রাজশাহীতে তীব্র শীতে বোরো বীজতোলার ক্ষতি


নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে বোরোর ধান চাষের জন্য কৃষকরা এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন। কেউ এরই মধ্যে জমিতে ধানের চারা রোপন করতেও শুরু করেছেন, তো কেউ জমি প্রস্তুতকাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউ এখনো বীজ তলার পরিচর্যায় ব্যস্ত। গত কয়েকদিনের তীব্র শীত মাজারি কুয়াশায় বীজতলার ক্ষতিও হয়েছে কোনো কোনো কৃষকের। ফলে ধানের চারা রক্ষায় অনেকেই স্প্রে করছেন। তবে কৃষি অফিস বলছে শীতে বীজ তলার তেমন ক্ষতি হবে না। কারণ বীজ তলার ওপরে পলিথিন দিয়ে ঢাঁকা থাকে। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলে অধিকাংশ কৃষক এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরী করেন না। এতে করে শীতে খোলা আকাশের নিচে যেসব বীজতলা রয়েছে, সেগুলো ক্ষতিরমুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। আবার যারা এরই মধ্যে জমিতে ধানে বীজন রোপন করেছেন, সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু জমিতে তীব্র শীতের পচন ধরছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে ছালমা জানান, এ বছর রাজশাহীতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬ হাজার ১৪০ হেক্টর। এর জন্য বীজ তোলার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৭৩ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৯২৯ হেক্টর জমিতে ধান রোপন হয়েছে। বাকি জমিতে ধানচাষের জন্য প্রস্তুত চলছে। তবে তীব্র শীতের কারণে গত কয়েকদিনে ধানের চারা রোপনের পরিমাণ কমে গেছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কুয়াশার কারণে বীজতোলার তেমন ক্ষতি হবে না। পলিথিন দিয়ে বীজতলা কৃষকরা ঢেঁকে রাখেন। তাই কুয়াশা ও শীতের কারণে বীজতলার কোন ক্ষতি হয়নি।

রাজশাহীর পবার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কুয়াশা আর শীতের ভয়ে ধানের চারা জমিতে রোপন করতে সাহস পটাচ্ছি না। আবার জমিতে থাকা চারা (বীজতলা) শীত আর কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চারা হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে। চারা রক্ষায় কীটনাশক স্প্রে করছি। কিন্তু তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। চারা মরতে শুরু করলে রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

দুর্গাপুরের কৃষক জাবের আলী বলেন, এরই মধ্যে কিছু জমিতে ধান লাগিয়েছি। এবার ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগাবো। কিন্তু শীতের কারণে বীজের ক্ষতি হচ্ছে। এখন চিন্তায় আছি। কুয়াশা শীত না কাটা পর্যন্ত ধানের চারা জমিতে লাগিয়েও কোনো লাভ হবে না। উল্টা চারার গড়া পচে যাবে শীতে। অনেকের এই অবস্থা হয়েছে। এখন ওই সমস্ত জমিতে নতুন করে চারা লাগাতে হবে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তর সূত্র মতে, গত বছর রাজশাহীতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। সেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন ধান। তবে গত বছর এর চেয়ে কিছু পরিমাণ জমিতে ধান চাষ বেশি হয়েছে। গত বছর যে পরিমাণ জমিতে ধানচাষ হয়েছে এবার সেটিকেই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে শীতের দাপট আরও কয়েকদিন থাকলে এবং বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত নাও হতে পারে বলে দাবি করেছেন রাজশাহীর কৃষকরা।