মৃত্যুর হিসাবে ঢাকাকে পেছনে ফেলল চট্টগ্রাম

মহামারি হিসেবে দেখে দেয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে। আক্রান্তের হিসাবেও নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। এতদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসাবে শীর্ষে অবস্থান করছিল ঢাকা বিভাগ। পিছু পিছু হাঁটছিল চট্টগ্রাম। কিন্তু এবার মৃত্যুর হিসাবে ঢাকা বিভাগকে পেছনে ফেলল চট্টগ্রাম বিভাগ।

দেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। গত ১৭ মার্চ আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়। শুরুর দিকে হাতেগোনা দু-চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও সম্প্রতি এ সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে একদিনে ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০ এবং সর্বশেষ করোনা সংক্রমণের ৮৬তম দিনে অর্থাৎ মঙ্গলবার (২ জুন) এ সংখ্যা ৩৭-এ উন্নীত হয়। যদিও গত ৩১ মে সর্বোচ্চ ৪০ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওইদিন বিগত দিনের রেকর্ড ভেঙে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ৫৪৫ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ বুলেটিনে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যত রোগীর মৃত্যুর খবর দেয়া হয় তার মধ্যে রাজধানী ঢাকায়ই সবচেয়ে বেশি রোগী মৃত্যুর খবর আসে। তবে সর্বশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিনে (মঙ্গলবার) বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ৩৭ করোনা রোগীর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ১৫ জনই চট্টগ্রাম বিভাগের। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ১০ জন, সিলেট বিভাগে চারজন, বরিশাল বিভাগে তিনজন, রংপুর বিভাগে দুজন, রাজশাহী বিভাগে দুজন ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন মারা যান বলে বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে রাজধানী ঢাকা তথা ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চসংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নাম।

জীবন-জীবিকার তাগিদে সাধারণ ছুটি শেষে রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ছোট-বড় শপিংমল ও মার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে। চালু হয়েছে গণপরিবহনও। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে অসংখ্য মানুষের যাতায়াতের ফলে করোনার সংক্রমণঝুঁকি বাড়ছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে রাজধানী ঢাকাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে চট্টগ্রাম বিভাগ- এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, রাজধানীসহ সারাদেশে আজ (২ জুন) পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে সর্বমোট ৭০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃতদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চসংখ্যক ২৩৩ জন (৩২ দশমিক ৮৬ শতাংশ), ঢাকা বিভাগে ২০১ জন (২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ) এবং চট্টগ্রাম বিভাগে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৮৪ জনের (২৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ) মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে আটজন, রংপুর বিভাগে ১৯ জন, খুলনা বিভাগে ১০ জন, বরিশাল বিভাগে ১৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ২৩ জন মারা গেছেন।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশকে সবুজ, হলুদ ও লাল জোনে ভাগ করে সংক্রমণ এবং মৃত্যু প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি অধিদফতরের রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ল্যাবে প্রথম করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হয়। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সারাদেশে মোট ৫২টি ল্যাবে (ঢাকায় ২৮টি ও ঢাকার বাইরে ২৪টি) করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে দৈনিক ১১ হাজার থেকে ১২ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।

সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৮ জনসহ বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ছয় হাজার ২৪০ জন।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে করোনারোগীদের চিকিৎসার জন্য মোট ১৩ হাজার ৯৮৪টি বেড প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি, ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৩৯৬টি, চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ১৩৮টি, ময়মনসিংহ বিভাগে এক হাজার ৮০টি, বরিশাল বিভাগে ৪১৩টি, সিলেট বিভাগে ৩৪৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৯২৪টি, খুলনা বিভাগে ৭১৩টি এবং রংপুর বিভাগে ৭২২টি বেড রয়েছে।

এছাড়া ৩৯৯টি আইসিইউ বেড এবং ১০৬টি ডায়ালাইসিস শয্যা রয়েছে।

গত ২১ জানুয়ারি থেকে আজ (২ জুন) পর্যন্ত তিন লাখ ৩৩ হাজার ৩৭৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৭০৪টি নমুনা পরীক্ষা করে দুই হাজার ৯১১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। এনিয়ে মোট শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা ৫২ হাজার ৪৪৫ জন। সূত্র: জাগোনিউজ