সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
সড়কপথে যাত্রী টানতে আন্তর্জাতিক মানের বাস যুক্ত করার প্রতিযোগিতা চলছে দেশি বাস কম্পানিগুলোর মধ্যে। প্রতিযোগিতা করে সুইডেনের স্ক্যানিয়া, কোরিয়ার হুন্দাই, সুইডেনের ভলভো, জার্মানির ম্যান কম্পানির ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড (ইউরো-৩) মানের বাস যুক্ত করেছে বিলাসবহুল বাস কম্পানিগুলো। এই প্রতিযোগিতার সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে জার্মানির ম্যান কম্পানির দ্বিতল বাস।
‘ইউরো-৩’ বা ইউরোপিয়ান এমিশন স্ট্যান্ডার্ডস মানের বাস হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তিনির্ভর, আরামদায়ক, জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বাস। ইউরো-৩ বাসের ইঞ্জিন থাকে গাড়ির পেছনে, ব্রেকিং সিস্টেম ভালো। বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণ কমানো এবং জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে আনতে ২০০০ সালে এই প্রযুক্তির গাড়ি ব্যবহার শুরু হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ‘ইউরো-৩’ মানের বাস চলাচল করছে অনেক আগে থেকেই। আমাদের দেশে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর হলো। ২০১৪ সাল থেকে ইউরোপে আরো জ্বালানীসাশ্রয়ী সর্বশেষ প্রযুক্তির ইউরো-৬ মানের গাড়ি ব্যবহার শুরু হয়েছে।
বাস কম্পানিগুলো বলছে, চট্টগ্রাম-ঢাকা চার লেন মহাসড়ক চালুর পরই বেসরকারি বাস কম্পানিগুলোর মধ্যে মূল প্রতিযোগিতা শুরু হয়। একই সঙ্গে দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই অবস্থায় যাত্রী টানতে বা কম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা আরো বেড়ে চলছে। প্রতিযোগিতার ফলে যাত্রীরা আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছে।
বাস মালিকরা বলছেন, দেশি কম্পানির মধ্যে দেশের শীর্ষে থাকা গ্রিন লাইন স্ক্যানিয়া, ভলভো ও ম্যান ব্র্যান্ডের এবং সোহাগ পরিবহন স্ক্যানিয়া ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস যুক্ত করে যাত্রী পরিবহন করছে। এ ছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজেও ভলভো ব্র্যান্ডের বাস রয়েছে। আর দেশ ট্রাভেলস, টিআর ট্রাভেলস, সিল্ক লাইন, শ্যামলী পরিবহন, রিলাক্স পরিবহন, সেন্ট মার্টিনস পরিবহনসহ ২১টি কম্পানি হুন্দাই কম্পানির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস নিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে। বাগদাদ এক্সপ্রেস ম্যান কম্পানির স্লিপিং চেয়ার কোচ চালাচ্ছে আর সৌদিয়া পরিবহন মার্সিডিস বেঞ্জ ব্র্যান্ডের বাস দিয়ে যাত্রী আকর্ষণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মানের বাসের মধ্যে প্রথমেই তাক লাগানো সাফল্য দেখায় ভলভো ও স্ক্যানিয়া কম্পানির বাস সংযোজন। এরপর দাপটের সঙ্গে বাজার দখল করেছে হুন্দাই কম্পানির বাস, এখনো সেটি অব্যাহত আছে।
জানতে চাইলে কোরিয়ান হুন্দাই বাস কম্পানির দেশি এজেন্ট এইচএনএস অটোমোবাইলসের কর্ণধার শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল বাসের বাজারে আমাদের মার্কেট শেয়ার এখন ৭০ শতাংশ। ২১টি বিলাসবহুল পরিবহন কম্পানি আমাদের বাস সার্ভিস দিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে। সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে সেটিকে ধরে রাখতে চাই আমরা। একই সঙ্গে আমাদের লক্ষ্য, এই বাজার শেয়ার ৮০ শতাংশে উন্নীত করা।’
তিনি বলছেন, বাসটিতে ‘রপস’ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে, যেটি কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও গাড়ির বডি বেঁকে যাবে না ফলে যাত্রী বা চালকের গায়ে আঘাত লাগবে না। আর গাড়ি আরামদায়ক করতে ছয়টি এয়ার সাসপেনশন যুক্ত আছে, যেটি ভাইব্রেশন ও শব্দ কমিয়ে আরাম নিশ্চিত করবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল বাস সার্ভিসে সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে ম্যান কম্পানির দ্বিতল বা ডাবল ডেকার বাস। গ্রিন লাইন পরিবহন ২০১৭ সালের আগস্টে দেশে প্রথমবার ১০টি ডাবল ডেকার বাস সংযোজন করে যাত্রী পরিবহন শুরু করে। বর্তমানে দেশে দ্বিতল বাস আছে কেবল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কম্পানির, কিন্তু সেগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়। দ্বিতল বাস আসার পর যাত্রীদের আগ্রহ বেড়েছে সেদিকে। এই কম্পানি নতুন করে ম্যান ব্র্যান্ডের আরো ১০টি বাস এনেছে, কিন্তু সেগুলো দ্বিতল বাস নয়। সেগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড়ের অপেক্ষায় রয়েছে। গ্রিন লাইনের বহরে বাসের সংখ্যা বর্তমানে ৬০টি। দেশে আধুনিক ও বিলাসবহুল বাস সার্ভিসের পথিকৃৎ এই গ্রিন লাইন বেশিসংখ্যক যাত্রী পরিবহন করছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে কলকাতা পর্যন্ত সার্ভিস সম্প্রসারণ করেছে।
এ বিষয়ে গ্রিন লাইন পরিবহন চট্টগ্রামের ম্যানেজার বিপ্লব আইচ বাবু বলেন, ‘দেশে প্রথমবার ডাবল ডেকার বাস আসায় যাত্রীদের মধ্যে সাড়া ব্যাপক। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে চাই। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে আমাদের নতুন ম্যান কম্পানির বাসও চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। সেগুলো শিগগিরই যাত্রী পরিবহনে যুক্ত হবে। এতে বাজারে আমাদের অবস্থান আরো বাড়বে।’
বাস কম্পানিগুলো বলছে, বাজারে সুইডেনের ভলভো ও স্ক্যানিয়া বাসগুলোর বেশির ভাগই এসেছে মালয়েশিয়া থেকে। কিছু কিছু বাস অবশ্য এসেছে ভারত থেকে। একইভাবে জার্মানির ম্যান কম্পানির বাসও এসেছে মালয়েশিয়া থেকে। মালয়েশিয়ায় এই তিন কম্পানির বাস উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। সেগুলো মূল উৎপাদনকারী দেশ ইউরোপ থেকে না এনে মালয়েশিয়া কিংবা ভারত থেকে কেন আনা হচ্ছে, তার জবাব পাওয়া যায়নি। মূলত তুলনামূলক দাম কম ও দেশে আনা সহজ হওয়ায় পরিবহন কম্পানিগুলো তৃতীয় দেশ থেকেই আনছে।
বাস কম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতার কারণে যাত্রীরাই লাভবান হচ্ছে, আরামদায়ক ভ্রমণের সুফল পাচ্ছে। আর দেড় কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল আন্তর্জাতিক মানের বাস যুক্ত করতে ঋণ সুবিধা দিচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক। কালের কণ্ঠ