যুক্তরাষ্ট্রের পথে আফগান দোভাষীদের প্রথম দল

যুদ্ধকবলিত আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা ও কূটনীতিকদের সার্বিক দেখভালের পাশাপাশি সহযোগিতা করা আফগান দোভাষীদের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছেন। এসব দোভাষী ও মার্কিন সেনাদের সহযোগীদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায়।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, দোভাষী ও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের সহযোগী ৭৫০ জন পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। তারা যে কোনো সময় যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবেন।

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আগস্টের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানায়। এ ঘোষণার পর থেকেই সেখানে যারা যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর সদস্যদের সহযোগী ছিলেন, তারা তালেবানের রোষানলে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ পরিচালনায় তার সহযোগীদের প্রথম দলকে সরিয়ে নিল।

বৃহস্পতিবার কুয়েতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আফগানরা পৌঁছাবেন ‘খুব শিগগিরই’। আমরা সেসব মানুষকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে দায়বদ্ধ, যারা ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে কঠিন সময়ে আমাদের সহযোগিতা করেছেন, আমরা স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সক্রিয় রয়েছি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম এবিসি নিউজ জানায়, আফগানিস্তানের দোভাষীদের প্রথম দলটি স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে বা শুক্রবার সকালে যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছাবে।

এদিকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, আফগান দলটি স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার পৌঁছাবে এবং অভিবাসনসংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য তাদের ফোর্ট লি সেনাঘাঁটিতে নেওয়া হবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সরকার জানিয়েছিল, আফগানিস্তানের ৭৫০ জন নাগরিক  যুক্তরাষ্ট্রে আসার অনুমতি পেয়েছেন। তারা পরিবারের এক হাজার ৭৫০ জনের মতো সদস্যসহ যে কোনো সময় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে আফগানিস্তান ছাড়বেন।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি নিরাপত্তার খাতিরে প্রথম ফ্লাইটে আফগানিস্তান থেকে কতজন যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন, সে বিষয়ে জানাতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, আমরা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে আনার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ হলো— তারা সাহসী ব্যক্তি। তারা বহু বছর ধরে আমাদের সহযোগিতা করেছেন তার স্বীকৃতি ও মূল্য দেওয়ার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করতে চাই।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আফগানিস্তানে আগ্রাসন শুরু করে দেশটি। সন্ত্রাসীদের দমনের কথা বলে হামলা চালানো হলেও প্রায় ২০ বছরের মাথায় সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে একপ্রকার। এই মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় দোভাষীরা।

২০০২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সঙ্গে হাজার হাজার আফগান দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন। বিশ্বের সর্বোচ্চ দারিদ্র্যের হার (এডিবির তথ্য অনুযায়ী ৪৭.৩ শতাংশ) এ দেশটিতে। যেখানে এ চাকরি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও লোভনীয় ছিল। ধারণা করা হয়, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে প্রতি ৩৬ ঘণ্টায় একজন আফগানকে হত্যা করা হয়।

এই দোভাষীরা রুটিন অফিস ছাড়াও বিশেষ অভিযান এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিম্মি আলোচনায়ও অংশ নিতেন। তারা বলতে গেলে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের চোখ ও কান ছিলেন।

 

সুত্রঃ যুগান্তর