রাজশাহীতে প্রতারক প্রেমিক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক:


পরিচয়টা ফেসবুকে। দিনে দিনে বাড়তে থাকে ঘনিষ্টতা। সেই ঘনিষ্ঠতা রূপ নেয় প্রেমে। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক আপদ-বিপদে চলার সাহস জোগায়। একসঙ্গে পথ চলায় ভাব বিনিময়ের সাথে অর্থও লেনদেন হয়েছে। তবে সেই লেনদেন একপাক্ষিক। শুধু নিয়ে গেছে প্রেমিক ওয়াদুদ জিয়া জুয়েল (৩০)। দীর্ঘ সময়ে কয়েকদফায় হাতিয়ে নিয়েছেন সাড়ে সাত লাখ টাকা।

এখানেই শেষ নয়- টাকা চাওয়ার কৌশল বেশ অভিনব ছিলো জুয়েলের। প্রেমিকা সিমার (ছদ্মনাম) কাছে জুয়েল কখন প্রেমিক, কখননো প্রেমিকার বড় বোন, কখনো জুয়েলের বন্ধু। এই জুয়েল আবার কখন মৃত। একটি মানুষ এতোগুলো চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিপুনভাবে। তার সবই করতে নিজের ৯টি ফেসবুক আইডি থেকে। ফেসবুক আইডিগুলো বিভিন্ন নামে খোলা ছিলো জুয়েলের।

এই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। গ্রেফতারকৃত জুয়েল- দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার বাঘাডুবি ভবানীপুর গ্রামের জাকারিয়া আনসারীর ছেলে এম ওয়াদুদ জিয়া জুয়েল (৩০)। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিবিএ  এবং এমবিএ  সম্পন্ন করেছে।

এনিয়ে বুধবার (১৩ অক্টোবর) রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায়- পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। এর আগে বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় ডিবি পুলিশের ঐ টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বোয়ালিয়া মডেল থানার মকবুল হালদার মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক জুয়েলকে (৩০) আটক করে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- ২০১৯ সালের দিকে সিমার (ছদ্মনাম) সাথে আমিনুল ইসলাম (জুয়েল) নামের এক যুবকের ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ হলেও তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়নি।



আসামী জুয়েল ভুক্তভোগী সিমার (ছদ্মনাম) প্রেমিকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে নিজেই প্রেমিক সেজে সিমার সাথে প্রেমের অভিনয় শুরু করে। তার কিছুদিন পরে প্রতারক জুয়েল আরো একটি ভূয়া ফেসবুক আইডি খুলে নিজেকে সিমার প্রেমিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পরিচয় দিয়ে প্রেমিকের সাথে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সিমার বাসায় যায়। সেখানে নিজের ল্যাপটপ হারানোর অজুহাত দেখিয়ে তার মায়ের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার চেক নেয়।

পুনরায় জুয়েল আরেকটি আইডি থেকে সিমাকে মেসেঞ্জারে বলে তোমার প্রেমিক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে তার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করে। এদিকে সিমা ও তার পরিবার আমিনুলের সাথে দেখা করার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলে আসামী জুয়েল সিমাকে জানায় আমিনুল মারা গেছে, আসার প্রয়োজন নেই। আমরা লাশ নিয়ে আমিনুলের গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।

এর কিছুদিন পরে প্রতারক জুয়েল আরো একটি ভুয়া আইডি খুলে আমিনুলের বোন পরিচয় দিয়ে সিমার সাথে যোগাযোগ করে। তার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য তিন লাখ টাকা ব্যয় করায় সিমাকে ধন্যবাদ জানায়। টাকা ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরবর্তীতে আসামী জুয়েল আমিনুলের বোন পরিচয়ে সিমার সাথে যোগাযোগ করতে থাকে এবং একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলে। চাকুরির জন্য ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে সিমাকে জানায়। তিন লাখ টাকা আমিনুলের পরিবারের পক্ষ থেকে দিবে অবশিষ্ট চার লাখ টাকা সিমাকে দিতে বলে। তার কথামত সিমা চাকুরির আশায় ৪ লাখ টাকা প্রদান করে। টাকা গ্রহণ করার পরে আসামী জুয়েল তার ব্যবহৃত ভূয়া তিনটি আইডি বন্ধ করে সিমার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আসামীর ব্যবহৃত তিনটি আইডি আলাদা আলাদা নামে হলেও সে নিজেই তিনটি চরিত্রে অভিনয় করে সিমার সাথে বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা করে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

ভুক্তভোগী সিমা ও তার পরিবার বিষয়টি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিককে মৌখিক ভাবে অভিযোগ করলে আসামী গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপ-পুলিশ কমিশনারকে (ডিবি) নির্দেশ দেন।

ভুয়া ফেসবুক আইডিগুলো পর্যালোচনা করে আসামী সনাক্তে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে (১৩ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় ডিবি পুলিশের ঐ টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বোয়ালিয়া মডেল থানার মকবুল হালদার মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক জুয়েলকে (৩০) আটক করে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং সে আরো জানায় তার ৯টি ভুয়া ফেসবুক আইডি আছে। সিমার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত টাকা দিয়ে সে নিজ গ্রামে একটি গরুর খামার দিয়েছেন এবং জমি ক্রয় করে। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

স/আ