রাজশাহীতে কোরবানির গরু বিক্রি হচ্ছে ওজনে, অনলাইনে বুকিং

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে ওজনে গরু বিক্রি করছে ‘নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্ম’। নাবিল গ্রুপের ফার্মটিতে কোরবানিকে কেন্দ্র করে ষাঁড় গরু প্রতিপালন করা হয়। এবছর কোরবানির উপযোগী ১৪৩টি ষাড় রয়েছে ফার্মটিতে। কয়েকটি জাতের ষাড়ের মধ্যে পাহাড়ি গয়ালও (গরু) রয়েছে। এই গয়াল অনলাইনে বিক্রি ও বুকিং নেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন- রাজশাহীতে মাংসের চাহিদা পূরণের লক্ষে কাজ করছেন তারা। এছাড়া সারাদেশ থেকে গরু কেনার অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই কোরবানির জন্য গরু কিনেন ইদের আগের দিন ও কোরবানির দিনে সকালেও। তাদের ফার্মের গাড়িতে করে কোরবানির গরু গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে কোরবানির গরু বুকিং ছাড়াও অনলাইনে অর্ডারের সুযোগ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে ফার্ম থেকে। ফার্মে শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান ক্রস, দেশি, গ্রির বা নেপালি জাতের ষাঁড় এবছর কোরবানির জন্য বিক্রি করা হচ্ছে। একেকটি গরুর ওজন ২৪০ থেকে ৬০০ কেজি বা তারও উপরে।

সরেজমিনে গিয়ে রাজশাহীর পবা উপজেলার মাহেন্দ্রায় অবস্থিত নাবা ডেইরি ও ক্যাটল ফার্মে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২১ বিঘা জমির ওপর এ ফার্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতে ১৪০টি ষাড় ও ১৫০টি গাভী পালনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ক্যাটল ফার্মের যাত্রা। এরপর থেকে ক্যাটল ফার্মের বিভিন্ন ক্যাটাগরির গরু পালন শুরু হয়। এখানে ষাড়, গাভী, বকনা, বাছুর ছাড়াও গাড়ল (ভেড়া) লালনপালন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- দেশি জাতের গাভী প্রজননের মাধ্যমে উন্নত জাত তৈরি করাই ছিল ‘নাবা ক্যাটল ফার্মের’ প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু ফার্ম প্রতিষ্ঠার দেড় বছরের মধ্যেই উন্নতজাতের ষাঁড়, গাভী, বকনা ও বাছুর প্রতিপালন করে বেশ লাভবান হচ্ছেন এই ফার্ম কর্র্তৃপক্ষ।

ফার্মটিতে লাইফওয়টে গরুর দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ৫০০ কেজির উপরে একটি গরুর প্রতিকেজি দাম ধরা হচ্ছে ৫৪৯ টাকা। এছাড়া ৪০০ থেকে ৪৯৯ কেজি ওজনের গরুর প্রতিকেজি দাম ধরা হচ্ছে ৫২৯ টাকা, সাড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি ওজনের গরুর প্রতিকেজি দাম ধরা হচ্ছে ৪৯৯ টাকা, ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি ওজনের গরুর প্রতিকেজি দাম ধরা হচ্ছে ৪৯৯ টাকা, ২৭৫ থেকে ২৯৯ কেজি ওজনের গরুর প্রতিকেজির দাম ধরা হচ্ছে ৪৪৯ টাকা এবং ২২৫ থেকে ২৭৪ কেজি ওজনের গরুর প্রতিকেজির দাম ধরা হচ্ছে ৪৪৯ টাকা।

ফার্ম ঘুরে দেখা গেছে- পাহাড়ি গয়াল জাতের গরু রয়েছে পাঁচটি। পরীক্ষামূলকভাবে এই গরুগুলো লালনপালন করা হচ্ছে। সেই গরুগুলোও এবছর কোরবানির উপযোগী। চট্টগ্রামের দিকে এই গরুর চাহিদা বেশি রয়েছে বলে জানানো হয়। এছাড়া কোরবানির উপযোগী ফার্মে ১০টি গাড়ল রয়েছে।

নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্ম’র সিনিয়র অফিসার ডা. সারওয়ার জাহান জানান, ‘রাজশাহী কৃষিনির্ভর এলাকা। নাবিল গ্রুপ কৃষক ও কৃষিপণ্য নিয়ে কাজ করছে। ফার্মে যেহেতু গরু ওজন করে বিক্রি হচ্ছে; তাতে চাহিদা মাফিক গরু কিনতে পারবেন। এখানে সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও মঙ্গলবার দু’দিন গরু জবেহ করে মাংস বিক্রি করা হয়। তবে ক্রেতার নেওয়া মাংসে চর্বি থাকে না। গরুর চর্বি আলাদাভাবে বিক্রি করা হয়। এই ফার্মের গরুর মাংস হোম ডেলিভেরি দেওয়া হয়। তাতে চার্জ নেওয়া হয়না।

তিনি আরো বলেন, কোরবানির এখনও বেশ কিছুদিন বাকি আছে। তবুও অনলাইনে আমাদের ৮টি গরু বিক্রি হয়েছে। কোরবানি ঘনিয়ে আসলে আরো বিক্রি বাড়বে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের ক্রেতা বেশি। এখন অনেকেই এসে গরু দেখে যাচ্ছেন। আমাদের সব গরু বিক্রি হয়ে যায়।’

নাবিল গ্রুপের ফিড মিলের চেয়ারপারসন ও রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ইসরাত জাহান জানান, রাজশাহীতে প্রথম আমাদের ফার্মেই শুধু লাইফ ওয়েটে গরু বিক্রি করা হয়ে থাকে। তাতে ক্রেতারা পরিকল্পনা মাফিক গরু কিনতে পারেন। ফলে ক্রেতার ঠকে (লোকসান) না। এছাড়া আমাদের গরুকে কোনো ধরনের মেডিসিন খাওয়ানো হয় না। সবুজ ঘাস ও ধানের খড় খাওয়ানো হয়।

স/আর