‘মেহেদীর দাগ না শুকাতেই বিধবা তারা’

নিজস্ব প্রতিবেদক:


কথায় আছে, পেটের জন্য নাকি মানুষ সাপের গুহাতেও হাত দেয়। দরিয়া নামের পেটটিকে ভরাতে মানুষ কতই না কি করে। কেউ করে চাকরি, কেউ করে চুরি। আবর কেউ কৃষি, কেউ বা সর্বস্ব  বিলিয়ে দিচ্ছেন পেটের জ্বালায়। এই পেটের জ্বালা কতগুলো হৃদয় বিতারক ঘটনা জন্ম দিয়ে থাকে।



বৃহস্পতিবার এমন হৃদয় বিতারক ঘটনা জন্ম হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। ভোরে বারিকবাজার-সোনাপুর ভাঙ্গাসাকো এলাকায় ১৬ জন ধান কাটা শ্রমিক নিয়ে আসা নসিমনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে নয়জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় কেউ বাবা হারা, কেউ স্বামী হারা হয়েছেন। তারা সবাই পেটের খাবারের জোগান দিতে গিয়েছিলেন ধান কাটার কাজে। তাদের অনেকেই মেহদীর দাগ এখনও শুকায়নি। মেহদী রাঙ্গা হাতেই লাশ হতে হয়েছে অনেকেই।

এই দুর্ঘটনায় নিহত হন- ডিগ্রী পরীক্ষার্থী মিজানুর রহমান মিলু। নিহত ৯ জনের মধ্যে মিলুসহ তিন কিশোরের বিয়েও হয়েছিল কয়েক মাস আগে। তারা বাড়িতে নববধুদের রেখে ধান কাটার কাজে গিয়েছিলেন শিবগঞ্জে। এর মধ্যে তিন অত্মসত্বা। এই অত্মসত্বা নববধুগুলো হলো বিধবা। আর নিহত আহাদের ৪ মাসের নববধু আসমা, মিজানুর রহমান মিলুর নববধু আমেনা বেগম ও মিঠুনের নববধু হয়ে গেল বিধবা।

স্থানীয়রা জানায়,  মাত্র কয়েকদিন কাজ করলে সারাবছর ভাতের চিন্তা থাকে না। সেখানে যে ধান পাওয়া যায়, তাতেই অনেকের বছর চলে যায়। এমন কথা ভেবে ধান কাটার কাজে গিয়েছে তারা। এই মানুষগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিয়ের বয়স দুই-তিন মাস। তারা নববধুদের বাড়িতে রেখে মাত্র ২১দিন জন্য ধান কাটতে যান পাশের জেলাগুলোতে। এই বছর নতুন নয়, অনেক বছর ধরে পাশের জেলায় গিয়ে ধান কাটার রিতি চলে আসছে। কারো কারো বাবা-চাচারা এই ধান কটার কাজ করেছেন। এখন ছেলেরা বছর বছর ধান কাটতে যায়।

এই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে আসা এমারুল ইসলাম ও আলিম হোসন বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে ধানকাটা শেষে মজুরির দেড়’শ মণ ধান নিয়ে নসিমনযোগে চালকসহ আমরা ১৬ জন বাড়ি ফিরছিলাম। আমি ও আরেকজন সামনের সিটে বসে ছিলাম। পথে সোনাপুর গ্রামের ভাঙা রাস্তায় পৌঁছালে বামে সড়কের পাশে গর্তের পানিতে পড়ে উল্টে যায় নসিমনটি।

জানা গেছে, ঘটনা পরে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনার দিন বিকেলে নয়জনের একই সাথে জানাযা হয়। জানাযা শেষে গণকবরের পাশে দাফন করা হয় তাদের। তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন- সিল্কসিটিনিউজের চাঁপাই প্রতিনিধি কামাল হোসেন।

স/আ