মুখের বিপজ্জনক সংক্রমণ

মুখের অভ্যন্তরে ব্যথাযুক্ত বা ব্যথাযুক্ত অনেক ধরনের সাদা সংক্রমণ হতে পারে। লিউকোপ্লাকিয়া একটি ক্যান্সারপূর্ব রোগ, যা অনবরত প্রদাহজনিত কারণে জিহ্বার উপর বা গালের অভ্যন্তরে দেখা যায়।

লিউকোপ্লাকিয়া রোগে মুখের অভ্যন্তরে বা গালের মিউকাস মেমব্রেনে সাদা দাগের সৃষ্টি হয়। লিউকোপ্লাকিয়া রোগের নিশ্চিত কারণ এখনও জানা যায়নি।

কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, লিউকোপ্লাকিয়া ধূমপান বা দীর্ঘ মেয়াদে মুখের জ্বালাপোড়া বা প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে। হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া এপস্টেন বার ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। তবে হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়াতে ক্যান্সারের কোনো ঝুঁকি থাকে না।

লিউকোপ্লাকিয়ায় সংক্রমণ স্থান ধীরে ধীরে অমসৃণ হতে থাকে এবং স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। মসলাযুক্ত বা ঝাল খাবার খেলে মুখের জ্বালাপোড়া হতে পারে।

মুখে লিউকোপ্লাকিয়া হলে তা ক্ষতিকর কিনা অর্থাৎ ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়েছে কিনা, তা জানার জন্য বায়োপসি করা প্রয়োজন। মুখে সাদা কোনো সংক্রমণ দেখা দিলে অহেতুক কোনো ড্রপ বা মলম ব্যবহার না করে আগে জানতে হবে, রোগটি কী এবং কতটুকু বিপজ্জনক।

ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস একটি ক্রনিক অটো-ইমমিউনজনিত সমস্যা, যা মুখের আবরণ বা লাইনিংকে আক্রান্ত করে থাকে। ফলে মুখের অভ্যন্তরে আক্রান্ত স্থানে আলসার বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে থাকে। লাইকেন প্ল্যানাস মুখে কোনো লক্ষণ ছাড়াই থাকতে পারে।

ইরোসিভ ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস-এর চিকিৎসা প্রয়োজন হয়, যার কারণে ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া হতে পারে। লাইকেন প্ল্যানাস রোগীদের মাঝে মাঝে রক্ত পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

কারণ এ রোগের কারণে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে, রোগীর শরীরে হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস রয়েছে কিনা।

মুখের সাদা সংক্রমণ কখনো কখনো মারাত্মক রূপ ধারণ করে ঘাতক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হতে পারে। তাই মুখের সাদা সংক্রমণে না জেনে কোনো মলম প্রয়োগ বা ওষুধ সেবন করা মোটেই ঠিক নয়।

অনেক সময় রোগের চিকিৎসায় স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, যার কারণে রোগ ভালো না হয়ে আগের চেয়েও খারাপ অবস্থায় রূপান্তরিত হতে পারে।

তবে এ কথাও ঠিক, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্টেরয়েড প্রয়োগ প্রয়োজন হতে পারে। তবে সেটির মাত্রা এবং এর স্থায়িত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। মুখের সাদা সংক্রমণকে কখনোই সাদা মনে গ্রহণ না করে সচেতনভাবে চিকিৎসা করতে হবে।

লেখক: মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
dr.faruqu@gmail.com
 

সুত্রঃ যুগান্তর