রাজশাহীতে একমাসে ৩৫ জন নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে একমাসে ৩৫ জন নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সোমবার (১ আগস্ট) নারী ও শিশুর উন্নয়নে কাজ করা সংস্থা ‘লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোসাল ওয়েলফেয়ার’ (লফস)-এর প্রোগ্রাম অফিসার চম্পা খাতুনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে লফস জানায়, মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে লফস সংস্থার ডকুমেন্টেশন সেল থেকে রাজশাহীর প্রচারিত দৈনিক পত্রিকার সংবাদের ভিত্তিতে নিয়মিত নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি প্রকাশ করে। লফস মনে করে অঞ্চলে নারী ও শিশু নির্যাতন পরিস্থিতি বিভিন্ন মাত্রায় অবনতি ঘটছে। যৌতুক ও পরকীয়ার কারণে অধিকাংশ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি কিছু টিভি সিরিয়ালও পরকিয়াকে উৎসাহিত করছে। এছাড়াও পারিবারিক কলহ ও প্রেম ঘটিত কারণে হত্যা-আত্মহত্যা ও অমানবিক নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও টিকটক এ আক্রান্ত হয়ে অনেক দূর্ঘটনা ঘটছে। বিষয়গুলো কারও জন্য সুখকর নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে লফস জুলাই মাসের অমানবিক কিছু ঘটে যাওয়া ঘটনার চিত্র তুুলে ধরে। ঘটনাগুলো হলো- তানোর উপজেলায় এক কিশোরী বধূকে ধর্ষণের অভিযোগ, মোহনপুর উপজেলার বাকশিমাইল ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া গ্রামের ছাত্রী সুরাইয়া খাতুর (১৮) নিখোঁজ, বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা ইউনিয়নের আলোকনগর গ্রামের সুরাইয়া আক্তার ফেমি (১২) নিঁখোজ, মহানগরীতে ছুরিকাঘাত করে সানি নামে এক কিশোরকে হত্যা, বাঘা উপজেলার চকছাতারী গ্রামের রাজিবকে (১৫) হত্যা করে পদ্মা নদীকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ, দুর্গাপুর পৌরসভার সিংগা প্রামে মেহেদী হাসান (১৭) নামে এক কিশোরের আত্মহত্যা, পুঠিয়া উপজেলার ভালুকাগাছি ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামে প্রতিবেশী ভাতিজিকে (০৮) যৌন হয়রানির চেষ্টা, পুঠিয়া ইপজেলার খালিশাকুড়ি গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে রাইশা খাতুন (০৫) নামে এক শিশুকে বিষাক্ত খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ, মহানগরীতে কিশোর গ্যাং-এর হামলায় আহত দুই স্কুল ছাত্র, চারঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের গঁওরা গ্রামের কলেজ ছাত্রী রুকসানা খাতুন বর্ষা (১৮)।

মোবাইল ফোন না কিনে না দেওয়ায় আত্মহত্যা, রাজশাহীতে এক শিশুকে (১১) দলবদ্ধ ধর্ষণ করে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার অভিযোগ, রাজশাহীতে ৪ স্কুল ছাত্রীকে যৌন কাজে ব্যবহারের জন্য পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকা নিয়ে যাওয়ায় অভিযোগ, তানোরে এক কলেজ ছাত্রীকে স্মার্ট ফোন কিনে না দেওয়ায় বাবা – মায়ের উপর অভিমান করে আত্মহত্যা, নগরীর লক্ষ্মীপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের হরিজন সম্প্রদায়ের এক ছাত্রী শ্রীমতি নেহা রানী (১৪) কে অশ্লিল ভাষায় গালাগালি ও পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে, নগরীর কেদুর মোড় এলাকায় বখাটের দ্বারা এক গৃহবধূকে অশ্লিল ভাষায় উক্তি ও উত্যক্ত করার অভিযোগ, পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর হাট নতুন পাড়া এলাকায় মোচা. আমেনা বেগম (৫০) নামে এক নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা, পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নে গেরেজান বেগম (৭৫) নামে এক নারীকে গলা কেটে হত্যা, নগরীর মতিহার থানাধীন বামনশিখর উত্তর পাড়া এলাকার গোলেজান বিবিকে (৬৫) গলাকেটে হত্যা।

বাগমারা উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের মীরপুর গ্রামের ঠুনকি বেওয়া (৮০) নামে এক নারীর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা, গেদাগাড়ী উপজেলার পুসুণ্ডা গ্রামের আনসার ভিডিপির এক নারী নিঁখোজ, রাবিতে সামাজিক অনুষদের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রীকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দ্বারা শ্রীলতাহানি ও মারধোরের অভিযোগ, পুঠিয়া উপজেলার কাচুপাড়া এলাকায় শাহীন তার স্ত্রী হাসিনা বেগমকে (৩০) রড দিয়ে পেটানোর পর শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা, মোহনপুর উপজেলার বাটুপাড়া কারিগরি ও বাণিজ্যিক ইনস্টিউটের ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলরিং ট্রেড এর শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই ট্রেডের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ, নগরীর পলিটেকনিক ইনস্টিউটের এক ছাত্রী জনি সুরাইয়া (২০)-এর আত্মহত্যা উল্লেখযোগ্য।

লফস-এর নির্বাহী পরিচালক শাহানাজ পারভীন বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনার বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটে যা প্রকাশিত হয় না বা কোন তথ্য জানা যায় না। এমন বাস্তবতায় রাজশাহীতে নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রকাশিত তথ্য হতাশাজনক। প্রতিনিয়তি বিভিন্ন কৌশলে সারা দেশের মতো রাজশাহী অঞ্চলে নারী – শিশু নির্যাতনসহ সার্বিক ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে ক্রমশই অপরাধীরা উৎসাহিত হবে এবং অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। লফস সকল নারী-শিশু নির্যাতন ঘটনাগুলোর সুষ্ঠ তদন্ত স্বাপেক্ষে অপরাধীর কঠোর শাস্তির দাবী জানান।

জি/আর