এক হাতে রিকশা চালিয়ে সংগ্রামী জীবনযুদ্ধে প্রতিবন্ধি শহিদুল

আমজাদ হোসেন শিমুল:

শৈশবকাল থেকেই দারিদ্রতার কষাঘাত পিছু ছাড়েনি শহিদুল ইসলামকে (৫০)। এরই মধ্যে ১২ বছর বয়সে জামগাছ থেকে পড়ে গিয়ে বাম হাত হারান তিনি। কিন্তু শহিদুল তারপরেও দমে যাননি। অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কর্ম করেই চালিয়ে যাচ্ছেন সংসার-ধর্ম। এক হাত দিয়েই রাজশাহী শহরের অলি-গলিতে চালাচ্ছেন রিকশা। পেটের দায়ে এভাবেই প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে শহিদুল রাজশাহী শহরে প্রায় ৮ মাস ধরে সংগ্রামী জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর টিকাপাড়া এলাকায় প্রতিবেদকের নজরকারে এই রিকশাচালক। আগ্রহ নিয়ে কথা বলতেই শারীরিকভাবে অক্ষম (প্রতিবন্ধি) শহিদুল প্রতিবেদককে তাঁর সংগ্রামী জীবনের গল্প কাহিনী শোনান।

শহিদুল জানান, ১২ বছর বয়সে জাম নামাতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে বাম হাত ভেঙ্গে যায়। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে ঠিকমত ভাঙ্গা হাতের চিকিৎসা করাতে না পেরে হাতের গোড়ার দিকে ইনফেকশন হয়। শেষ পর্যন্ত পুরো হাতটাই কেটে ফেলতে হয়েছে তাকে। তারপর দীর্ঘদিন বাড়িতেই বেকার জীবন অতিবাহিত করেন শহিদুল। এরপর জীবন-জীবিকার তাগিদে এক হাতেই অন্যের কাজ (কৃষিকাজ) করতে থাকেন। কিন্তু এক হাত দিয়ে খুব বেশি কাজ করতে না পারায় তাকে কেউ কাজেও নিতে চাইতেন না। কোনো উপায় না পেয়ে বছর ছয়েক আগে নিজ এলাকা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শলুয়া গ্রামে চার্জার ভ্যান কিনে চালানো শুরু করেন। কিন্তু করোনাকালে গ্রামে ভ্যান চালিয়ে তার সংসার চলছিলো না। সম্ভব হচ্ছিলো না স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়ে ও বাবা-মায়ের মুখে দুই মুঠো ভাত তুলে দেয়ার। তাই বাধ্য হয়ে অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে একটি রিকশা কিনে এক হাত নিয়ে শহরে চলে আসেন শহিদুল।

এক হাত দিয়ে রিকশা চালাতে কোনো সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মোড় ঘুরাতে অনেক সময় সমস্যা হয়। দুর্ঘটনা পড়ার ভয় মনের মধ্যে সবসময় কাজ করে। কিন্তু কী আর করার! জীবন তো বাঁচাতে হবে। স্ত্রী-সন্তানের মুখে দুই মুঠো ভাত তো তুলে দিতে হবে। শহিদুল বলেন, ‘ জীবনে খেয়ে-না খেয়ে অনেক রাত অতিবাহিত করেছি। কিন্তু কারও কাছে কখনো হাত পাতিনি। কর্ম করেই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। তবে এক হাতে রিকশা চালানো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। সমাজের অনেক বিত্তবান মানুষ আছে। কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি এমন কোনো কাজ আমাকে দেন যাতে আমার জীবন অন্ততপক্ষে নিরাপদ থাকে, সেই কাজ করতে চাই। কিন্তু কেউ দেয় না।’

সমাজে আপনার মত অনেক লোক আছেন যাদের কারও হাত কিংবা পা নেই। কিন্তু তাদের অনেকেই ভিক্ষা-বৃত্তি করে জীবনধারণ করছেন। আপনি কেন সেদিকে না গিয়ে রিকশা চালানোর মত এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যতদিন বেঁচে আছি, কারও দুয়ারে যেন হাত পাততে না হয়। ভিক্ষাবৃত্তির মত নিকৃষ্টতম পেশা আর হয় না। কর্ম করেই জীবনের শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করতে চাই।’

এএইচ/এস