মাদারীপুরে সন্ধ্যার পর বাইরে আড্ডা বন্ধ, দোকানে চলবে না টেলিভিশন

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কাছেই মাদারীপুরে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সন্ধ্যা সাতটার পর শিক্ষার্থীরা অভিভাবক ছাড়া বাইরে বের হতে পারবেনা-এমন কিছু সিদ্ধান্ত ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

মাদারীপুরে প্রকাশ্যে কেউ প্রশাসনের বিরোধিতা না করলেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

তবে জেলা প্রশাসক ডঃ রহিমা খাতুন বিবিসি বাংলাকে বলছেন তরুণদের মাদকমুক্ত রাখতে ও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এসব উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

“জেলার সংসদ সদস্যরা সবাই সমর্থন দিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকরাও খুশী হয়েছেন এসব সিদ্ধান্ত নেয়ায়। তবে আমরা চাপিয়ে দিবোনা। উদ্বুদ্ধ করেই বাস্তবায়ন করবো,” বলছিলেন তিনি।

তিনি বলছেন তাদের মূল সিদ্ধান্তগুলো সন্ধ্যা সাতটার পর কোনো শিক্ষার্থী অভিভাবক ছাড়া বাইরে থাকতে পারবেনা, টি স্টলগুলোতে রাত নয়টার পর টেলিভিশন চালানো যাবেনা। আর পৌরসভায় রাত দশটা ও অন্য এলাকায় রাত নয়টার পর দোকানপাট খোলা রাখা যাবেনা।

কিন্তু এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার যুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন জেলার প্রায় সব জায়গাতেই সন্ধ্যার পর দেখবেন তরুণরা দল বেধে আড্ডা দিচ্ছে এবং কেউ কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা।

“মোবাইলে জুয়া আর মাদক ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপকভাবে। তাই আমরা মনে করি কারও দরকার হলে অভিভাবক নিয়ে বাইরে আসবে। এছাড়া সাতটার পর তাদের থাকার প্রয়োজন নেই”।

জেলা প্রশাসক বলেন চায়ের দোকানে টেলিভিশনের কারণে রাত ১২টা পর্যন্ত লোক সমাগম থাকে ও গল্পগুজব চলতে থাকে।

“এখানে বয়স্ক-ইয়াং সবাইকে দেখা যায়। যা উদ্বেগজনক। এখন প্রায় সবার বাড়িতে টিভি আছে। তারা টিভি দেখলে বাড়িতে পরিবারের সাথেই দেখতে পারবে। করোনা ঝুঁকি এড়াতে আমরা বাইরে টিভি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি”।

কিন্তু কে কয়টা পর্যন্ত বাইরে থাকবে কিংবা কে কোথায় টিভি দেখবে -এসব সিদ্ধান্তের এখতিয়ার জেলা প্রশাসনের আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কিছু নিয়ে জোর করছিনা। তবে সর্বস্তরের মানুষ এতে খুশী হয়েছে। কারণ এখানে এসব সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে”।

“আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসব বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। তাতে সবাই মনে করেছে মানুষের ভালোর জন্যই এটি হওয়া দরকার। তাই সবাই মিলেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমার একার সিদ্ধান্ত না এগুলো। করোনা, মাদক ও কিশোর গ্যাং- সমস্যা বাড়ছে। মানুষ মনে করছে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর হলে সেটা ভালোই হবে,” বলছিলেন ডঃ রহিমা খাতুন।

কিন্তু এমন বিধি নিষেধ কার্যকর করলে সেটি নাগরিক অধিকার খর্ব করে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন করোনা সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরকারি দিক নির্দেশনা আছে এবং সবাই মিলে আইন শৃঙ্খলার দৃষ্টিকোণ থেকেও ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে কিন্তু কোন কিছুই জোর করে বাধ্য করা হবেনা।

মাদারীপুরের সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম খান বলছেন জেলা প্রশাসনের এসব সিদ্ধান্তে জেলা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

যদিও প্রশাসনের বিরাগভাজন হওয়ার আশংকায় প্রকাশ্যে এসব নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করতে রাজী হননি।

মিস্টার খান বলছেন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের সাতটার মধ্যে বাসায় ফিরতে বলা যায়, কিন্তু কলেজ বা স্নাতক পর্যায়ে পড়ুয়াদের অনেকেই টিউশনিসহ নানা কাজে বাইরে থাকতে হয়।

আবার টি স্টলে টেলিভিশনের সাথে দোকানগুলো স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য আয় রোজগারের বিষয় জড়িত আছে কারণ দোকানগুলো জমজমাট থাকে ও তাতে বিক্রিও ভালো হয়।

মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বলছেন প্রশাসন জনস্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিন্তু সেগুলো সত্যিকার অর্থেই জনস্বার্থে হতে হবে।

“চায়ের দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডার কথা বলছে প্রশাসন কিন্তু সন্ধ্যার পরেই বাংলাদেশে বেচাকেনা ভালো হয়। সেখান থেকেই বিরাট জনগোষ্ঠী আয় রোজগার করে। সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে”।

স্থানীয় রাজনীতিকদের কয়েকজন নাগরিক অধিকার খর্বের প্রসঙ্গ তুললেও নাম প্রকাশ করে সেটি বলতে রাজী হননি।

সূত্র: বিবিসি