মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যদের স্বীকৃতির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন


নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া অনেক পুলিশ সদস্য এখনও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। এসব পুলিশ সদস্যদের সার্ভিস বইয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার তথ্য লেখা থাকলেও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) স্বীকৃতি পাননি তারা। ফলে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত।
তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। তাদের স্বীকৃতির দাবিতে বুধবার দুপুরে কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ও স্বজনেরা রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল লতিফ।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আবদুল লতিফ কনস্টেবল ছিলেন। তাঁর সার্ভিস বইয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখা থাকলেও স্বীকৃতি পাননি তিনি। আবদুল লতিফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে পুলিশ বাহিনীর বীর বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরেই সর্বপ্রথম ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। চাকরি ও জীবন বাজি রেখে তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পরবর্তীতে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এই স্বাধীনতার সুফল বাঙালি জাতি পেলেও আমরা পুলিশ বাহিনী স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাইনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে নির্দেশনা দেন, একাত্তরের পর বাহিনীতে ফেরা মুক্তিযোদ্ধারাও ভাতা পাবেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ভাতা প্রযোজ্য হবে। আমাদের সেই স্বীকৃতির প্রস্তাব জামুকার নথিতে লাল ফিতায় বাধা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সব পুলিশ এখন অবসরে। আমরা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে যোগাযোগ করলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির গেজেট প্রকাশের বিষয়টি জামুকা ঝুলিয়ে রেখেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৪ হাজার পুলিশ সদস্য অংশগ্রহণ করি। এর মধ্যে দেড় হাজার জন যুদ্ধে শহীদ হন। পুলিশ হেডকোয়ার্টাস থেকে পুলিশ সদস্য মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করে। যাচাই-বাছাইয়ের পর তালিকা জামুকায় পাঠানো হলেও ২০২১ সাল থেকে পড়ে আছে। পুলিশ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিজ নিজ চাকরি বইতে লিপিবদ্ধ থাকার পরেও দীর্ঘ ৫২ বছর পরেও স্বীকৃতি মেলেনি।’
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য নুরুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মতিয়ার রহমানের ছেলে আবদুল খালেক বকুল, আসগর আলীর ছেলে ডা. মোজাম্মেল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের নামের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য মুুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নুরুল ইসলাম জানান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলা পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন। ২৮ মার্চ দুপুরে হানাদার বাহিনী পুলিশ লাইন্স আক্রমণ করলে অন্য সবার সাথে তিনিও প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তীতে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছেন। নুরুল ইসলামের সার্ভিস বুকে লেখা আছে তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নুরুল ইসলাম চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন অনেক আগেই। কিন্তু আজও তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের গেজেটভুক্ত হতে পারেননি। পান না কোন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা। তার মতো আরও অনেক পুলিশ সদস্য স্বীকৃতি পাননি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৯৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা লাল মুক্তিবার্তায় প্রকাশ করে। এখানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্যের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পরবর্তীতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নাম গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে স্বীকৃতি পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, বিজিবি ও আনসারসহ বেসামরিক ব্যক্তি, বীরঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেট হলেও পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের আমলাতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করে ফাইলবন্দি রাখা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জামুকার মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল মোবাইল ফোনে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা দাবি করা পুলিশ সদস্যদের কিছু আবেদন জমা আছে। এর ভিত্তিতে তাদেরকেও একটা চিঠি দেওয়া হয়েছে। সবাই এখনও এই চিঠির উত্তর দেননি। এর ফলে প্রক্রিয়াটা এগোচ্ছে না। আমি এখন বাইরে, অফিসে থাকলে বিস্তারিত বলা যেত।’