রাজশাহীতে অটোরিক্সার বর্ধিত ভাড়ায় অসন্তোষ নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বছরের প্রথম দিন থেকে রাজশাহী মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার ভাড়া বেড়েছে। ফলে নগরীর প্রতিটি রুটে আগের ভাড়ার সঙ্গে তিন টাকা বর্ধিত ভাড়া আদায় করছে অটো চালকেরা। তবে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে অটো ভাড়া পাঁচ টাকাই রাখা হয়।

কিন্তু অটোরিক্সার ৫ টাকা ভাড়ায় সাথে বর্ধিত ভাড়ার তিন টাকা আদায় করা হচ্ছে ঠিকই, তবে এক কিলোমিটারের মধ্যে যে সর্বনিম্ন ৫ টাকা রাখা হয়েছে তা মানা হচ্ছে না। অটোরিক্সার ভাড়া বেড়েছে বলে সেখানোও ৮ টাকা ভাড়া আদায় করছে অনেক অটোরিক্সা চালকেরা বলে যাত্রীদের অভিযোগ।

যাত্রীরা জানান, নিজেদের ইচ্ছেমতো রাজশাহী ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক কল্যাণ সমবায় সমিতি ভাড়া বাড়িয়েছে। করোনার পর সাধারন মানুষের কথা চিন্তা না করেই এই বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে তারা। ফলে বর্ধিত ভাড়ার নামে যেখানে সেখানে ৫টাকার ভাড়া ৮টাকা থেকে১০ টাকাও আদায় করছে অটোরিক্সা চালকেরা। আবার এক কিলোমিটারের মধ্যে ভাড়া ৫টাকা করা হলেও তা মানছে না তারা। ইচ্ছেমতো ৩ যোগ করে ভাড়া আদায় করছেন। আর প্রতিবাদ করতে গেলে খারাপ আচারনও করছেন অনেকে।

এদিকে, রাজশাহীতে অটোরিক্সার বর্ধিত ভাড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন বিবৃতিতে অসন্তোষ করেছে নগরবাসী। এনিয়ে রাজশাহীতে ‘অটো সমিতি’র বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার না করলে অটো বর্জনের দাবিও জানানো হয়েছে।

গত সোমবার (৪ জানুয়ারী) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাধারন মানুষের হয়রানির বিষয় বিবেচনা করে পোষ্টে এ তথ্য জানান রাজশাহীর সিনিয়র সংবাদিক মো: আনিসুজ্জামান।

তিনি তার ফেসবুক স্টাটাসে লিখেন, “রাজশাহীতে ‘অটো সমিতি’র বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার না করলে অটো বর্জন করুন। ৫ টাকার ভাড়া ৬ টাকা হতে পারে, ৮ টাকা হতে পারে না।’

আবার গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহীর আরেক বাসিন্দা ভোগান্তির কথা তুলে ধরে তার পোস্টে লিখেন, “ রাজশাহী শান্তির শহর বলেই আমরা জানতাম কিন্তু হঠাৎ অটোভাড়া বেড়ে যাওয়ায় অটো মালিকেরা মনে হচ্ছে অরাজকতা শুরু করেছে 😡😡 অটো মালিক সমিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি জানতে চাই যে আপনারা ভাড়া বাড়ালে সোজাসোজি বলে দিতেন যে সব স্থানে ভাড়া ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে কিন্তু তা না বলে আপনারা ভাড়ার একটা চার্ট দিয়েছেন। কিন্তু সেটা কি অটো মালিকেরা মানছেন? চার্টে লিখা নর্দান মোড় থেকে সাহেব বাজার ১০ টাকা কিন্তু টিকাপাড়া পার হলেই অথবা সাধুর মোড়ে ১০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে এটা কি ঠিক? আবার লিখা লক্ষিপুর থেকে সাহেব বাজার ৮ টাকা কিন্তু ফায়ার সার্ভিস মোড় অথবা জাদুঘর মোড় সব স্থানেই ৮ টাকা ভাড়া নেয়া হয়েছে এটা কি সঠিক? আজকে সাহেব বাজার থেকে সাধুর মোড়ে এসে আমি একজন অটো মালিককে ৮ টাকা ভাড়া দেওয়ায় সে আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন এবং টাকা ফেলে দিয়ে চলে যান এটা আমার সহজে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।

কারো ভালো না লাগলে পোষ্ট এড়িয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।”

অপরদিকে, ভাড়া সহনীয় মাত্রায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) রাজশাহী কমিটি। গতকাল (৫জানুয়ারি) মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা এই আহ্বান জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সৃস্টির পর থেকে আজ অবধি কোন প্রকার যানবাহনে একত্রে শতকরা ৬০% থেকে ১০০% ভাড়া বাড়ানো হয়নি অথচ রাজশাহী মহানগরীতে হঠাৎ করেই কোন ঘোষণা বা ভোক্তাদের (এক্ষেত্রে যাত্রী) অবগতি বা অবহিত না করেই একলাফে রাজশাহী সহ বিভিন্ন এলাকায় অসহনীয় ভাবে অটোরিকশা বা ইজি বাইকের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে এতে করে যাত্রীদের সাথে ইজিবাইক চালকদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সহনীয় মাত্রায় ভাড়া বাড়ানোর জন্য কনজিউমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব রাজশাহী কমিটি ও উপদেষ্টা (ভোক্তা অভিযোগ)  প্রকোশলী একেএম খাদেমুল ইসলাম ফিকশন সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর রাজশাহী  উপ পরিচালক এর নিকট অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
ক্যাব রাজশাহী জেলা কিমিটির পক্ষ থেকে বলা হয় স্বাধীনতার পর থেকে তথা বাংলাদেশ সৃস্টির পর থেকে লঞ্চ,বাস,ট্রেন কিম্বা এরোপ্লেন বা অন্যান্য যানবাহন সমুহে একসাথে এতো বিপুল পরিমান ভাড়া বাড়েনি। রাজশাহীতে ভাড়া বেড়েছে শতকরা ৬০ ভাগ, যেখানে ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা নেয়া হচ্ছে আর খুলনা মহানগরীতে বেড়েছে শতভাগ যা পত্র পত্রিকার খবরে প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে খুলনা মহানগরীর সচেতন মহল মতে “ইজিবাইক এর ভাড়া বাড়ানোর এখতিয়ার কারো নেই”। ফলে আকস্মিক ভাবে অটোরিকশা বা ইজি বাইকের ভাড়া বাড়ানো সম্পুর্ন অযোক্তিক এবং তা নাগরিক অধিকার পরিপন্থি। অবিলম্বে এই বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সহনীয় মাত্রায় সর্বোচ্চ ২০% ভাড়া বাড়ানোর জন্য আহবান জানিয়েছেন রাজশাহী ক্যাব।

এর আগে, গত ১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক কল্যাণ সমবায় সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে ১ জানুয়ারি থেকে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল। রাজশাহী মহানগর ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক সমবায় সমিতির কার্যালয়ে সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম সাগর এই ঘোষণা দেন।

No photo description available.

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত ১০ বছরে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সিটি করপোরেশনের নিয়মানুযায়ী এখন সব অটোরিক্সার একসঙ্গে সড়কে নামতে পারে না। পালাক্রমে গাড়ি চলাচল করে। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে চালকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ কারণে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে ভাড়া বাড়া অযৌক্তিক বলছেন রাজশাহী নগরবাসী। তারা বলছেন, অটোরিক্সার চলাচল করে সিটি করপোরেশনের লাইসেন্সে। তাই ভাড়া বাড়াতে হলে সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসনেরও মতামত দরকার। অটোরিক্সার চালক-মালিক, সাধারণ যাত্রী, সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ সভায় আলোচনা করেই ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু এসবের কিছুই না করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ইচ্ছে মতো। ফলে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ সভা ছাড়াই এই বর্ধিত ভাড়া অটোরিক্সার ভাড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।