রাজশাহীতে ১০.৪১ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ

আমদানী নির্ভর রাজশাহীর ফুলের বাজার

শাহিনুল আশিক:


রাজশাহীতে বেড়েছে সব ধরনের ফুলের দাম। দুই থেকে তিনগুন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ফুল। বর্ষায় উৎপাদন ও সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন- এবছর ফুলের সর্বোচ্চ দাম পেয়েছেন চাষিরা। এর আগে এতো দামে কখনো ফুল বিক্রি হয়নি। যশোর মোকামেই (আড়ৎ) বেশি দামে ফুল কেনা-বেচা হচ্ছে।’



সংশ্লিষ্টরা বলছেন- গতবছর করোনার কারণে ফুলচাষিদের লাখ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। যার সিংহভাগ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহনের অভাবে বাজারজাত করা সম্ভব হয়নি। এবছর করোনা ও লকডাউনের কথা ভেবে ফুলচাষে ঝুঁকি নেয়নি অনেক চাষি। আর বর্ষা মৌসুমে ফুল উৎপাদন কম হয়। ফুল উৎপাদন কম ও বর্ষা দুই মিলেই ফুলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে এবছর ফুলের দামে রেকর্ড হয়েছে। তবে দাম বেশি পাওয়ায় খুশি চাষিরা।

রাজশাহীর ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানির উপরে নির্ভর করে রাজশাহীর ফুলের ব্যবসা। ফুলের সিংহভাগ সরবরাহ আসে যশোর থেকে। যদিও রাজশাহীর পবার খরখড়ি ও দারুশার কিছু কিছু এলাকায় বাণিজ্যকভাবে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ফুলের। তবে এই ফুলে মেটেনা চাহিদা।

পবার দারুশার ফুল চাষী জনি ইসলাম জানান, ‘দুই বছর থেকে ফুলের চাষ করছি। ১০ কাঠা জমিতে গোলাপ ও ৫ কাঠা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছি। বর্তমানে প্রতিদিন রাজশাহীর বাজারে ১ হাজার থেকে ১২শো টাকার ফুল বিক্রি করি। আগামিতে ফুলের চাষ বাড়াবো।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা উম্মে সালমা জানান, ‘প্রতিবছর অল্প পরিসরে হলেও বাড়ছে ফুলের চাষ। এবছর রাজশাহী জেলায় ১০ দশমিক ৪১ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। জেলায় রজনীগন্ধা, গাঁদা, জারবেরাসহ কয়েক ধরনের ফুলের চাষ হয়।’

যদিও তিনি মানেন এই পরিমাণ উৎপাদনে রাজশাহীতে চাহিদার অল্পই মেটানো সম্ভব হয়। তিনি বলেন, রাজশাহীতে চাহিদার বড় যোগানটুকুই আসে যশোর থেকে।

জানা গেছে- রাজশাহী নগরীর সাহেববাজারে ১০টি ও নিউ মার্কেটে একটি দোকানে ফুল বিক্রি হয়। দোকানগুলো থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুল সরবরাহ করা হয়। অনেকেই আবার কিনে নেন প্রয়োজন মতো।

এসব দোকানে কাজ করেন অন্তত ৪০ জন মানুষ। ফুল বিক্রি করে এসব মানুষের চলে জীবিকা। দোকানগুলোতে অর্ডার পাওয়া যায়- রিসিপশন তোড়া, বিয়ের মালা, বাসর ঘর সাজানো মালা ও ফুল, জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছাড়াও মৃত মানুষের সৎকারের কাজে ব্যবহারের বিভিন্ন ফুল। এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে ফুলের চাহিদা থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন- যশোর জেলার চুয়াডাঙ্গা, কালীগঞ্জ ও গদখালী থেকে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিউলাস ফুল কিনে আনেন। এই কয়েক ধরনের ফুলের ব্যবসা চলে সারা বছর।

নগরের সাহেববাজারের ‘মিলন ফুল ঘর’-এর বিক্রেতা শ্রী গণেষ রায় জানান- ‘যশোর থেকে ফুল কিনি। ফুলের দাম মোকামে (আড়ৎ) বেড়েছে দুই থেকে তিনগুন। তাই রাজশাহীর বাজারের চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ফুল। তিনি জানান- দেড় মাস আগে রাজশাহী একটি রজনীগন্ধা ফুল বিক্রি হয়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে- ২০ থেকে ২৫ টাকায়। কারণ মোকামে (আড়ৎ) এই রজনীগন্ধ ফুল কিনতে হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা দরে।

বর্তমানে মোকামে একটি গোলাপের দাম ৪ থেকে ৫ টাকা। এটি রাজশাহীতে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। দেড় মাস আগে মোকামে দাম ছিল ২ থেকে আড়াই টাকা। এছাড়া জারবেরা মোকামে ১৫ থেকে ১৬ টাকা প্রতিটির দাম। এই ফুল রাজশাহীতে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। আর দেড়মাস আগে মোকামে দাম ছিল ৮ থেকে ১০ টাকা। গ্লাডিউলাস রাজশাহীতে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে। মোকামে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। আর এই ফুলের দাম দেড়মাস আগে ছিলো ১২ থেকে ১৫ টাকা।

রাজশাহীর সাহেববাজারের ‘জনি ফুল হাউস’-এর ব্যবসায়ী মো. জনি জানান- বাগানে ফুল নেই। করোনাকালীন ফুল বিক্রির অভাবে অনেক চাষি লোকসান হয়েছে। তাই তারা বাগানের যতœ নিতে পারেন নি। তাই ফুলের চাষও কম হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এবছর মোকাম থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ফুল। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম চাইলে ক্রেতারা চলে যাচ্ছেন। বেশি দাম হওয়ায় আবার অনেকেই প্রয়োজনের তুলনায় কম ফুল কিনছেন।

যশোরের গদখালীর ফুল ব্যবসায়ী ও চাষি মো. আব্দুল্লাহ জানান, ‘এবছর সর্বোচ্চ ফুলের দাম। এমন দামে এর আগে কখনই ফুল বিক্রি হয়নি। এতে চাষিরা খুশি।’

তিনি জানান, ‘করোনার লকডাউনের কারণে ফুল বিক্রি করতে পারিনি। তখন হাজার হাজার টাকার লোকসান হয়েছে। এই কারণে অনেকেই ফুলের চাষ করেন নি। এবছর আমি (আব্দুল্লাহ) দুই বিঘা জমিতে রজনীগন্ধার ও গাঁদা ফুলের চাষ করেছি। আর ৩৩ শতাংশ জমিতে গ্লাডিউলাস ফুলের চাষ করেছি।’

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাহিদুল আমিন জানান- ‘করোনার কারণে পরিবহন সঙ্কটে কমেছে ফুলের চাষ। যশোরে এবছর ৭১৩ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এখানে ৮ থেকে ১০ ধরনের ফুলের চাষ বেশি হয়। ধারণা করা হচ্ছে- করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। আগামী শীত মৌসুমে ফুলের চাষ বাড়বে।’

স/আ