মেডিক্যালে ভর্তি জালিয়াতি: শতকোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে সিআইডি

স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করা চক্রের ১৪ জনের ৯৯ কোটি ৮১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯৩ টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চক্রের হোতা জসিম উদ্দিন ভুইয়া মুন্নু, তাঁর খালাতো ভাই স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রেসকর্মী আব্দুস সালাম খানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে মানি লন্ডারিং মামলা করা হয়েছে।

গতকাল রবিবার রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় এ মামলাটি করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, মেডিক্যালে ভর্তি জালিয়াতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ লেনদেন ও রূপান্তর হয়েছে। মামলায় জসিম, সালাম সিন্ডিকেটে জড়িত দুজন চিকিৎসক, কোচিং সেন্টারের শিক্ষকসহ মেডিক্যালের শিক্ষার্থীদেরও আসামি করা হয়েছে।

ধানমণ্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া বলেন, ‘মানি লন্ডারিং আইনে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করা হয়েছে।’

সিআইডি সূত্র জানায়, এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে হোতা জসিম উদ্দিন ভুইয়া মুন্নু ২০১১, ২০১৫ ও ২০২০ সালে মোট তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর খালাতো ভাই প্রেসের মেশিনম্যান আব্দুস সালাম খানের সহায়তায় ২০০৬ সাল থেকেই ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির কাজ করছিলেন তিনি। এই অবৈধ কারবারে তাঁদের সহযোগী জসিমের বড় বোন শাহজাদী আক্তার মীরা, জসিমের স্ত্রী শারমিন আরা জেসমিন শিল্পী, চক্রের সদস্য ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান, রাশেদ খান মেনন, মোহাম্মদ আব্দুছ সালাম, জেড এম এস সালেহীন শোভন, জসিমের ভাতিজা এম এইচ পারভেজ খান, জসিমের বোনজামাই জাকির হাসান, আসলাম হোসেন শেখ, সাজ্জাত হোসেন, ভগ্নিপতি আলমগীর হোসেন, সোহেলী জামানসহ ৩০-৪০ জন এই অবৈধ কারবার করে লেনদেন করেন। জড়িতদের একজন ঢাকার গ্রিন রোডের ফেইম কোচিং সেন্টারের মালিক ডা. ময়েজ উদ্দিন প্রধান একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক। সিন্ডিকেটের দুই হোতা গ্রেপ্তারের খবরে অন্যতম সদস্য ডা. ময়েজ গাঢাকা দিয়েছেন। দিনাজপুরের এনজিওর মালিক শেখ আলমাস এবং দিনাজপুরের বিরামপুরের বিএম কলেজের শিক্ষক সাজ্জাতও এই চক্রের সদস্য। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা ডা. জেড এম এ সালেহীন শোভন মুগদা জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার এবং কয়েকটি কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত। নাম আসার পরই গাঢাকা দিয়েছেন তিনি।

সিআইডি সূত্র জানায়, ইনস্যুরেন্সকর্মী জসিম তাঁর বড় বোন শাহজাদী মীরার মাধ্যমে খালাতো ভাই সালামের সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসের চুক্তি করেন। ২০০৬ সালে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও হাইকোর্টে রিটের কারণে ছয় সপ্তাহ ফল প্রকাশ স্থগিত করা হয়। ওই সময় সালামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তবে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা বা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।  ২০০৯ সালে সালামকে ফের প্রেসের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই সময় মেডিক্যাল এডুকেশন শাখার কর্মকর্তা আবজাল এবং প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটির এক সদস্যের ঘনিষ্ঠ ছিলেন সালাম। তাঁরা প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, মেডিক্যাল ছাত্র ও শিক্ষকদের মাধ্যমে ভর্তীচ্ছুদের কাছে টাকার বিনিময়ে তা সরবরাহ করতেন।

মামলায় বলা হয়, জসিম সিন্ডিকেট তৈরি করে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। তাঁর ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়। বাংকে ২১ কোটি ২৭ লাখ পাঁচ হাজার টাকা জমা এবং ২১ কোটি ছয় লাখ ৭৫ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন জসিম।

২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁস তদন্তের সূত্রে মেডিক্যালের প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য পায় সিআইডি। গত বছরের ২০ জুলাই মিরপুর থেকে চক্রের হোতা জসিমসহ পাঁচজন এবং পরবর্তী সময়ে সালামসহ আরো ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ