মোহনপুরে চরম অব্যবস্থাপনা ও খাবার সংকট নিয়ে শেষ হলো প্লাটিনাম জুবিলি 

নিজস্ব প্রতিবেদক  :
নানা সমালোচনা, অব্যবস্থাপনা,খাবার প্যাকেট সংকট, নিম্নমানের খাবার ও বিভিন্ন অভিযোগ ও আয়োজকদের অনুষ্ঠান বয়কটের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে রাজশাহীর মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্লাটিনাম জুবিলী-২৩ (৭৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী)
বিদ্যালয়ের বর্তমান কোমলমতি শিক্ষার্থীরা খাবার না পেয়ে কমিটির সদস্যদের শ্রেণী কক্ষে অবরুদ্ধ, খাবারের জন্য মাইকিং ও অসন্তোষ প্রকাশ করে বন্ধ করেছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
১১ মার্চ শনিবার মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল সাড়ে ৮ টায় স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হলেও বেলা ১০ টায় র‌্যালি শেষে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে প্লাটিনাম জুবিলি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এসময় অত্র স্কুলের শিক্ষার্থীদের দাড়িয়ে রাখায় মঞ্চে যাওয়ার সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি দাড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এসময় শিক্ষার্থীদের সকালের নাস্তা ও পানি না দেওয়ায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিন এর উপর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন আপনার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে।
মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রায় ৫৮০ জন শিক্ষার্থী সকাল সাড়ে আটটায় প্লাটিনাম জুবিলীতে অংশগ্রহণ করে। দুপুরে খাবার না পেয়ে জুবিলি কর্তৃপক্ষের নিকট শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা আবেদন করেও সাড়া দেয়নি খাবার বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা।
এসময় মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাইকে শিক্ষকের ঘোষনায় খাবার না পেয়ে শত শত  শিক্ষার্থী খাবার বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত কয়েকজনকে শ্রেণী কক্ষে অবরুদ্ধ করে দরজা এবং জানালায় লাথি মারতে শুরু করে। পরিস্থিতি কঠিন থেকে কঠিনতর হলে খবর পেয়ে প্লাটিনাম জুবিলী-২৩ আহবায়ক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুস সাত্তার সরকার ঘটনাস্থলে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহীন ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের অব্যবস্থাপনা না আয়োজকদের অব্যবস্থাপনা একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে যে যার মত সম্মান বাচাঁনোর প্রাণপন চেষ্টা চালিয়েছেন।
আয়োজকরা বলছেন মাইকে শিক্ষকের উস্কানিমূলক ঘোষনার কারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় অবরুদ্ধ হয়েছে খাবার বিতরণের দ্বায়িত্ব নিয়োজিত কয়েকজন।
মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুল থেকে বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষক মিলে মোট ৮৩৩জন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। এরমধ্যে ৫৮০ জন বর্তমান শিক্ষার্থী। বর্তমান শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সকাল সাড়ে ৮টায় স্কুল আসার পর দুপুরে খাবার বিতরণের সময় প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে খাবার না দেওয়ায় স্কুলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বার বার খাবার চেয়ে অনুরোধ জানালেও খাবার দায়িত্বে নিয়োজিত আপ্যায়ন উপ কমিটির সদস্য ও মোহনপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আশরাফুল আলম কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং তাদের ভয়-ভীতি দেখান বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে খাবার না পেলে তোমরা ফিরে আসবে না মাইকে শিক্ষকের এমন ঘোষণায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি শান্ত করতে স্কুলে উপস্থিত হন প্লাটিনাম জুবিলী সদস্য সচিব মোহনপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজ, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান,আশরাফুল আলমসহ জুবিলী নেতৃবৃন্দরা। ছাত্রদের খাবারের জন্য স্কুলের সহকারি শিক্ষক বাংলা সেলিম সেলিম আহমেদ ও সহকারি শিক্ষক সামাজিক বিজ্ঞান মোহাম্মদ জুয়েল রানা’র হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত  করেন প্লাটিনাম জুবিলি নেতৃবৃন্দ। প্লাটিনাম জুবিলী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানা যায়, উক্ত প্লাটিনাম জুবিলী-২৩ উপলক্ষে এক হাজার ৯’শ ৫০ জন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন।
এদিকে প্লাটিনাম জুবিলি বয়কট করা নেতৃবৃন্দ জানান, যারা রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন তাদের শতকরা ৪০ ভাগ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তড়িঘড়ি অনুষ্ঠান আয়োজন আর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে প্লাটিনাম জুবিলি-২৩ এ যোগ দিতে পারেননি তারা । আর যারা যোগ দিয়েছেন তাঁরা টি শার্ট ও খাবারের প্যাকেট এ স্থানীয় সংসদের নাম ব্যবহার করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০০০ সালের এসএসি ব্যাচের এক সাবেক নারী শিক্ষার্থী জানান, অনেক আশা নিয়ে স্বামী ও ছেলেসহ প্রাণের প্রতিষ্ঠানে জুবিলিতে অংশ গ্রহন করবো বলে পরিবারের ৪ সদস্যের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছিলাম। জুবিলির দিন খুব ভোরে মাইক্রোবাস ভাড়া করে পাবনা হতে সময় মত এসেও ৪টি ব্যাগের জায়গায় শুধুমাত্র ১টি ব্যাগ ও খাবার প্যাকেট পেয়েছি। যা খাওয়ার উপযুক্ত ছিলনা। পরে স্বামী সন্তান নিয়ে হোটেল এ খেয়েছি আয়োজক কর্তৃপক্ষের কাছে এটা মোটেও আশা করিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, প্লাটিনাম জুবিলী অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে রুপান্তরিত হওয়ায় তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। আরো জানা যায় পুরো অনুষ্ঠানটি দলীয় লোকজন দিয়ে পরিচালিত হওয়ার কারণে খাবার, ব্যাগ ও পানি সংকট হয়েছে অনুষ্ঠানটি তার জৌলুস হারিয়ে হয়েছে মলিন।
এবিষয়ে প্লাটিনাম জুবিলী-২৩ যুগ্ম সদস্য সচিব ও জেলা মহিলালীগ নেত্রী অধ্যাপক রোখসানা মেহেবুব চপলা বলেন, প্রথম থেকে আমরা আয়োজক কমিটির কয়েকজন সদস্য বলেছি প্লাটিনাম জুবিলি হবে অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান যেখানে সবার প্রানবন্ত উপস্থিতি নিশ্চিত হবে। তৈরী হবে বৃহৎ একটি এসোসিয়েশন যা ভবিষ্যতে অত্র স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে আলো ছড়াবে। কিন্তু হঠাৎ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন প্লাটিনাম জুবিলি প্রোগ্রামটি আহবায়ক এর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিজের মত করে দলীয় লোকজন নিয়ে দলীয়ভাবে তড়িঘড়ি অনুষ্ঠানের ঘোষনা দেন। আমরা চাকুরীজীবি, প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কথা চিন্তা করে অনুষ্ঠানের তারিখ পেছানোর জন্য বার বার এমপি মহোদয়কে অনুরোধ জানালে তিনি খারাপ ভাষা দিয়ে ১১মার্চ শনিবার প্লাটিনাম জুবিলি অনুষ্ঠিত হবে বলে আমাদের চ্যালেন্জ ছুঁড়ে দিলে আমরা আয়োজক কর্তৃপক্ষের কয়েকজন আত্মসম্মান নিয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করি। এ অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ও তড়িঘড়ি হওয়ায় এখানে সফল রেজিস্ট্রেশনকারী শতকরা ৪০ শতাংশ সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারেনি।।
অনুষ্ঠানটি কাভারেজ দেওয়ার জন্য স্থানীয় সাংবাদিকদের চিঠি দেওয়া হলেও আপ্যায়ন উপ কমিটির সদস্য অধ্যাপক আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। যা স্থানীয় সাংবাদিকদের ক্ষুব্ধ করেছে।
এবিষয়ে প্লাটিনাম জুবিলি-২৩ আহবায়ক মো: আ: সাত্তার সরকার বলেন, কেমলমতি শিক্ষার্থীরা খাবার পায়নি এটা খুবই দুঃখজনক। তাদের সাথে বসে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। সদস্য সচিব মফিজ উদ্দিন কবিরাজ তাদের খাওয়ার প্যাকেট সংকট হওয়ায় নগদ টাকা দিয়ে বিষয়টি সমাধান করেন।
এবিষয়ে প্লাটিনাম জুবিলি-২৩ অনুষ্ঠানের সভাপতি মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিন  বলেন, শিক্ষার্থীরা এখনো খাবার পায়নি বিষয়টি নিয়ে এমপি মহোদয়ের সাথে কয়েকবার কথা হয়েছে। লোকজন আসছে আশা করি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্লাটিনাম জুবিলি-২৩ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন  প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ  জাতীয় সংসদের চীফ হুইফ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এমপি।
বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আয়েন উদ্দিন এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য আবিদা আনজুম মিতা, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: হাবিবুর রহমান, মোহনপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. আব্দুস সালাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমতুজ্-জোহ্ রা, প্লাটিনাম জুবিলী-২৩ উদযাপন কমিটি আহবায়ক আলহাজ্ব মোঃ আব্দুস সাত্তার সরকার। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন মোহনপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ মফিজ উদ্দিন কবিরাজ ও অধ্যাপক ওবায়দুল্লাহ সরকার।অনুষ্ঠানে স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।