রাজশাহীতে এক সোলারে সেচ, বাড়তি বিদ্যুৎ যাচ্ছে জাতীয় গ্রিডে

নিজস্ব প্রতিবেদক:


এক সোলারে সেচ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এতে করে উৎপাদিত বাড়তি বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। একদিকে স্বল্প খরচে সেচ, অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন দুই মিলে সফলতা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সেলার প্যানেল থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১৯ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপন্ন সম্ভব। এর মধ্যে সেচকাজ লাগে ঘণ্টায় ১১ কিলোওয়াট। বাকিটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নেট মিটারিঙের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে গভীর নলকূপে এমন প্রযুক্তি স্থাপন করেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। সুফল পাওয়ায় আরও দুটি গভীর নলকূপে এই প্রযুক্তির প্রয়োগের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে তারা। এই প্রযুক্তি সম্পন্ন করা গেলে সেচকাজ শেষে জাতীয় গ্রিডে আরও বেশি বিদ্যুৎ যুক্ত করা সম্ভব হবে বলে জানানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী জিন্নুরাইন খান জানান, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি গোদাগাড়ীতে একটি গভীর নলকূপে এই প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়। এতে সফলতার দেখা মিলেছে। এই পর্যন্ত ২৪০ ইউনিট উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। যদিও সেচ সুবিধা চালু ছিলো। আর পুরোপুরি সেচ বন্ধ থাকলে প্রতিদিন ৭০ ইউনিট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। শুধু তাই নয়, সেচ ব্যবস্থা চালু থাকলেও প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৫ ইউনিট বিদ্যুৎ যুক্ত হয় জাতীয় গ্রিডে। আবহাওয়া ভালো থাকলে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ওই এলাকার আব্দুস সালাম ও করিম মিঞা নামের দুই কৃষক জানান, বিদ্যুৎ না থাকলেও সেচের সমস্যা হয় না। এছাড়া এই প্রযুক্তি আমাদের বিদ্যুৎ সমস্যা সমধান করছে এই কারণে- সোলারের নিজের উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে নিজেই চলছে, আবার বাকিটুকু জাতীয় গ্রিডে দিচ্ছে। এতে করে এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের মতো।

গোদাগাড়ীর হাবাসপুর মাঠের গভীর নলকূপে সোলার প্যানেল থেকে এমন সফলতা পেয়েছে বিএমডিএ। রোববার (২১ মার্চ) দুপুরে টেকসই জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সেডা) চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন সরেজমিনে পরিদর্শনে যান।

তার সঙ্গে ছিলেন- বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান খান এবং জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেডের প্রকল্প সমন্বয়ক মোদাব্বির বিন আনাম, তত্বাতাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল হুদা, বিএমডিএ’র নির্বাহী সহ প্রকৌশলী রফিকুল হাসান।

পরিদর্শকরা বিএমডিএ’র এই প্রকল্পটি দেখে অভিভূত হয়ে কর্মকর্তাদের এমন প্রযুক্তি আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, আর যখন সেচ বন্ধ থাকে তখন পুরো বিদ্যুৎ যোগ হয় জাতীয় গ্রিডে। যতক্ষণ আকাশে সূর্য থাকে ততক্ষণই বিদ্যুতের উৎপাদন চলতে থাকে। রাজশাহীতে আরও দুটি গভীর নলকূপে এমন প্রযুক্তি স্থাপনের কাজ চলছে।

বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী জিন্নুরাইন খান আরও জানান, হাবাসপুরের গভীর নলকূপটি থেকে এখন ১০০ বিঘা জমির সেচকাজ চলছে। ধান, গম ও রবিশস্যের সেচের চাহিদা মিটিয়েও গভীর নলকূপটি জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।

তিনি জানান, বিএমডিএ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ ব্যবহার করে গভীর নলকূপ চালায়। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ তারা সোলার প্যানেল থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করছেন সেই পরিমাণ বিদ্যুতের মূল্য তাদের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে দিতে হচ্ছে না। তাই আগামীতে বরেন্দ্র অঞ্চলে আরও বেশি সংখ্যক গভীর নলকূপে সোলার প্যানেল এবং নেট মিটারিং প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে বিএমডিএ’র।

হাবাসপুরের গভীর নলকূপটি পরিদর্শন শেষে বিএমডিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সভায় বিএমডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রশিদ, ড. মো. আবুল কাসেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স/আ