মুক্তিপণ না পেয়ে শিশুকে হত্যা, দুই আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড

রংপুরের পীরগাছায় অপহরণের পর দাবিকৃত মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে রিয়া আক্তার (৭) নামে এক শিশুকে হত্যার দায়ে দুই আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার ( ১১ জানুয়ারী) দুপুর ১টার দিকে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান এ রায় দেন। রায়ে দুই জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হলেও চার জন খালাস পেয়েছেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের পরাণ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে রাসেল মিয়া (১৯) ও একই গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে সালাউদ্দিন তালুদ (২০)। এরমধ্যে রায় ঘোষণার সময় রাসেল আদালতে উপস্থিত থাকলেও সালাউদ্দিন পলাতক ছিলেন।

মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিকালে বাড়ির সামনের রাস্তায় প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলছিল পরাণ গ্রামের আব্দুর রহিমের শিশু কন্যা ও স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী রিয়া আক্তার। এসময় সেখান থেকে কৌশলে তাকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে দুর্বৃত্তরা। এরপর রিয়ার বাবার কাছে মুঠোফোনে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

এদিকে মেয়েকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর ছয় জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের ৩-৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন রিয়ার বাবা।

মামলার সূত্র ধরে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি রাসেলকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে একটি মুঠোফোন উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রাসেলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জনৈক আব্দুল হক মিস্ত্রীর টয়লেট থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয় রিয়ার। এ সময় সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তারসহ মুক্তিপণ চাওয়ার জন্য ব্যবহৃত মুঠোফোন ও জুসের বোতল উদ্ধার করা হয়।

অর্থের লোভে রিয়াকে অপহরণ করে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয় বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সালাউদ্দিন। এরপর শ্বাসরোধে হত্যার করে তার লাশ টয়লেটে গুম করা হয়।

মামলার এজাহারে রাসেল মিয়া ও সালাউদ্দিনের নাম ছিল না।  তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২২ জুন ওই দুজনসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইদুর রহমান।

সাত বছরের বেশি সময় ধরে মামলার বিচারকাজ চলাকালে ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায়ে এজাহারনামীয় আসামিদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের জন্য বাদীকে ভৎসনা করেন আদালত।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল -৩ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ