রাজশাহীতে জমজমাট ফাস্টফুডের ব্যবসা,বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি 

জেসমিন আরা ফেরদৌস: 
ভোজন রসিক হিসেবে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে বাঙ্গালির। আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক কিছু বদলে গেলেও খাবারের প্রতি বাঙ্গালির ভালোবাসা রয়েছে ঠিক আগের মতোই৷ আর সে খাবারের মূল্য যদি হয় হাতের নাগালে, তাহলে তো কথাই নেই। মুখরোচক ও দামে কম হওয়াই ক্রমেই রাজশাহীতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ফাস্টফুডের ব্যবসা। প্রতিদিন বিকাল থেকেই শিশু হতে বুড়ো সকল বয়সের মানুষকে ভীড় জমাতে দেখা দেয় এসব দোকানে।
নগরীর নগরভবন মোড়, জিরো পয়েন্ট, আলুপট্টি, উপশহর, ভদ্রা, বন্ধগেট,জিরো পয়েন্ট, লক্ষীপুর, কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামগেটসহ নানা জায়গায় বিকাল হলেই খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা। ফাস্টফুডের কারণে লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকে এই স্থানগুলো।কোন কোন দোকানে বসার জায়গার অভাবে দাড়িয়ে দাড়িয়েও খেতে দেখা যায় অনেককে ৷ বন্ধু, পরিবার ও প্রিয়জনকে নিয়ে অনেকেই চলে আসেন এসব খাবার উপভোগ করতে৷
নানারকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলেও দামে কম হওয়ায় এসব খাবারের প্রতি ঝুঁকছেন অধিকাংশ মানুষ। তবে এসব ক্রেতাদের অধিকাংশই ছাত্র-ছাত্রী।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, চিকেন শিক বার্গার ২৫ টাকা, হালিম ৬০ টাকা, ফুচকা ৫০ টাকা, দই ফুচকা ৭০ টাকা, পানি পুরি ৬০ টাকা, স্যুপ ৪০ টাকা,চটপটি ৪০ টাকা,নুডুলস ৪০ টাকা, ক্রিস্পি চিকেন ৪০ টাকা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ৪০ টাকা, কোল্ড কফি ৫০ টাকা, অরিও শেক ৫০ টাকা,হট কফি ৩০ টাকা।এসব ছাড়াও আরও অনেক রকমের খাবারের দেখা মেলে এসব দোকানে।
দোকানদার রাজু বলেন, প্রতিদিন বিকাল ৪ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত আমার বেচা কেনা চলে। বিগত ৪ বছর যাবত আমি এই ব্যবসায় আছি। প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন ক্রেতা আসেন আমার এখানে।
আরেক দোকানদার নগরীর বিল সিমলা এলাকার মেহেদী। তার কাছে এসব খাবার কতটুকু মানসম্মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এসব খাবারের মেরিনেশনসহ সকল কাজ বাসায় থেকে করে নিয়ে আসি। এখানে এসে শুধুমাত্র জিনিসগুলা ভেজে ক্রেতাদের পরিবেশন করি। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টাকরি খাবারগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে বানানোর। আগে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি ছিলো৷ তবে ইদানীং তা কমে গিয়েছে৷ প্রতিদিন ৪০-৫০ জন ক্রেতা আসেন আমার দোকানে।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসাইন। বন্ধুদের সাথে প্রায়ই ফাস্টফুড খেতে আসেন তিনি।তিনি বলেন,প্রায়ই বন্ধুদের নিয়ে এসব খাবার খাওয়া হয়৷ আজও এসেছি বন্ধুদের সাথেই। এখানের খাবারগুলো তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায় এবং স্বাদও বেশ ভালো। তবে এগুলা খেলেও এক ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকেই যায় আমাদের।
আরেক ক্রেতা মনির আহমেদ । পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন,আমি এখানে ফুচকা কিনতে এসেছি। আমরা প্রায়ই এখানে খেতে আসি৷ তবে খাবারগুলা আসলেই খুব বেশি মান সম্মত হয়না৷ রাস্তার ধারে এসব খাবার বেচা বিক্রির কারণে এসব খাবারে কোন না কোনভাবে ধুলাবালি পড়েই। আমরা তবুও এসব খাচ্ছি কারণ এ খাবারগুলো আমাদের বাসায় বানানো খাবারের চেয়ে বেশি সুস্বাদু লাগে। যার ফলে আমাদের জেনে শুনেই  নিজেদেরকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছি। অনেক ধরণের রোগ ব্যাধি হচ্ছে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য।
এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে কী কী স্বাথ্য ঝুঁকি বাড়ছে-তা জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান চিকিৎসক এফ.এম জাহিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, স্ট্রিটফুড খাওয়ার কারণে সাধারণত ডায়রিয়া,বদহজম,জন্ডিস,আমাশয় এই চার ধরনের রোগী বেশি আসে৷ এছাড়াও এসব খাবার একই পোড়া তেল বারবার ব্যবহার করে ভাজা হয়৷ যার ফলে গ্যস্ট্রিক,আলসার ও হেপাটাইটিস এর মতো মারাত্নক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আবার অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যাচ্ছে। আবার  অল্প বয়সেই অনেকেই ডায়বেটিস এর মতো নীরব ঘাতক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
জেএ/এফ