রমজানেও চালু বার, বন্ধ করতে গিয়ে মিলল কোটি টাকার মদ

পবিত্র রমজানে সবধরনের অ্যালকোহল বিক্রির দোকান বন্ধ থাকার নিয়ম থাকলেও কক্সবাজারের পর্যটন মোটেল শৈবাল-সংলগ্ন বারটি দিবা-রাত্রি দিব্যি আরামের সঙ্গে মদের আসর বসিয়ে আসছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে কোটি টাকার অবৈধ মদ জব্দ করা হয়।

রমজান মাসেও অবৈধ মদের কারবারের বিষয়টি নজরে আসে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের। গত ১০ মে রাতে সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে মদ বিকিকিনি দেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে খবর দেয়। কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে বারের রান্নাঘরের মেঝেতে বিশেষ কায়দায় স্টক রাখা মদের বিশাল চালান জব্দ করে।

পরের দিন সকাল পর্যন্ত সিজারলিস্ট করে যথা নিয়মে মামলা হলেও সংবাদ প্রকাশ না করতে মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় দুদিন ধরে সব কিছু চাপা থাকে। অবশেষে মঙ্গলবার (১২ মে) মামলার নথি ও ছবিগুলো প্রকাশ্যে আসে।

ওই ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় মামলা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, রোববার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডলের নেতৃত্বে একটি টিম রাতভর অভিযান চালিয়ে কক্সবাজারের হোটেল শৈবাল লাগোয়া ব্যক্তি পরিচালনার পর্যটন গলফ ক্লাব বার (অপটিমা ট্যুরিজম) থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৩৭৬ দশমিক ২১ লিটার শুল্কবিহীন মদ জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত মদের মাঝে বিলাতি মদ ৬৪১ বোতল (৬২৯ দশমিক ৭৫ লিটার) এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিয়ার ২২৬২ ক্যান। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে বারের ইনচার্জ শামীম উদ্দিনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হলেও অপর সহযোগী মহসিন কৌশলে পালিয়ে যায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) চাঁন মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, আসামিরা বিপুল পরিমাণ অ্যালকোহল (মদ) অবৈধ উপায়ে সংগ্রহপূর্বক ধারণ, অধিকার অথবা দখল, সংরক্ষণ ও গুদামজাত করায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

আসামিরা হলেন- কক্সবাজার পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বাহারছরার মৃত সুরেন্দ্র বড়ুয়ার ছেলে শামীন উদ্দিন (৫৫), অপটিমা ট্যুরিজমের মালিক ও বারের লিজগ্রহীতা ঢাকার গুলশান-১ এর নিকেতন ব্লক-এ, রোড-২ এর ১১৮ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার বাসিন্দা মৃত হাবিবুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে এম এ আউয়াল চৌধুরী ভুলু এবং বারের ম্যানেজার ঢাকার শান্তিনগরের মগবাজার নয়াটোলার ৫২৭/২৭-ই এর বাসিন্দা ফজলুল বারী চৌধুরীর ছেলে শফিউল বারী চৌধুরী। প্রথমজন ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হলেও বাকি আসামিরা পলাতক।

jagonews24

এদিকে, বারের মূলহোতা মহসিন নামে আরও একজন রহস্যজনক কারণে আসামির তালিকা থেকে বাদ গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (কক্সবাজার) সহকারী পরিচালক সৌমেন মন্ডল বলেন, মহসিনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পর্যটন কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন শৈবাল বারটি গত বছর দেড়েক আগে শামীম উদ্দিন ও মহসিনের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট অপটিমা ট্যুরিজমের ব্যানারে লিজ নেয়। এরপর যতসামান্য মদ বৈধ উপায়ে কেনা হলেও রাজস্ব ফাঁকি দিতে অবৈধ মদের বিশাল মজুত গড়ে তোলেন তারা। তারা এসব মদ হোটেল-মোটেল জোনের বৈধ-অবৈধ বিভিন্ন বারে সরবরাহ করে আসছিল। চোরাইপথে সংগৃহীত এসব মদ বিক্রি করায় কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। কক্সবাজারের একজন প্রভাবশালী নেতা অলিখিতভাবে তাদের সহযোগিতা দিয়ে আসছেন বলে প্রচার রয়েছে।

এর আগেও ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর হোটেল শৈবাল থেকে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৯৭৪ লিটার মদ উদ্ধার করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এ অভিযান পরিচালনা করেন। ওই ঘটনায় বারের সহকারী ম্যানেজার আবদুল আলীমকে আসামি করে সদর মডেল থানায় মামলা হয়। লিজের মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজি বানিয়ে পর্যটন গলফ বার ঘিরে গড়ে ওঠা মাদককারবারি চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা না গেলে প্রতি বছর শত কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে সরকার, এমনটাই অভিমত সচেতন মহলের।