রাজশাহীতে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, জেলায় ভয়ংকর রূপে করোনা

উন্মুক্ত খাবারের দোকানে এভাবেই স্বাস্থবিধি উপেক্ষা করে মুখরোচক খাবার খাচ্ছে মানুষ। সোমবার বিকালে নগরীর জিরোপয়েন্টের দৃশ্য

আমজাদ হোসেন শিমুল:

করোনা আক্রান্তের ভয়াবহতার দিক দিয়ে রাজশাহী রেডজোনে। জেলায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজন মারাও গেছে। রাজশাহী জেলায় সোমবার (২৪ জানুয়ারি) নমুনা পরীক্ষার ৫৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এরপরও সাধারণ মানুষের মাঝে নেই সচেতনতা। রাজশাহীজুড়ে সরকারি বিধি-নিষেধ কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা একেবারেই অনুপস্থিতির কারণেই শনাক্তের এই হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

রাজশাহীতে সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- মহানগরীর কোথাও স্বাস্থবিধি মানার বালাই ছিলো না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, গণপরিবহন সকল ক্ষেত্রেই যেন চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। আগের মতই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জনসাধারণকে রাস্তাঘাট, খোলাবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে চলাচল করতে দেখা গেছে। সোমবার নগরীর সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন শপিংমল ও খোলা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে উপচে-পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসময় অনেককেই মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দেখা গেছে। নগরীর খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্টেও নেই কোনো বিধি-নিষেধ মানার প্রবণতা। গণপরিবহন তথা বাসে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের বিধান থাকলেও গতকাল নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল, ভদ্রা বাস টার্মিনালে আসন সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। অনেকের মুখে ছিল না কোনো মাস্ক। শুধু মহানগরীর অভ্যন্তরেই নয়; জেলার বাকি ৯টি উপজেলাতেই একই অবস্থা।

মুখে মাস্ক না পড়েই নিশ্চিন্তে খোশগল্পে মেতেছে তারা। আশেপাশের লোকজনের মুখে নেই মাস্ক। সাহেববাজার এলাকার ছবি

নগরীর ভদ্রা এলাকায় শুভ পরিবহনে আইনুল ইসলাম নামে এক যাত্রী সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাবো বাঘায়। সিট পাইনি তাই দাঁড়িয়ে যাচ্ছি।’ বাসের সুপারভাইজার আলম বলেন, ‘আমার বাসে শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী করব, সব বাসেই তো একই অবস্থা।’

নগরীর কাপরপট্টির একটি দোকানে জটলা। অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। কাপড় কিনতে আসা রুবের নামের একজনের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘শুনলাম, করোনায় আক্রান্ত হলেও নাকি কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাই আর মাস্ক পড়ি না।’ শুধু রুবেল নয়; রাজশাহী শহরের হাজার হাজার মানুষ এভাবেই করোনা সংক্রমণের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে দেদারছে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলাচল করছে।

এদিকে সোমবার রাজশাহীর দুইটি পিসিআর ল্যাবে আরও ৩১৩ জনের শরীরে মিলেছে করোনাভাইরাসের। যার মধ্যে ৩০৪ জনই রাজশাহী জেলার। দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী জেলারই ৫৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই ৩০৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সেই হিসেবে রাজশাহী জেলাতেই নমুনা পরীক্ষার ৫৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে জয়পুরহাটের ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৯ জনের (৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ) দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল জলিল বলেন, ‘জনগণ ধরেই নিয়েছে ওমিক্রনে মানুষ আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগছে না কিংবা মারা যাচ্ছে না। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের মধ্যে বেশ অনীহা তৈরী হয়েছে। কিন্তু জনগণের এমন ধারনা ভুল। কারণ করোনা যেকোনো সময় মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, ‘স্বাস্থবিধি মানার ব্যাপারে জনগণকে সচেতন হতে হবে। তা না হলে শুধু ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে কিংবা তথ্য অধিদপ্তর থেকে মাইকিং করিয়ে কোনো লাভ হবে না। গতকালও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে নিয়মিত মাইকিংও করা হচ্ছে।