মঙ্গলবার , ২৩ আগস্ট ২০১৬ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

মৌসুমীর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল সন্দেহভাজন জঙ্গিদের

Paris
আগস্ট ২৩, ২০১৬ ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:  র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া সন্দেহভাজন নারী জঙ্গিরা নিয়মিত ইশরাত জাহান ওরফে মৌসুমী ওরফে মৌয়ের মিরপুরের জনতা হাউজিংয়ের বাসায় দেখা করতো। ‘আত্মীয়’ পরিচয়ে সবাইকে বাসায় নিয়ে যেত মৌসুমী। কয়েকদিন আগে ওই ভবনের ফ্ল্যাট মালিকদের সমিতি বিষয়টি আঁচ করতে পারে। এরপর নেকাবে মুখ ঢেকে বাসায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। র‌্যাব কর্মকর্তা এবং ওই ভবনের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ১৪ ও ১৫ আগস্ট গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে র‌্যাব সন্দেহভাজন চার নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। তারা হলো – আকলিমা রহমান ওরফে মনি (২৩), ইসতিসনা আক্তার ঐশি, ইশরাত জাহান ওরফে মৌসুমী ওরফে মৌ (২২), খাদিজা পারভীন ওরফে মেঘলা (২৩)। এদের মধ্যে ঐশি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছে। বাকিরা মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই চারজনসহ আরও ১০ জনকে আসামি করে ১৬ আগস্ট র‌্যাব-৪-এর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আলাউদ্দিন মিয়া একটি মামলা করেন। মামলার বাকি ১০ আসামি হলো – সাদিয়া ওরফে সানজিদা ওরফে ঝিনুক, মাইমুনা ওরফে মাহমুদা ওরফে লায়লা, তাসনূর ওরফে তাহিরা, সায়ন ওরফে শাহিদা, সালেহা ওরফে পুতুল, দিনাত জাহান ওরফে নওমি ওরফে বানী, তানজিলা ওরফে মুন্নী, আলিয়া ওরফে তিন্নি ওরফে তিতলী, মনিরা জাহান ওরফে মিলি, ছাবিহা ওরফে মিতু। গ্রেফতারকৃত চারজন র‌্যাবের রিমান্ডে রয়েছে।

এ সম্পর্কে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক লুৎফুল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ওই চার নারীর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’

সোমবার সরেজমিন মিরপুরের জনতা হাউজিংয়ের ওই বাসভবনে গিয়ে মৌসুমীর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

বাসার নিরাপত্তারক্ষী আব্দুল বারেক জানান, ছয় তলার পশ্চিমদিকের একটি ফ্ল্যাটে বাবা-মা ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে থাকে মৌসুমী। মাস ছয়েক আগে এই ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠে তারা। মৌসুমির বাবা হাবিবুর রহমান একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা।

আব্দুল বারেক আরও জানান, বাসায় ওঠার পর থেকেই তিনি মৌসুমীকে মুখ ঢাকা নেকাব পড়ে চলাফেরা করতে দেখেছেন। মাঝে মধ্যেই তার কাছে একইভাবে নেকাব পড়া মেয়েরা আসতো। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর ফ্ল্যাট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নেকাব পড়ে অতিথি আসার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদেও সন্দেহভাজন নারী জঙ্গিদের অনেকেই মৌসুমীদের জনতা হাউজিংয়ের ওই ফ্ল্যাটে যাতায়াতের কথা জানিয়েছে। তিনি আরও জানান, ওই বাসাতে সন্দেহভাজন নারী জঙ্গিরা গোপন শলা-পরামর্শ করতো বলেও তারা ধারণা করছেন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মৌসুমী ওরফে মৌ মিরপুরের ইসলামীয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করে। এরপর ২০১২ সালে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডের বিসিআইসি কলেজ হতে জিপিএ ৪.৬০ পেয়ে এইচএসসি পাশ করে। এরপর মেডিকেল ও ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ফার্মগেটের ইউসিসি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। ২০১৩ সালে সে মানারাত ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসি বিভাগে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হয়। বর্তমানে সে অনার্স শেষ বর্ষ সপ্তম সেমিস্টারে পড়ছিলো। গত সাত মাস ধরে সে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, জনতা হাউজিংয়েরই একটি বাড়ির পঞ্চমতলায় এক পরিবারের সঙ্গে সাবলেট হিসেবে থাকে খাদিজা পারভীন ওরফে মেঘলা। সে ২০১৩ সালে জিপিএ ৪.৭০ পেয়ে এইচএসসি পাশ করে। ওই বছরই রোকনুজ্জামান নামে এক যুবকের সঙ্গে তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সেও বর্তমানে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার ওই বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ভবনের নিচতলার এক বাসিন্দা জানান, বছর দেড়েক ধরে ওই বাসায় থাকতো মেঘলা। সব সময় মুখ ঢাকা নেকাব পড়ে চলাফেরা করতো। কিন্তু সে যে ভেতরে ভেতরে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত, তা তারা ঘূর্ণাক্ষরেও অনুমান করতে পারেননি।

আরেক সন্দেহভাজন নারী জঙ্গি ইসতিসনা আক্তার ঐশি তার পরিবারের সঙ্গে মগবাজারের আউটার সার্কুলার সড়কের একটি অ্যাপার্টমেন্টে বাস করতো। সোমবার সেখানে গিয়েও পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ঐশির বাবা বিশ্বাস আক্তার হোসেন ও মা নাসিমা সুলতানা দুজনই পেশায় চিকিৎসক। ঐশি ২০১০ সালে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। এরপর ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এমবিবিএস সম্পন্ন করে। জুন মাস থেকে সে ঢাকা মেডিকেলে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেয়। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ঐশি সবার বড়। তার এক চাচা পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেও জানা গেছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, ‘মেডিকেলে পড়া অবস্থায় জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে ঐশি। সে নারী জঙ্গি দলটির নেত্রী পর্যায়ের। আকলিমার পাশাপাশি ঐশিও দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতো।’

ঐশিদের বাসার নিরাপত্তাকর্মী মীর রজব আলী জানান, ঐশি সবসময় মুখ ঢাকা নেকাব পড়ে বাইরে বেরোলেও জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে তারাও অনুমান করতে পারেননি। র‌্যাব অভিযান চালানোর পরই বিষয়টি তারা জানতে পারেন।

ওই অ্যাপার্টমেন্টের এক বাসিন্দা বলেন, ‘ঐশিদের পরিবার দেখে মনে হয় না যে, এই পরিবারের কেউ জঙ্গি হতে পারে।’ কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সে জঙ্গি লাইনে যুক্ত হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন

সর্বশেষ - জাতীয়