মুত্তাকিন আলম সোহেল, মোহনপুর:

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার আথরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ কাইয়ুম, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোবারক হোসেন এবং বর্তমান সভাপতি মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে জাল সনদ, ভূয়া অফিস আদেশ তৈরি ও সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, এম এ কাইয়ুম, মোবারক হোসেন ও বর্তমান সভাপতি মামুনুর রশিদের যোগসাজসে সহকারী শিক্ষক লাইলী আক্তার বিপিএড (শরীর চর্চা) ২০১১ সালের নভেম্বরে যোগদান করেন, তার ইনডেক্স নং-১০৭২০৪০, সহকারী শিক্ষক চন্দনা রাণী (কাব্যতীর্থ) যোগদান ২০১২ সালে। তার ইনডেক্স নং-০৬৮৯৭২। ২০০৮ সালে ওই দুই শিক্ষিকা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয় কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসি) থেকে ভুয়া পাশ দেখিয়ে আথরাই উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ নেন।

কিন্তু পাশের সনদ অনলাইন (এনটিআরসি) রেকর্ড শাখায় তাদের কোন তথ্যে নেই। অথচ মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ নিয়ে জাল নিবন্ধনে অদ্যবধি বেতন-বিল উত্তোলন করে সরকারি অর্থ লোপাট করছেন।

এ বিষয়ে এলাকাবাসী একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও সে বিষয়ে এখনও কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তবে কাব্যতীর্থ শিক্ষক চন্দনা রাণী জাল নিবন্ধন দিয়ে চাকুরি নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।

নিবন্ধন জাল হওয়ার কারণে ২০১৪ সালে (এনটিআরসি ) হতে নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করেন এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য সরকারি দলীয় নেতাদের দ্বারা জোরালো তদবির চালাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

ইতোমধ্যে শিক্ষা ভবনের সহকারী পরিচালক আঃ সবুর ওই শিক্ষকদের সনদ যাচাই করে সকল তথ্য ঢাকায় নিয়ে যান। জাল সনদের সত্যতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া পাশাপাশি তাদের বেতন-ভাতার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। তবে মন্ত্রণালয় ও মাউশিতে সে সুপারিশ আটকে রয়েছে।

এদিকে রাজশাহীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বিদ্যালয় পরিদর্শক শাখার জাল স্মারক নং-১/এম/৩/১৩৮২(৫)। গত ২০০২ সালের অনুমতি পত্র না থাকলেও কৌশলে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে দীর্ঘ ১২ বছর পর প্রধান শিক্ষক এম এ কাইয়ুম ও ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি প্রভাষক মামুুনুর রশিদের যোগসাজসে ‘শাখা শিক্ষক হিসাবে শাখাওয়াত হোসেন যোগদান ২০১৩ সালে, মু. মিজানুর রহমান ২০১৪ সালে বিদ্যালয় পরির্দশক শাখার জাল চিঠি দেখিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন এবং শাখা শিক্ষক শাখাওয়াত হোসেন ১১০০৭১৩ নং ইনডেক্স এর মাধ্যমে সরকারি অংশের বেতন বিল উত্তোলন করেন।

শিক্ষা বোর্ড এর সনদ পত্রে মকবুল হোসেন মন্ডলের নাম থাকলেও ওই শিক্ষক নামের কিছু অংশ গোপন করে শুধুমাত্র মকবুল হোসেন নাম ব্যবহার করে গত ২০০০ সালে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) পদে যোগদান করে।

যোগদানের পর সনদে নিজের নামের সাথে মিল না থাকলেও শিক্ষা ভবনে মিথ্যা তথ্য প্রেরণ করে সহকারী শিক্ষক কম্পিউটার পদের বিপরীতে সরকারি অংশে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। তিনি ২০১৫ সালে যোগদান করেন।

ভুয়া সনদে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে অনলাইনে বেতনের জন্য আবেদন করেন। সহকারী শিক্ষক কম্পিউটার পদের ইনডেক্স নম্বর-পড়সঢ়র-৫৪৮৩৮৭ এমপিওভুক্ত বেতন সীটে তার নাম ছিল মোঃ মকবুল হোসেন।

কিন্তু তিনি যে সনদ দিয়ে চাকুরীতে যোগদান করেন শিক্ষাবোর্ডের সনদে নাম রয়েছে মোঃ মকবুল হোসেন মন্ডল। বেতনের আবেদনে ফরমে উপ-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রতি স্বাক্ষর নিতে গেলে ওই শিক্ষকের সনদের বিষয়টি কর্মকর্তার দৃষ্টি গোচর হয়। তখন এমপিওভুক্ত করণ কাগজ পত্র স্থগিত করে দেন।

ওই স্কুলের এমএলএস (পিয়ন) হানিফ মোল্লা চাকুরীরত অবস্থায় মারা গেলে প্রধান শিক্ষক ওই পদে জালিয়াতি করতে বাদ রাখেননি সাবেক পিয়ন ইনডেক্স নং-৭৮১১০৫ ব্যবহার করে তৈয়বুর রহমানকে নিয়োগ দিয়ে বেতন উত্তোলন করছেন।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মামুনুর রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিয়োগ সংন্ত্রান্ত কাগজ পত্র যাচাই দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের। তার সময়ে ২ জন শাখা শিক্ষক নিয়োগের সত্যতা স্বীকার করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আদেশ পেলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বেতন ভাতা বন্ধ করা হবে বলে জানান তিনি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহীরর বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবাশীষ রঞ্জন রায় এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,ওই স্কুলের “৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণী “খ” শাখার অনুমোদন নাই। ভুয়া ও জালিয়াতি ভাবে অনুমোদন দেখিয়ে নিয়োগ ও বেতন করা হয়েছে।

এছাড়াও শিক্ষা বোর্ডের সাথে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার কারণে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নথি শিক্ষা মন্ত্রাণলায়য়ে প্রেরণ করা হয়েছে এবং প্রধান শিক্ষককে কাছে জালিয়াতির বিষয়ে ব্যাখা চেয়ে কারণ দর্শানোর নোর্র্টিশ প্রেরণ করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চল, রাজশাহী উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী সাথে একাধিকবার যোগাযোগ চেষ্ঠা করলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

মাউশি সহকারী পরিচালক আব্দুস সবুর বলেন, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুত জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

স/বি