মৃত নিলু চৌধুরী করেছেন ‘অনলাইন আবেদন’! চাল তোলেন ৬ মাস

নিলু চৌধুরী গত হয়েছেন চার বছর আগে। তবে চলতি অর্থবছরে দুস্থদের জন্য সরকার কতৃক বরাদ্দ দেওয়া ভিজিডি কার্ডের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে নিলুর নামে! বাছাই কমিটি সকল বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে তার নামে একটি ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ দেয়। এরপর (২৭৩ নম্বর) কার্ড দিয়ে গত ছয় মাস চাল উত্তোলনও করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে। মৃত নিলু চৌধুরী উপজেলার ডাক্তার টিলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

এ বাছাই কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুষার আহমেদ, মহিলা ষিয়ক কর্মকর্তা মোসাম্মদ হাছিনা বেগম, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার উপস্থিত ছিলেন।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় উপজেলা মহিলা ষিয়ক কর্মকর্তা মোসাম্মদ হাছিনা বেগম তড়িঘড়ি করে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছেন, শিশু চৌধুরীর স্ত্রী কার্ডধারী নিলু চৌধুরী দুস্থ ও অসহায় কিন্তু আইডি কার্ড না থাকায় তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে কার্ডটি দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে কার্ডটি অন্য কাউকে দেওয়া যেতে পারে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন। অথচ কার্ডধারী নিলু চৌধুরী মারা গিয়েছেন চার বছর আগে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার ডাক্তার টিলা এলাকার নিলু চৌধুরী মারা যান ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর। তার আইডি কার্ড ব্যবহার করে স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী শিল্পী রৌদ্রের নামে একটি ভিজিডি কার্ড হয়েছে। গত ছয় মাস শিল্পী রৌদ্র কার্ডের চাল উত্তোলন করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় গত দুই মাস চাল দিচ্ছে না বলে শিল্পী রৌদ্র জানান। এখন কার্ডটির অর্ধেক তাকে দিবে, আর অর্ধেক নতুন কাউকে দিবে বলে তিনি শুনেছেন।

গুইমারা উপজেলা মহিলা ষিয়ক কর্মকর্তা মোসাম্মদ হাছিনা বেগম দুঃখ প্রকাশ করে জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। অনলাইনে আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তারাই তালিকা চূড়ান্ত করে দিয়েছেন। ছয় মাস চাল উত্তোলনের পর মৃত নারীর নামে ভিজিডি চলছে তিনি জেনেছেন। এরপর ওই কার্ডের চাল বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয়রা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মারা যাওয়ার পর অনলাইনে আবেদন করে কার্ড হয়। ছয় মাস চাউল উত্তোলনের পর জানা যায় তিনি শশ্মন চলে গেছেন চার বছর আগে। এটা কেমন বাচাই কার্যক্রম? অথচ গুইমারা উপজেলায় এমন একটি ভিজিডি কার্ড থেকে বঞ্চিত অনেক দুস্থ ও অসহায় পরিবার।

গুইমারা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুইজাউ মারমা জানান, অনলাইনে যখন ভিজিডির আবেদন হচ্ছে তখন তিনি দায়িত্বে ছিলেন না। তবে অনলাইনে আবেদনের পরে উপজেলায় শুনানি হয়। শুনানির পরে বরাদ্দ হয়। শুনানীতে সংশ্লিষ্ট পরিষদের সদস্যরা আবেদনকারীকে শনাক্ত করেন। এটি কিভাবে ঘটেছে তিনি জানেন না। তবে অভিযোগের পরে তিনি জেনেছেন, নিলু চৌধুরী (স্বামী শিশু চৌধুরী) নামে কোন নারী বেঁচে নেই। তিনি চার বছর আগে মারা গেছেন।

মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা লিখিতভাবে নিষেধ করার পর বর্তমানে মৃত নিলু চৌধুরীর নামে চাল বিতরণ বন্ধ রেখেছেন। তবে ইউপি সদস্য জর্নাধন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ঘটনায় তদন্ত করে ওই কার্ডের চাল বিতরণ স্থগিত করে রাখা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। মৃত ব্যক্তির নামে ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া চরম অন্যায়। কখন বরাদ্দ দিয়েছে, কখন তদন্ত করেছেন উপজেলা মহিলা ষিয়ক কর্মকর্তা তাকে জানাননি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ