাদিক রাজু আহমেদ বলেন, ‘প্রচুর অভিযান চলেছে, বিজিবি লিখে দিয়েছে। কিন্তু আসামি নেই। সীমান্তটা আসলে সেভাবে দেখা হয় না, যেভাবে দরকার। সেটিই বেশি করে দেখা দরকার।’ অন্যান্য বক্তারা মাদক নির্মুল করতে সর্ষের ভেতর ভূত তাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান।

সভায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, মাদক ঠেকানোর দায়িত্ব শুধু বিজিবির একার নয়। আমাদের সবার দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছেন। জিরো টলারেন্স জিরো টলারেন্সই আছে। আমরাও সবাই নিজ নিজ চেয়ারেই বসে আছি। মাদকও মাদকের মতো আছে। তাহলে হলো না। মাদক নির্মুলের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদেরও সর্বাত্মক ভূমিকা রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের সহায়তা দেবে।

সভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- সমাজসেবী শাহীন আক্তার রেণী, স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী, সোনার দেশ সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক জাহিদী, বাঘা পৌরসভার মেয়র আবদুর রাজ্জাক, কেশরহাট পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ, মোহনপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, কাটাখালী পৌর মেয়র আব্বাস আলী প্রমুখ।

জেএ/এফ