রাজশাহীতে পুকুর-জলাশয় রক্ষায় বেলা’র আলোচনা সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র আয়োজনে আজ বুধবার রাজশাহী নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে ‘অস্তিত্ব সংকটে রাজশাহী নগরীর পুকুর/জলাশয়: পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) রাজশাহী জেলার সভাপতি এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. দীপকেন্দ্র নাথ দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. রেদওয়ানুর রহমান, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. মশিউর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলা’র রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, রাজশাহী অতি প্রাচীন এবং দেশের উল্লেখযোগ্য একটি বিভাগীয় শহর। রেশম, শিক্ষা এবং চিকিৎসা নগরী হিসাবেও রাজশাহী সুপরিচিত। রাজশাহী একটি পরিচ্ছন্ন নগরী হিসাবে দেশ-বিদেশে পরিচিতি পেয়েছে। পুকুরের নগরী হিসাবেও একসময় এই নগরীর পরিচিতি ছিল। নগরবাসী সেসব পুকুরের পানি প্রাত্যহিক কাজে ব্যবহার করতেন। এমনকি রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ‘সোনাদীঘি’ নামক পুকুরের পানি নগরবাসী পান করতো বলে জানা যায়।

স্বাধীনতা উত্তর এই নগরীতে কয়েক হাজার পুকুর ছিল। ২০১৪ সালের বোয়ালিয়া ভূমি অফিসের এক তথ্যে দেখা যায়, নগরীতে প্রায় এক হাজারের মতো পুকুর অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু বর্তমানে পুকুরের সংখ্যা ২০০ এর নিচে নেমে গেছে। গত কয়েক দশকে বিশেষ করে গত পনেরো বছরে নগরীর অধিকাংশ পুকুরই ভরাট করা হয়েছে। কখনো প্রকাশ্যে, আবার কখনো রাতের অন্ধকারে এই শহরের পুকুরগুলো একের পর এক ভরাট হয়ে চলেছে। পুকুর ভরাট করে সেখানে বাণিজ্যিক ভবন, অট্টালিকা বানানো হয়েছে এবং সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে, বিগত কয়েক দশকে নগরীর প্রায় ৯৭ ভাগ পুকুর/জলাশয় ভরাট করা হয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্বন সংরক্ষণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষায় পুকুর/জলাশয়ের অবদান অনস্বীকার্য।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) প্রণিত ‘রাজশাহী মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাণ (২০০৪-২০২৪)’ এ নগরীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুকুরকে সংরক্ষণযোগ্য হিসাবে উল্লেখ করা হলেও পুকুর ভরাট রোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে কোনো ধরণের অনুমতির তোয়াক্কা না করে কতিপয় ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান নগরীর পুকুরগলো একের পর এক ভরাট করে চলেছে, যেন দেখার কেউ নাই। এমনকি, নগরীর কোথাও বড় ধরণের অগ্নিকান্ড ঘটলে তা নির্বাপণের জন্য জলাশয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যথেচ্ছভাবে পুকুর/জলাশয় ভরাট করায় দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নগরীর পরিবেশ। ফলে অতি গরম এবং অধিক শীতের কারণে ধীরে ধীরে নগরীর আবহাওয়া এবং স্বাভাবিক পরিবেশের মারাত্মক ব্যত্যয় ঘটছে।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে গেলে পরিবেশের ক্ষতি হবেই। কিন্তু উন্নয়ন করতে গিয়ে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তার দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করতে হবে। অর্থাৎ উন্নয়নের সময় পরিবেশগত প্রভাব নিরুপণ করতে হবে এবং তা প্রশমনের চিন্তাও আমাদের করতে হবে। তাছাড়া উন্নয়ন টেকসই হবে না। রাজশাহী নগরীর পুকুর ভরাট রোধে আমরা কাজ করছি। ‘বেলা’ এবং আপনারা সবাই সংশ্লিষ্টদের প্রতি একটা চাপ তৈরি করতে পারলে আমাদের সেই কাজ আরও গতি পাবে এবং আগামীতে এই নগরীর পুকুর ভরাট বন্ধে তা সহায়ক হবে।

আলোচনা সভায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আইনজীবী, সাংবাদিক, নারী উদ্যোক্তা, এনজিওি প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় অর্ধ-শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীরা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পুকুরসহ সকল ধরণের জলাশয় ভরাটের কার্যক্রম বন্ধকরণ এবং ভরাটকৃত পুকুর/জলাশয়গুলো পূনরুদ্ধার করে তা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।

স/আর