রাজশাহীতে বিদেশফেরতদের বাড়িতে পতাকা টাঙিয়েই দায়িত্ব শেষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পর্তুগাল থেকে গত ১৫ মার্চ দেশে ফেরেন বাগমারার এক তরুণ। এর পর থেকে তিনি প্রশাসনের নির্দেশে এবং নিজের ইচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। গ্রামে ফেরার পরেই পুলিশ গিয়ে ওই ছাত্রের বাড়িতে একটি লাল পতাকা টাঙিয়ে দিয়ে আসে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত একজন স্বাস্থ্যকর্মীও তাঁর কোনো খোঁজখবর নেননি। যদিও গতকাল তাঁর হোম কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে নিজের ও সমাজের কথা চিন্তা করে তিনি আরো দুই দিন বাসা থেকে বের হবেন না বলে জানিয়েছেন।

গতকাল তিনি জানান, পুলিশ দুপুরে গিয়ে তাঁর বাড়িতে লাগানো লাল পতাকাটি খুলে নিয়ে এসেছে। তিনি সুস্থ আছেন নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এই নিয়ে এই কয়দিনে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী খোঁজ নেননি। এর বাইরে হোম কোয়ারেন্টিনের আর কোনো পদক্ষেপ আছে কি না সেটি নিয়েও কেউ কোনো পরমার্শ দেয়নি। তবে নিজে থেকে তিনি বাড়ির আর কোনো সদস্যদের সঙ্গে মেশেননি। ছিলেন একাই একটি আলাদা কক্ষে।

এদিকে ভারত থেকে দেশে ফেরা আল আমিন রিংকুর হাতে কোয়ারেন্টিনের যে সিল বিমানবন্দরে মেরে দেওয়া হয়েছিল সেটি পরের দিনই উঠে যায়। কিন্তু তিনিও এখনো কোয়ারেন্টিন মেনে চলছেন এখনো। তবে এই দুজনের বাইরে আরো শত শত বিদেশফেরত প্রবাসী ঢুকেছেন রাজশাহীতে। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ২০০।

ফলে তাঁরা বাড়ির বাইরে ঘোরাফেরা করেছেন। এর মধ্যে নগরীর ৮০৯ জনের মধ্যে ২৭ জনের কোনো ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তবে যাঁদের ঠিকানা পাওয়া গেছে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে কোয়ারেন্টিনের সাইনবোর্ড ও লাল পতাকা টাঙিয়ে দিয়ে এসেছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের বাইরে আর কোনো সংস্থা বিদেশফেরতদের নিয়ে কাজ করেছে বলে কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

আর এই সুযোগে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনের মতো দায়িত্ববান কর্মকর্তা হয়েও তিনি কোয়ারেন্টিন না মেনে গত ১৬ ও ১৭ মার্চ দিব্যি একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই কর্মকর্তা হোম কোয়ারেন্টিনে যেতে বাধ্য হন প্রশাসনের চাপে। এর আগে গত ১১ মার্চ কানাডা থেকে দেশে ফেরেন তিনি।

সূত্র মতে, শুধু এই কর্মকর্তা নন, তাঁর মতো আরো অনেকে বিদেশ থেকে ফিরে হোম কোয়ারেন্টিন মানেননি। আর এ কারণে ওই সময় (গত ২১ মার্চ) রাজশাহীতে ব্যাপক হারে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোপেন্দ্রনাথ আচার্য।

ওই দিন তিনি বলেন, ‘খুব ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের। দ্রুত লকডাউন করে দেওয়া উচিত রাজশাহীকে। না হলে এর প্রভাব আমরা সামাল দিতে হয়তো পারব না।’ তবে শেষ পর্যন্ত লকডাউন করা না হলেও দেশজুড়ে জনগণের চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ জারি করায় কিছুটা হলেও এখন স্বস্তি ফিরে এসেছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মাঝে।

গতকাল গোপেন্দ্রনাথ আচার্য বলেন, ‘যেহেতু আমরা বিদেশ ফেরতদের আটকাতে পারিনি। এখন ঘরের মধ্যে অন্তত আটকানো গেছে। এটাই আমাদের মাঝে স্বস্তি দিচ্ছে। না হলে দ্রুত হয়তো সামাজিক পর্যায়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল।’ বিদেশফেরতদের খোঁজখবর রাখার মতো জনবল স্বাস্থ্য বিভাগে নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এই কাজটি স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড সদস্য, কাউন্সিলর, গ্রাম পুলিশ দিয়ে প্রথম থেকেই করতে পারলে ভালো হতো।’

স/আর

Comments are closed.