যে কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে আসামিরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতি ও অদক্ষতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কয়েকটি মামলার পর্যবেক্ষণে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, তদন্তে গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণে আসামিরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আইনজীবীরা বলছেন, তদন্তে গাফিলতি পেলে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পাঠানোর ক্ষমতা আদালতের রয়েছে।

 

গত বছর নভেম্বরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় দেওয়ার সময় তদন্ত কর্মকর্তার ‘চরম গাফিলতি’র কথা উল্লেখ করেন বিচারক মো. সালেহ উদ্দিন। তিনি এ মামলায় পরিমলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

 

সর্বশেষ গত ২৯ নভেম্বর ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির একটি মামলার রায় দেওয়ার সময় বিচারক এম আতোয়ার রহমান তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ওষুধ প্রশাসনের অনভিজ্ঞতা, অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণে আসামিদের সাজা দেওয়া যায়নি। এ মামলায় আদালত অভিযুক্ত রিড ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিকসহ পাঁচ কর্মকর্তার সবাইকে খালাস দেন। গত বছরের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের একটি আদালতে তরল কোকেন আটকের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে মামলাটির পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় পুলিশের চার্জশিটের ব্যাপারে অনাস্থা জানিয়ে অনেকেই নারাজি দিয়ে পুনঃতদন্তের জন্য বিভিন্ন সময় আদালতের কাছে আবেদন জানিয়ে থাকেন।

 

 

তদন্তে গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণে বিচারপ্রার্থী ও ভুক্তভোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আদালতও এ বিষয়ে বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (প্রশিক্ষণ) ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আদালতের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই। আদালত যেটা ভালো মনে করেছেন,বলেছেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতায় অনেক বড় বড় মামলা ও ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজাও হয়েছে। এরপরও তদন্তসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়নে পুলিশ কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।’

 

বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যা এবং পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলাসহ অনেক বড় বড় মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। এখনও বিভিন্ন মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন তিনি। তদন্তে গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণে অনেক মামলার আসামিরা পার পেয়ে যাচ্ছে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ মাত্রেই ভুল হয়ে থাকে। একেকজনের মেধা ও প্রজ্ঞা একেক রকম।

 

 

তাছাড়া যিনি তদন্ত করেন,তিনি তদন্তটা একা করেন না। তার ওপরে আরও অফিসার থাকেন, এমনকি পাবলিক প্রসিকিউটরও আছেন। তদন্তের বিষয়টি তারাও তদারকি করে থাকেন। সেই তদন্ত রিপোর্ট আদালতে পাঠানোর পর যখন বিচারে আসে,তখন আসামিপক্ষ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এ সময় বিচারিক আদালত ও আসামিপক্ষ যদি মনে করেন,এ মামলার তদন্ত সঠিকভাবে হয়নি বা সঠিকভাবে তদন্ত হলে আরও ভালো কিছু বেরিয়ে আসতো বা প্রকৃত আসামি বেরিয়ে আসতো, সেক্ষেত্রে পুনঃতদন্তের বিষয়টি আইনেই আছে। ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিচারকদের বিশাল ক্ষমতা দেওয়া আছে। তাই বিচার চলা অবস্থায় যেকোনও সময় যেকোনও মামলা অধিকতর তদন্তের জন্য আদালত প্রসিকিউশনকে আদেশ দিতে পারেন।’

 

একই বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আরেক সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আইনজীবীদের কাছ থেকে শোনা গেছে এবং পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে জব্দ তালিকার মধ্যে ত্রুটি ছিল। যেভাবে জব্দ করতে হয় সেভাবে করা হয়নি। তদন্তে অদক্ষতা ও গাফিলতি ছিল। এজন্য কোনও মামলার আসামি খালাস পেতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে মামলাটি শেষ না করে আবার পুনঃতদন্তের জন্য পাঠানোর ব্যাপারে আইনগত কোনও বাধা নেই।

 

দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল আরও বলেন, ‘প্যারাসিটামলের যে মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছে, সেই মামলার মধ্যে প্যারাসিটামল কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ যে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেই কোম্পানির কোনও প্যারাসিটামল খেয়ে কেউ মারা যায়নি। তবে ভেজাল প্যারাসিটামল মামলায় যে পদ্ধতিতে জব্দ করার প্রয়োজন ছিল সেভাবে জব্দ না করার কারণেই আদালত আসামিদের খালাস দিয়েছে। তাছাড়া আমাদের তো প্যারাসিটামল পরীক্ষা করার কোনও যন্ত্রপাতি নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বলা হয়েছিল যে প্যারাসিটামলটা আপনারা পরীক্ষা করে দেন। তারা পরীক্ষা করে কোনও রিপোর্ট দেয়নি। যেসব প্যারাসিটামল পরীক্ষা হয়েছে সেই পরীক্ষার রিপোর্ট কতটুকু সঠিক ছিল সেটাও সন্দেহজনক।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন