মিথ্যা ছাড়া আওয়ামী লীগের ভাণ্ডারে কিছু নেই : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী অভিযোগ করেছেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কাছ থেকে ফরমায়েশি বক্তব্য আদায়ের চেষ্টা করছে। গুমের সাক্ষ্য ও আলামত ধ্বংসের এ ধরনের বেআইনি পদক্ষেপ অবৈধ সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্পৃক্ততা শুধু প্রতিষ্ঠিতই করছে না, নিত্যনতুন অপরাধেও সম্পৃক্ত করছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে হয়রানির মাধ্যমে পুলিশ দিয়ে মিথ্যা স্টেটমেন্ট তৈরি করে শেষ রক্ষা হবে না।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব অভিযোগ করেন।

বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, বিএনপির কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে যে, গত ১০ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে ২০১৩ সালে গুমের শিকার রাজধানীর সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুব হাসান সুজনের পিতা আব্দুল জলিল খানের বাসাবোর আহম্মদবাগের বাড়িতে সবুজবাগ থানার এসআই রবীন্দ্রনাথ সরকার রবীনের নেতৃত্বে ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশের একটি টিম যায়। সেখানে সুজনের পিতাকে দিয়ে পুলিশের হাতে লেখা একটি বক্তব্যে স্বাক্ষর দিতে চাপ প্রয়োগ করে। যেখানে লেখা ছিল সুজন স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে চলে গিয়ে নিখোঁজ হয়। সুজনের পিতা উক্ত ফরমায়েশি বক্তব্যে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ওই টিম। বিষয়টি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ফোনের মাধ্যমে অবগত হলে তাঁর হস্তক্ষেপে পুলিশ ফিরে যায়।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে বর্তমান পুলিশ এবং র‌্যাব প্রধানসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সাত সদস্যের ভিসা বাতিল এবং র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর সরকার দিশাহারা হয়ে পড়েছে। তাদের দ্বারা সংঘটিত গুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং আলামত ধ্বংসের বেআইনি এবং ন্যায়বিচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অশুভ চক্রান্তের পথে হাঁটা শুরু করেছে।’

বিএনপি ‘গুমের’ শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের পাশে সব সময় আছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘গুম এবং সাক্ষ্য ও আলামত ধ্বংস করার অপচেষ্টার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে ভবিষ্যতে আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারদের যথাযথ মূল্যায়ন ও সহায়তা করা হবে বলেও বিএনপি রাজনৈতিক অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গোটা বিশ্ব ইতিমধ্যে লক্ষ করেছে, এই অবৈধ সরকার ভোট ডাকাতি, নির্বাচন ব্যবস্থা, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সংবিধান, মানবাধিকার, রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসসহ খুন, গুমের মাধ্যমে নিজেদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় নিকৃষ্টতম ফ্যাসিস্টদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশের গুম-খুন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর যুক্তরাজ্য, এইচআরডাব্লিউসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তথ্যমন্ত্রী তা তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন। মিথ্যা বলা ছাড়া আওয়ামী সরকারের ভাণ্ডারে আর কিছু নেই।’

রিজভী আরো বলেন, ‘বিএনপি এই অবৈধ ক্ষমতা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত অবৈধ সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ চায়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার চায়। সব খুন-গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের পথকে সুনিশ্চিত করতে চায়। তবে সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অপরাধ যতই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করুক তাতে কোনো লাভ হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে গত ১৩ বছর ধরে গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যার হিসাব প্রমাণসহ রয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরীন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ