মেয়রের স্বাক্ষর জাল করে কারা তুলল ১৮ লাখ টাকা!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদারের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংকের ভবিষ্যত তহবিল হিসাব (প্রভিডেন্ট ফান্ড) থেকে ১৮ লাখ ২১ হাজার টাকা উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌরসভায় কর্মরত ২২ জন কর্মচারী চেকের পাতায় মেয়রের স্বাক্ষর জাল করে এ টাকা উঠিয়েছেন। এ ঘটনায় পৌর মেয়রের নির্দেশে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটি ঘটনার সত্যতা উল্লেখ করে গত ২৩ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন মেয়রের কাছে দাখিল করে। ২৪ নভেম্বর কর্মচারীদের মেয়র শোকজ করে বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টার মধ্যে জবাব জানতে চান। অভিযুক্ত কর্মচারীরা লিখিতভাবে তাদের জবাব দিলে, তা সন্তোষজনক না হওয়ায় পৌরসভায় জরুরি সভা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যত তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) নামে রূপালী ব্যাংক ঝালকাঠি শাখায় একটি হিসাব আছে। এতে কর্মচারীদের বেতনের ১০ ভাগ এবং পৌরসভার ১০ ভাগসহ মোট ২০ ভাগ টাকা এ হিসাবে জমা হয়। বিধি অনুযায়ী এ টাকা কর্মচারীরা চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার সময় পেয়ে থাকেন। অথবা কারো জরুরি প্রয়োজনে মেয়রের কাছে আবেদন করে পৌরসভা থেকে ওই হিসাবের টাকা ঋণ নিতে পারেন।

ব্যাংকের হিসাব থেকে এ টাকা উঠাতে চেকে মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর যৌথ স্বাক্ষর প্রয়োজন। কিন্তু মেয়রের স্বাক্ষর জাল করে ট্রাক হেলপার মিলন হাওলাদার ও মর্তুজা আলী মোট ৫১টি চেকে তিন লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আবদুস সালাম সিকদার ১০টি চেকে এক লাখ ৬৪ হাজার টাকা এবং টিকাদানকারী আমিনুল ইসলাম, সীমা রানী দাস, সুলতানা পারভীন ও রাশিদা খানম ১৩টি চেকে মোট দুই লাখ ৫১ হাজার ১০০ টাকা, কসাইখানা পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিন পাঁচটি চেকে এক লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা, রোলার চালক ফিরোজ খান, ইয়াসিন আরাফাত সাতটি চেকে মোট ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা, নিম্নমান সহকারী ফোরকান আমিন চারটি চেকে ৩৬ হাজার টাকা, অফিস সহায়ক মোরশেদা খানম, চান মিয়া ও জাহাঙ্গির আলম সাতটি চেকে এক লাখ ৩৩ হাজার টাকা, স্বাস্থ্য সহকারী রিয়াজুল ইসলাম দুটি চেকে ৩৬ হাজার,  ট্রাকচালক শাকিব খান দুটি চেকে ১৬ হাজার টাকা, ফটোকপি অপারেটর পৌরসভার সাবেক মেয়র আফজাল হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী সামসুন্নাহার মারিয়া একটি চেকে ২৮ হাজার টাকা, কার্জ সহকারী নাজমুল হাসান একটি চেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ লাইন ম্যান সোহেল রানা একটি চেকে ১৮ হাজার টাকা, পাম্প চালক ইকবাল হোসেন ও সোহেল খান ১৪টি চেকে তিন লাখ তিন হাজার টাকা এবং বিল ক্লার্ক সাহাব উদ্দিন তিনটি চেকে এক লাখ ৪১ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন।

ঝালকাঠি পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার জানান, সম্প্রতি অফিস সহায়ক জাহাঙ্গীর আলম মেয়রের জাল স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংকে টাকা উঠাতে গেলে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এর পরেই মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ব্যাংক ব্যপস্থাপকের কাছে হিসাব বিবরণী চেয়ে পাঠান। বিবরণীতে মোট ১০৪টি চেকে মেয়রের স্বাক্ষর জাল করে ১৮ লাখ ২১ হাজার টাকা ওঠানোর ঘটনা নিশ্চিত হন। এ ঘটনায় তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ভবিষ্যত তহবিল থেকে মেয়রের স্বাক্ষর জালের ঘটনা ঘটে। ভবিষ্যত ও আনুতোষিক তহবিল হিসাবের ব্যাংক বিবরণীতে এর প্রমাণ মিলেছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদে কর্মচারীরা জানায়, ট্রাক হেলপার মিলন হাওলাদার ও মর্তুজ আলী তাদের চেকে স্বাক্ষর করিয়ে এনে দেয়। এ বিষয়ে হেলপার মিলন ও মর্তুজ আলী জানান, আমরা আমাদের চেকে মেয়রের স্বাক্ষর এনেছি। বাকিরা নিজেদের বাঁচাতে আমাদের নাম বলছে।

স্যানিটারী ইন্সপেক্টর আবদুস সালাম সিকদার বলেন, এসব চেকে মেয়র স্বাক্ষর করলেও পৌরসভার নথীতে তা উল্লেখ না থাকায় তিনি আমাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করছেন।

পৌরসভার সচিব শাহিন সুলতানা বলেন, বৃহস্পতিবার জরুরি সভায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর, সাময়িক বরখাস্ত এবং কেন তাদের স্থায়ী বরখাস্ত করা হবে না, সাত দিনের মধ্যে জবাব চেয়ে সর্বসম্মতিক্রমে নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

সূত্র: কালেরকন্ঠ