ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্যও করোনা নিয়ন্ত্রণ জরুরি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

করোনাভাইরাস মহামারির ক্রান্তিকালের মধ্যেই চলছে ম্যালেরিয়া সংক্রমণও। এখনও দেশের ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়া আছে দাপটের সঙ্গেই। চলতি ম্যালেরিয়া মৌশুমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার আক্রান্ত ও ৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। যদিও তা কভিডের তুলনায় কম। এক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে করোনাভাইরাস মহামারি ব্যবস্থাপনাকে আরো কার্যকর করতে হবে। দুই রোগের বিরুদ্ধেই সমন্বিত লড়াই করতে হবে। এ জন্য ম্যালেরিয়ার অ্যান্টিজেন টেস্টের পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যেই করোনাভাইরাসের অ্যান্টিজেন টেস্টও চালু করতে হবে।

আজ শনিবার কালের কণ্ঠ ও ব্র্যাক আয়োজিত ম্যালেরিয়ায় কভিডের প্রভাব ও করণীয় বিষয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এমন মতামত তুলে ধরেন।

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া লিমিটেডের কনফারেন্স রুমে এ গোলটেবিল অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমরা করোনাভাইরাসের মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এর মধ্যেই ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধেও লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলে যে কাজ করছে তাকে ব্র্যাকসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও যুক্ত আছে। মিডিয়াও এই কার্যক্রমে সহায়তা করছে। কালের কণ্ঠ সব সময়ই জনস্বার্থ সুরক্ষায় নানা ধরনের সচেতনতামূলক কাজ করছে। যা সরকারের জন্য ইতিবাচক ও সহায়ক হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম বলেন, করোনা মোকাবেলায় পরীক্ষা আরো বাড়াতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি পরীক্ষা বাড়াতে মানুষকে আরো বেশি সচেতন করতে ও যেসব সীমাবদ্ধতা আছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে দূর করতে। এক্ষেত্রে দুই মাস আগে অ্যান্টিজেন টেস্টেরে অনুমতি পেলেও এখন পর্যন্ত আমরা তা শুরু করতে পারিনি। কিট সংগ্রহে নানা প্রক্রিয়ার জন্য দেরি হচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহ নাগাদ আশা করছি দেশে করোনার অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করা যাবে।

তিনি বলেন, করোনার কারণে দেশের ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় কাজে ব্যাঘাত ঘটে। আবার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় বাইরে থেকে ম্যালেরিয়া দেশে ঢুকছে যাতায়াতকারী বিভিন্ন মানুষের মাধ্যমে। সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও আমাদের সহায়তা করছে।

ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্য একটা কর্মকৌশল ইতোমধ্যেই নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে যখন এই কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়েছিল তখন কভিড-১৯ ছিল না। এখন এই অতিমারীর কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মকৌশলে আসলে কতটা প্রভাব পরবে সেটাই প্রশ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তিনটা রোগের ওপরে মডেলিং করেছে। এগুলো হলো ম্যালেরিয়া, টিবি এবং এইডস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই তিনটি রোগের ওপরে কভিড-১৯ এর প্রভাব পড়বেই। ফলে ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মকাণ্ড ২০২০ সালে যতটুকু হওয়ার কথা ছিল সেটা থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ব।

স্বাস্থ্য অদিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ম্যালেরিয়া ও কভিডের অ্যান্টিজেন টেস্ট একই সঙ্গে শুরু করা উচিত। ম্যালেরিয়া নিমূলে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাজেটেরও সমস্যা রয়েছে। ম্যালেরিয়া এলাকায় এলাকায় দ্রুত শনাক্ত কাজে নানান বাধা রয়েছে। এবার এখন পর্যন্ত যে ৭ জন মারা গেছে তাদের জন্য সময়মত টেস্ট করা, শনাক্ত করা যেতো তবে হয়তো এই মানুষগুলোকে বাচানো যেতেও পারতো।

ব্র্যাকের পরিচালক (সংক্রামক রোগ কর্মসূচি) ড. আকরামুল ইসলাম বলেন, ম্যালেরিয়া ও কভিড চিকিত্সা ব্যবস্থাপনায় প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে মাঠ পর্যায়ে কাজের ক্ষেত্রে। আমাদেরকে ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রমকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রান্তি পর্যায়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। গ্রাম পর্যায়ে ম্যালেরিয়া নির্ণয় কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে।

গোলটেবিল আলোচনায় আরো বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহম্মেদ, একই শাখার বর্তমান উপপরিচালক ডা. জহিরুল করীম, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. রাশিদুল হক, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মেডিক্যাল অফিসার ডা. মিয়া সেপাল, ব্র্যাকের ম্যালেরিয়া কর্মসূচির প্রধান ডা. শায়েলা ইসলাম।

এ ছাড়া গোলটেবিলের মূল প্রবন্ধ উপস্থানকালে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির উপ ব্যবস্থাপক ডা. আফসানা আলমগীর বলেন, ম্যালেরিয়া নির্মুল কার্যক্রমে প্রথম পর্যায়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ২০২১ সালের মধ্যেই ম্যালেরিয়া নির্মুল হবে বলে সরকার আশা করছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫১ জেলায় যে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ নেই তাও প্রমাণ করতে চায় সরকার। তৃতীয় পর্যায়ে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ম্যালেরিয়া নির্মূল অর্জন করবে ২০২৫ সালের মধ্যে। ধাপে ধাপে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে নির্মূল অর্জন করবো ২০৩০ সালের মধ্যে যার মাধ্যমে সারা দেশই ম্যালেরিয়া মুক্ত হবে।

 

সূত্র: কালেরকন্ঠ