মুজিব কোট কোনও অন্যায়কারী দুর্নীতিবাজের পরিধান নয়

ফেসবুকে লোপা তালুকদার নামের এক নারীর মুজিব কোট পরিধেয় ছবি নিয়ে বেশ হইচই চলছে। তার ফেসবুক প্রোফাইলে কর্ম আর গুনের বিশাল ফিরিস্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সকল স্তরের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী নেতাদের সবার সাথে ছবি। যে কেউ দেখলেই ভাববেন লোপা তালুকদার  কতটা ক্ষমতাধর। হয়তো তার কর্মগুণ ক্ষমতা সবই আছে। সে আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়। তবে এমন করিৎকর্মা নারী আওয়ামী লীগের একটি অংগ সংগঠনের বিশেষ পদ ধারণ করে শিশু অপহরণ কেন করছে তা সত্যি চিন্তনীয়।

বর্তমান সময়ে কেবল লোপা তালুকদার নয়, দেশে সংঘটিত দুর্নীতি বা অন্য অপরাধসমুহের হোতাদের খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, অপরাধীরা কোনও না কোনভাবে আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। সরকার হিসাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে দীর্ঘ সময় ধরে। আর এতে করে দলে পরগাছার পরিমান বৃদ্ধি পাওয়া অমূলক কিছু নয়। এ পরগাছাকে ‘কাউয়া হাইব্রিড’ নানা উপাধি দেয়া হয়। যে নামই দেয়া হোক না কেন এরা ক্রমশ মহীরুহ হয়ে উঠছে। কারণ এদের ছেঁটে ফেলার মত কোনও উদ্যোগ নেয়া হয় না।

পাপিয়া, শাহেদ, সাবরিনার ঘটনার রেশ না কাটতেই মুজিব কোট পরিহিত লোপা তালুকদার আবার প্রশ্নবিদ্ধ করছে দলের কর্মকাণ্ডকে। বেসরকারি  টেলিভিশন চ্যানেলের পরিচালক, সাংবাদিক, কবি সাহিত্যিক সব পদবীর ধারণ করার এ  নারীর বিরুদ্ধে হত্যাসহ আরও মামলা আছে বলে গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। আর জিনিয়াকে অপহরন কেন করা হয়েছে তা পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসবে বলে বিশ্বাস।

এ মুহূর্তে যে প্রশ্নটি বারবার মানুষের সামনে আসছে তা হলো দলের ভেতরে অবস্থান করে যেসব দূর্নীতিবাজ, অসৎ ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে এর প্রতিকার কি? হঠাৎ করে মুজিব কোট পরিধান করে আর্বিভূত এসব মানুষ কি জানে বঙ্গবন্ধুর মুজিব কোট শুধু ফ্যাশন নয়। এ কোট বাংলার ইতিহাসে কতটা জায়গা জুড়ে আছে। বলা হয়ে থাকে মুজিব কোটের ৬ টি বোতাম বাংলার মানুষের ছয় দফার প্রতীক। যে ছয় দফাকে সামনে রেখে বাঙালি স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল।

প্রকৃত দেশ প্রেম থাকলে মুজিব কোট পরিধান করে অন্যায় করা যায় না। আর এ কোটের দেশ প্রেমের সাহস, প্রেরনাকে যারা উপেক্ষা করতে পারে তারা এ সমাজের কীট। এরা দেশের ক্ষতি করতে পিছপা হয় না তা অতীতে ও প্রমাণিত হয়েছে।

এ দুর্ভাগা জাতি মুজিব কোটের মর্যাদা দিতে পারেনি সেই ১৯৭৫ সাল থেকে। খন্দকার মোশতাকের মুজিব কোট পরিহিত ছবিকে জাতি ভুলে যায় বলে শাহেদ, লোপারা আশ্রয় পায় আওয়ামী লীগে। মিথ্যা বুলি দিয়ে  মিথ্যা লেবাসধারীরা আওয়ামী সরকারের অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে।

দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন। অথচ সে লড়াইয়ের পথকে রুদ্ধ করছে নিজের দলের ভেতর অনুপ্রবেশকারীরা। এ নব্য আওয়ামী প্রেমীদের মুখে এক, মনে আরেক রয়েছে বলে বাড়ছে দুর্নীতি, অন্যায় ও অপরাধ। এরা ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে মুজিব কোট পরে মুজিব প্রেমী হয়। নির্মম সত্য হলো মুজিব কোট পরিধান করলেই মুজিব প্রেমী হতে পারে না। নিজের ভেতরে মুজিব আর তার ইতিহাসকে ধারণ করতে হবে। এ কারণেই  মুজিব কোটকে অন্যায় আর দুর্নীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে আগামীতে দেশের মানুষ আওয়ামী সরকারের ভালোটুকু ভুলে গিয়ে মন্দটুকুই মনে রাখবে।

সময়ের সাথে আজ অনেক কিছু বদলে গেছে, তা বাস্তবতাতে সুস্পষ্ট। তাই দলের ভেতর আওয়ামী লীগের আর্দশ আর বিশ্বাসকে যারা শেষ করে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না সত্যিকারের দলের ত্যাগী নেতা কর্মীরা। কারণ তাদের যে মুজিব কোটের লেবাসে উচ্চ পর্যায়ের নেতা কিংবা হর্তাকর্তাদের সাথে  ছবি বা যোগাযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে যারা আলাদা করে চিন্তা করতে পারে না কিংবা যারা নেত্রীর সাথে ছবি তোলার চেয়ে রাজপথের আন্দোলনকে মূল কাজ মনে করেছে আজ তারা মূল্যহীন। তাই লোপা তালুকদার, শাহেদদের পরনের মুজিব কোট লজ্জিত করে বঙ্গবন্ধুর আর্দশধারণকারী দেশপ্রেমীকে।
লেখক: কলামিস্ট

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন